E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফরিদপুরে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের সঠিক রহস্য উন্মোচন হবে কি?

২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৮:৪০:০৬
ফরিদপুরে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের সঠিক রহস্য উন্মোচন হবে কি?

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরের সদরপুরে আলোচিত ট্রিপল মার্ডার তথা পাঁচ বছর বয়সী ছেলে শিশুকে গলাকেটে হত্যা ও গর্ভে থাকা আরেক শিশু জন্মের মাত্র ৬ দিন আগে তার গর্ভবতী মায়ের 'আত্নহত্যা'। এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য সঠিকভাবে উন্মোচিত হবে কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ফরিদপুর জেলা সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের সাচিয়া গ্রামের ওই গর্ভবতী মায়ের নিজ এলাকার জনসাধারণ ও স্বজনেরা। ওই ঘটনায় নিহতরা হলেন- ফরিদপুর সদরপুর উপজেলা কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রামের রমজান শেখের স্ত্রী এনং জেলা সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের প্রবাসী সাচিয়া গ্রামের রমজান খানের মেয়ে সুমাইয়া বেগম (২৩), ভূমিষ্ট হওয়ার ৬ দিন আগে মাতৃগর্ভে নিহত শিশু এবং ঘরের বিছানায় গলাকেটে হত্যার শিকার হওয়া ছেলে হুজাইফা (৫)।

নিহত সুমাইয়ার বাবা বাড়ির পাড়া প্রতিবেশী ও নিকট আত্নীয়দের অভিযোগ নিহত সুমাইয়া তার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র ৬ দিন আগে নিজের প্রথম সন্তানকে খুন করে পেটের আগত সন্তান সহ আত্মহত্যা করার যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে মনে করছেন তারা। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে তারা সুমাইয়া কে চিনেন জানেন, তাদের জানা মতে সুমাইয়া এভাবে আত্মহত্যা করার মর মেয়ে নন। এ হত্যাকাণ্ডে সুমাইয়ার স্বামী রমজান শেখ ও তার পরিবারের সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমনকি সুমাইয়ার নিজের মা'কে তাদের সাথে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন এলাকাবাসী।

তারা আরও অভিযোগ করেন, সুমাইয়ার মা ও সুমাইয়ার স্বামীর অবৈধ সম্পর্কে জড়িত আছেন সেটা এই এলাকার অনেকের জানতেন। কিন্তু সুমাইয়ার সংসারের কথা চিন্তা করে এতোদিন তারা মুখ খুলেননি। কিন্তু এখন যখন তারা দেখছেন মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে খুন হওয়া নাতী ও গর্ভবতী মেয়ের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হোক এটা সুমাইয়ার মা চান না, তাই তিনি করেননি মামলাও।

এছাড়া, মেয়ের স্বামী থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে এখন তাদের সাফাই গাইতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মেয়ের জন্য কোনো শোক অনুতাপ না করে মেয়ের স্বামীর সাথে আরও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন সুমাইয়ার মা। এবং তার মেয়ের স্বামী রমজান শেখ যেনো কিছুতেই এই মামলায় না জড়ান সেই কাজে সাহায্য করতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন তিনি। অথচ মাস তিন-চার আগেও সুমাইয়ার মা এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে বলে বেড়াতেন তার মেয়ের জামাই ভালো না, মেয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবেন। কিন্তু মেয়েটির জন্যই বরং তিনি তা পারেনি বলেও জানান কৈজুরি সাচিয়া গ্রামের সুমাইয়ার আত্নীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের দাবি, ছেলে শিশুসহ সহ গর্ভবতী সুমাইয়ার মৃত্যু রহস্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিকভাবে উন্মোচিত হোক। সুমাইয়ার স্বামীর অঢেল টাকার গরম ও তার সাথে সুমাইয়ার মায়ের পরকিয়ার আগুনে পুড়ে ছারখার না হোক এ ট্রিপল মার্ডারের সঠিক তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া।

এদিকে, সুমাইয়ার বাবার বাড়ির প্রতিবেশী, কয়েকজন নিকট আত্নীয় ও সাচিয়া গ্রামের স্থানীয় জনসাধারণের ভাষ্যমতে পাওয়া এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে, সুমাইয়ার মায়ের সাথে কথা বলতে গত ৮ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত, পরপর চারদিন সাচিয়া গ্রামে তাদের স্থায়ী বসত বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িটি তালাবদ্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করতে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তার ব্যবহৃত একটি একটিভ মোবাইল (গ্রামীণফোন) নম্বরে বেশ অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রাম থেকে স্থানীয় রমজান শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী গর্ভবতী সুমাইয়া বেগম (২৩) এবং ছেলে হুজাইফা (৫) লাশ উদ্ধার করে সদরপুর থানা পুলিশ। এ সময় সুমাইয়ার স্বামী এবং তার পরিবার থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেওয়ার ডেট থাকা গর্ভবতী গৃহবধূ সুমাইয়া বেগম (২৩) তাঁর শিশু সন্তান হুজাইফাকে গলা কেটে হত্যা করে নিজে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, আশেপাশের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু বলে জানানো হয়। পরে এসব বিষয় উল্লেখ করে নিহত গর্ভবতী সুমাইয়ার স্বামী ও জবাই করে হত্যার শিকার হওয়া শিশু হুজাইফার বাবা রমজান শেখ বাদি হয়ে সদরপুর থানায় একটি অভিযোগ দ্বায়ের করেন।

এদিকে, এমন একটি নৃশংস ত্রিপল মার্ডারের ঘটনায় সুমাইয়ার মা কোনো মামলা না করে তার মেয়ের স্বামী থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে ঘটনাটি মীমাংসায় মরিয়া হয়ে উঠেন। আর এসব বিষয় জানাজানি হলে সুমাইয়ার বাবার বাড়ি জেলা সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের সাচিয়া গ্রামের জনসাধারণ ও নিকট আত্নীয়রা প্রতিবাদে ফুসে উঠেছেন। করছেন আলোচনা, সমালোচনা, নানা উভিযোগ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি। যা এ সংবাদের প্রথমাংশে বর্ণনা করা হয়েছে।

এদিকে, শ্বশুরবাড়ির এলাকাবাসী ও স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে অবগত করে সুমাইয়ার স্বামী রমজান শেখের নিকট জানতে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, পরে টাকা লেনদেন মাধ্যমে এ ঘটনা মীমাংসার বিষয়টি অনেকটা স্বীকার করে নেন। এসময় তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'এইটা আমি জানিনা, এইটায় আরও লোক আছে।' তবে, কারা কারা এর সাথে জড়িত আছেন, সে বিষয়ে কিছুই বলেননি রমজান শেখ। এছাড়া, আপনি নিজে হত্যা করে নিজেই মামলার বাদি হয়েছেন কিনা, এমন অভিযোগের বিষয়টি তিনি তদন্তের কথা বলে এড়িয়ে যান।

অন্যদিকে, টাকা লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি মীমাংসার চেষ্টা বিষয়ে তাঁর কিচ্ছু জানা নেই জানিয়ে, সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'এমন একটি মামলা এভাবে মীমাংসা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মামলাটি গুরুত্বের সাথে নিয়ে সম্ভাব্য সকল দিক বিবেচনা করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে কাজ করছে থানা পুলিশ। এছাড়া, নিহত গর্ভবতী মা সুমাইয়ার ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য অনেকটাই উন্মোচিত হবে বলেও জানান ওসি সুকদেব।

টাকা লেনদেনের বিষয়টি একটু আধটু শুনেছি তবে এ বিষয়ে কোনো তদন্ত করি নাই জানিয়ে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে থাকা সদরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ আলমগীর উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'কে কি টাকা লেনদেন করলো ওটা আমার সাবজেক্ট নয়। আমার কাজ সঠিক তদন্ত করা আমি সব দিক বিবেচনা নিয়ে মামলাটির তদন্তের কাজ করে যাচ্ছি।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, 'আমরা সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচিত করবো, এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই, সুযোগও নেই। এ ঘটনার হওয়া মামলায় অজ্ঞাত নামা আসামি রয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে যে কেউ আমাসি হতে যেতে পারে। এছাড়া, খুব শীঘ্রই এ আলোচিত পাঁচ বছরের ছেলেকে গলাকেটে হত্যা ও গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এসআই শরীফ আলমগীর।

(আরআর/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১১ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test