E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশংসনীয় উদ্যোগ  

টুঙ্গিপাড়ায় দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সোরকি জমা দেওয়ার নির্দেশ

২০২৫ অক্টোবর ১৮ ১৮:৪৯:২৪
টুঙ্গিপাড়ায় দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সোরকি জমা দেওয়ার নির্দেশ

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত গ্রাম্য মারামারি সংস্কৃতি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সুরকি জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টুঙ্গিপাড়া থানার উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে নিজেদের কাছে থাকা সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র যেমন ঢাল, সুরকি, বল্লম, দা, রামদা ও লাঠি ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

পুলিশ জানিয়েছে, এই নির্দেশ অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা স্বেচ্ছায় অস্ত্র জমা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি থানায় যোগদানের পর দেখেছি, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে মারামারি হয় শ্রীড়ামকান্দি, গেমাডাঙ্গা, পাটগাতি ও গওহরডাঙ্গা গ্রামে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। ৯ বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত লাঠিসোটা ও ঢাল-সুরকি নিয়ে নেমে পড়ে। এটা সত্যিই বিস্ময়কর ও দুঃখজনক। একটি ভুল বা তর্কের কারণে মানুষ আহত হয়, কখনও মৃত্যুও ঘটে। অথচ দেশে আইন আছে, আদালত আছে, সমাজ আছে তবুও তারা নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। এটা যেন এক ধরনের কালচার হয়ে গেছে

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই এই দীর্ঘদিনের গ্রাম্য মারামারি কালচার থেকে সবাই বেরিয়ে আসুক। আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে আমি এই বিষয়টি উত্থাপন করেছি, এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি মারামারি করে কিছুই লাভ নেই। এতে কারো বাবা, কারো সন্তান, কারো স্বামী অকালে প্রাণ হারায়। মৃত্যুর পর কেবল আফসোস ছাড়া কিছুই থাকে না।

ওসি আরও জানান, আমরা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। হাতে অস্ত্র থাকলে মানুষ উত্তেজিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু অস্ত্র না থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমরা চাই প্রত্যেক গ্রামে যারা ঢাল সুরকি, দা বা লাঠিসোটা রেখেছেন, তারা দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিন। জমাকৃত অস্ত্রগুলো পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক ধ্বংস করা হবে।

টুঙ্গিপাড়া থানার এই উদ্যোগে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও প্রশংসার সুর বইছে।

পাটগাতি গ্রামের হান্নান শেখ বলেন, বাড়িতে লুকানো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে মারামারি প্রায়ই হতো। পুলিশ এখন এসব অস্ত্র জমা নিচ্ছে, এটা সত্যিই ভালো উদ্যোগ।

একজন স্থানীয় নারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ছোটখাটো তর্কেও আগে ঢাল-সুরকি বেরিয়ে যেত। এখন পুলিশ বলেছে এগুলো জমা দিতে, এতে নিশ্চয়ই অনেক সহিংসতা কমবে।

পাটগাতি ইউনিয়ন পরিষদের গওহরডাঙ্গা ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রুঙ্গু খান বলেন, আমরা থানার সঙ্গে সমন্বয় করে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচারণা চালাচ্ছি। যারা অস্ত্র জমা দেবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, বরং সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা যায়।

সম্প্রতি ১৫ সেপ্টেম্বর ও ৬ অক্টোবর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শ্রীড়ামকান্দি ও পাটগাতি এবং গওহরডাঙ্গা এলাকায় ডাব কেনা ও ডাব পাড়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে দুই ঘটনায় মোট ৩৫ জন আহত হন। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই পুলিশ এই বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি জানান, আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে দমন করা নয়; বরং জনগণকে সচেতন করে একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তোলা। আমরা চাই না কোনো পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারাক। সবাই যদি আইনকে সম্মান করে, তাহলে টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ী শান্তি ফিরে আসবে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ, গ্রাম পুলিশ ও মসজিদের ইমামদের সহযোগিতায় মাইকিং ও প্রচারণার মাধ্যমে অস্ত্র জমা দেওয়ার কাজ চলবে। পুলিশ পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নে নজরদারি জোরদার করবে, যাতে কেউ গোপনে দেশীয় অস্ত্র সংরক্ষণ না করতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আক্তার জানান,আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেব। এই উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা জেগেছে যে, টুঙ্গিপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা গ্রাম্য মারামারি সংস্কৃতি এবার বন্ধ হতে পারে।

পুলিশ, প্রশাসন ও জনগণ যদি একসাথে কাজ করে, তাহলে টুঙ্গিপাড়া আবারও শান্তির জনপদ হিসেবে ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ১৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test