E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আশাশুনিতে বাগান থেকে লাশ উদ্ধার

সনাক্ত হয়নি লাশ, ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা  

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১৯:২৬:৪৬
সনাক্ত হয়নি লাশ, ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা  

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের ঘোলা ত্রিমোহিনীর কেওড়াবাগান থেকে গত ২৯ জুন অজ্ঞাতনামা পুরুষের (৬৫) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করার ১০ সপ্তাহেও জানা যায়নি পরিচয় (ডিএনএ রিপোর্ট)। তবে এ ঘটনায় পুলিশ হত্যা মামলা দায়ের করলেও ময়নাতদন্ত শেষে আত্মহত্যা বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হত্যা মামলাকে ঘিরে একটি মহল ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ জুন সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খড়িয়ারডাঙা গ্রামের ঋণে জর্জরিত প্রবীর মণ্ডল (৬৫) বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী বাজারে মাছ বিক্রি করতে যেয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। ২৯ জুন আশাশুনির প্রতাপনগরের ঘোলা ত্রিমোহিনীর কেওড়া বাগান থেকে নৌ-পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে। পরদিন লাশের ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ৩০ জুন শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ করে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টার ঘটনা উল্লেখ করে আশাশুনি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

লাশ উদ্ধারের সময় খড়িয়াডাঙার মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল ও ধনঞ্জয় মণ্ডল ওই লাশ তাদের বাবা প্রবীর মণ্ডলের নয় বলে দাবি করলেও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বুড়িগোয়ালিনি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে লাশ সনাক্ত করতে ডিএনএ টেষ্ট করার দাবি করেন। সে অনুযায়ী উপপরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ২ জুলাই লাশের দুটি দাঁত এর মাধ্যমে ডিএনএ টেষ্ট করার জন্য সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিমের কাছে আবেদন করেন। পরবর্তীতে মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলকে ঢাকার মালিবাগে সিআইডির হেড অফিসে পাঠিয়ে ডিএনএ টেষ্ট করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বুধবার পর্যন্ত ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া গেলেও গত ২৮ জুলাই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসক ডাঃ রাশেদুজ্জামানসহ তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির আত্মহত্যার কারণে মারা যান বলে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

এদিকে ঘোলা ত্রিমোহিনীর কেওড়া বাগান থেকে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এক কর্মকর্তাকে দিয়ে অপমৃত্যুর মামলার পরিবর্তে হত্যা মামলা দায়ের করান খড়িয়াডাঙার বিক্রম- নিতাই দালাল চক্র। তারা তাদের প্রতিপক্ষ ইন্দ্রজিত গাইনকে ফাঁসাতে একটি কাল্পনিক চিরকুট মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের হাতে তুলে দিয়ে তা ইন্দ্রজিৎ গাইনের হাতের লেখা বলে দাবি করেন। মওকা পেয়ে ওয়াহিদুজ্জামান সম্প্রতি খড়িয়াডাঙায় এসে সনাক্ত না হওয়া লাশ প্রবীর মণ্ডলের উল্লেখ করে বিক্রম- নিতাইয়ের মিশন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এজন্য তিনি ইন্দ্রজিৎ গাইনকে কয়েকবার ফোন করে আতঙ্কিত করে তোলেন। এমনকি এক সাংবাদিক তার কাছে জানতে চাইলে ইন্দ্রজিৎ গাইনকে বুড়িগোয়ালিনি নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে যেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ওই চিরকুট ইন্দ্রজিৎ গাইনের হাতের লেখা হতে পারে অনুমান করে তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাবে না বলে উল্লেখ করেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে চাননি।

এ ব্যাপারে খড়িয়াডাঙা গ্রামের ধনঞ্জয় মণ্ডলের স্ত্রী অনামিকা মণ্ডল জানান, অজ্ঞাতনামা লাশের গায়ে যে জামা পরা ছিল তা তাদের পরিচিত নয়। যে কারণে প্রথমে তারা লাশ নিতে অস্বীকার করায় ময়নাতদন্ত শেষে রসুলপুর সরকারি গোরস্থানে দাফন করা হয়। হত্যা মামলা হয়েছে জেনে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ডিএনএ টেষ্ট করিয়েছেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা এসেছে সেটা তারা জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ইন্দ্রজিৎ গাইনকে ব্লাকমেইল করতে কোন চিরকুট পুলিশকে দেওয়া হয়েছে এমনটি তাদের জানা নেই।

এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে নিতাই গাইন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন,এক সপ্তাহ আগে বুড়িগোয়ালিনি নৌ- পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান মুঠোফোনে তার কাছে একটি চিরকুটের কথা উল্লখ করে ইন্দ্রজিৎ গাইনকে চেনেন কিনা জানতে যান। পরে বিষয়টি তিনি ইউপি সদস্য বিক্রম গাইনকে বলেন। বিক্রম বিষয়টি ইন্দ্রজিৎ গাইনের ছেলে পবিত্র গাইনকে অবহিত করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রাশেদুজ্জামান জানান,৩০ জুন অজ্ঞাতনামা যে পুরুষের লাশ তিনি ময়নাতদন্ত করেন সেটি আত্মহত্যা।

বুড়িগোয়ালিনি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডিএনএ টেষ্ট এর প্রতিবেদন মেলেনি। তবে ইন্দ্রজিৎ গাইন নামে খড়িয়াডাঙা গ্রামের একজনের নামে পাওয়া একটি চিরকুট নিয়ে তিনি তদন্তে নেমেছেন।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি কোন কথা উল্লখ না করে বলেন, হত্যার রহস্য বের করতে তিনি গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে লাশের পরিচয় না জানার আগে ও ময়না তদন্তে আত্মহত্যা উল্লেখ থাকলেও বিশেষ মিশন নিয়ে স্থানীয় বিক্রম-নিতাইয়ের ফরমূলা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ইন্দ্রজিৎ গাইনকে তার অফিসে দেখা করতে বলেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test