E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অভিযোগ নেয়নি পুলিশ, আতঙ্কিত পরিবার 

কালিগঞ্জের চম্পাফুলে সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে গভীর রাতে আগুন 

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৮:৪১:৪০
কালিগঞ্জের চম্পাফুলে সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে গভীর রাতে আগুন 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারে সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ অগ্নিসংযোগের ফলে কাঠ ও আসবাবপত্রসহ ৩০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের সাতক্ষীরা জেলা নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ হ্ন্দি বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রণ্ট ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টার ঐক্য পরিষেদের সাতক্ষীরা জেলা নেতৃবৃন্দসহ জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপিগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

অভিযোগ, এজাহার জমা নেননি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল অভিযোগ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মাধবী মণ্ডলকে আশ্বস্ত করেছেন।

চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারের পার্শ্ববর্তী সুনীল মণ্ডলের স্ত্রী শ্রীমতী মাধবী রানী মণ্ডল (৫৩) জানান, চম্পাফুল মৌজার ৮৮ ও ৯১ দাগে যথাক্রমে ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত এক একর অর্পিত সম্পত্তি ও ৪১ শতক জমি কিনে দীর্ঘদিন ধরে তারা শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে রয়েছেন। ৮৮ দাগের দুই বিঘা জমি ১৯৮০ সালে দুইবার দলিল মূলে কিনেছেন দাবি করে প্রতিবেশী কমল মণ্ডল দাবি করে আসছিলেন। ওই দলিল মূলে কমল অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনালে বাদি শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় তঞ্চকীর কারণে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। পরে কমল তার ছেলে ভারতের বনগ্রামের বাসিন্দা তাপস মণ্ডলকে দেশে এনে সামাদ গাজীর পরামর্শে আরো একটি জাল দলিল করে নেন কমল মণ্ডল। এ চাড়া আলমগীর কবীর ও্ জমি নিয়ে আরো কয়েকটি তঞ্চকী দলিল বানিয়ে ওই জমি দাবি করে আসছেন। ফে ২০১৮ সালে তিন বিঘা ৫ কাঠা জমি তার স্বামী সুনীল মণ্ডলের পক্ষে রায় ও ডিক্রী হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ওই জমি জেলা প্রশাসকের কাছে অবমুক্তির জন্য আবেদন করলে (এ সম্পর্কিত ৫৭/২৩ নং মামলা) তা আগামি ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনুল ইসলাম মঈন।

মাধবী মণ্ডল আরো জানান, তঞ্চকী দলিল মূলে একই গ্রামের বেলায়েত গাজীর চেলে আওয়ামী লীগ নেতা তিন ভাইপোকে কুপিয়ে হত্যা ও এক হিন্দু গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার আসামী সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর ২০১২ সালে তাদের ৮৮ দাগের সাড়ে ১৬ শতক জমি জবরদখল করে তাতে রাইস মিল বানান। জবরদখলে বাধা দেওয়ায় তাকেসহ ছেলে শংকর ও পরিবারের সদস্যদের পিটিয়ে জখম করা হয়। ওই জমি ফিরে পাওয়ার জন্য সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৪৮৮/২১ নং মামলা দায়ের করেছেন। উভয়পক্ষের সাক্ষী গ্রহণ শেষে মামলাটি রায় এর অপেক্ষায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে গত ১৮ আগষ্ট সকাল থেকে ২৭ আগষ্ট পর্যন্ত সামাদ গাজী ও আলমগীরের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের নিম্নতপশীল জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে জমিতে আমাদের লাগানো নরিকেল, তাল, সুপারী, বেল, আম ও কলাগাছসহ কমপক্ষে ১০ প্রজাতির শতাধিক গাছ কেটে, ফল ও সবজি মিলিয়ে তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে। বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাট করে। তুলসী বেদী ভাংচুর করে। জমির চারিদিক,বাড়ির উঠানসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে জমি জবরদখলের জন্য তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় সামাদ ও আলমগীরসহ তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় তার ও তার পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি দেয়।

১৯ আগষ্ট আদালতে দখল সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে সামাদ গাজীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. তরুন বন্দোপাধ্যায় তাদের (মাধবী) জীবনের নিরাপত্তা দিতে আসা কাালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ করায়। জমি নিয়ে এডিসি (রাজস্ব) আদালতে থাকা মামলায়(৫৭/২৩) গত ইংরাজী ২৭ আগষ্ট বিবাদী সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরকে ওই জমিতে কোন ধরণের কাজ কর্ম বন্ধ রাখাসহ স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের নোটিশ পাওয়ার পরও গত পহেলা সেপ্টেম্বর সামাদ ও আলমগীর ওই জমিতে আবারো লুটপাট চালায়। গত মঙ্গলবার আনুমানিক দিবাগত রাত দুটো থেকে আড়াইটার মধ্যে অর্থাৎ বুধবার রাত দুটো থেকে আড়াইটার মধ্যে তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে থাকাকালিন কে বা কাহারা তার বসতবাড়ি সংলগ্ন কাঠ ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি সকলকে ডেকে তোলেন। তিনি ও তার স্বামী সুনীল মণ্ডল, ছেলে শংকর মণ্ডল, মেয়ে চম্পা মণ্ডল, পুত্রবধূ সরস্বতী মণ্ডল বাড়ির পুকুর ও টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভাতে থাকেন।

পরিবারের স্বজনদের চিৎকারে কালীবাড়ি বাজারের নৈশপ্রহরী নারায়ন অধিকারী, হাবিবুর রহমান, মিজানুর রহমান ও পরিতোষসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। বুধবার ভোর সোয়া তিনটার দিকে আগুন নেভানো সম্ভব হয়। আগুনে পুড়ে কাঠসহ কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আশঙ্কা করছেন যে, পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে উচ্ছেদের মামলার (দেঃ ৪৮৮/২১) রায় ঘোষণার আগেই সামাদ ও আলমগীর রাতের আঁধারে তার কাঠ ঘরে আগুন লাগিয়ে পরবর্তীতে বসতঘরে শুয়ে থাকা তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বুধবার সকালে এজাহার নিয়ে গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তবে কালিগঞ্জের সাবেক সেনা সদস্য ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারি হাফিজুর রহমান নির্যাতনকারি সামাদ গাজীর পক্ষ নিয়ে গত ২১ আগষ্ট ও বুধবার দুপুরে বাড়িতে এসে পোড়া ঘরের ছবি তোলার সময় তাদের (সুনীল) কোন বৈধ কাগজপত্র নেই এবং পুলিশ আসবে না বলে তাকে হুমকি দিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন সুনীল মণ্ডল।

এ ব্যাপারে আলমগীর কবীর জানান, নিজেরাই ঘরে আগুন লাগিয়ে সুনীল মণ্ডল ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান ও সাবেক সেক্রেটারী নূরুল হুদা জানান, বুধবার সকালে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সুনীল মণ্ডলের কাঠঘরে আগুন লাাগার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আগুন লাগানোর দৃশ্য কেউ দেখেননি। তবে ওই পরিবারকে সম্প্রতি বাঁশের বেড়া দিয়ে যেভাবে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে তা দূঃখজনক। ইউপি সদস্যের মাধ্যমে সুনীল মণ্ডল পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য কয়েক হাত বেড়া কেটে নিতে সামাদ গাজীকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উভয়পক্ষের কাগজপত্রের আলোকে বসাবসির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও জজ কোর্টের সরকারি কৌশলী অ্যাড. অসীম কুমার মণ্ডল (১), জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সিহাব মাসুদ সাচ্চু, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. এবিএম সেলিম জানান, অবরুদ্ধ সুনীল মণ্ডলের পরিবারের ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা দূঃখজনক। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন। সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীর প্রভাবশালী হওয়ায় সুনীল পরিবারের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছেন।

জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্পন কুমার শীল ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত জানান, সামাজ গাজী তিন ভাইপো হত্যা ও এক হিন্দু গৃহবধূ ধর্ষণ মামলার আসামী হয়েও তিনি বহাল তবিয়তে। তাই ১৮ আগষ্ট থেকে ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর সন্ত্রাসী ভাড়া করে সুনীল মণ্ডলের জমি জবরদখল করতে শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতিন গাছ কেটে ও ফল পেড়ে লুটপাট চালালেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। ফলে আগুন দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। তারা নির্যতিত পরিবারের জন্য সব ধরণের সহযোগতিার আশ্বাস দেন।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে অঅগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা রয়েছে। তাই তিনি ঘর জ্বালানোর অভিযোগ না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ঘটনার তদন্ত চালাবেন বলে দাবি করেন তিনি।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল জানান, মাধবী মণ্ডলের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছেন। পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সব ধরণের উদ্যোগ নেবেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test