E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলারিটি অথরিটির হাইকোর্টে রিট

‘বরসা’ পরিচালনা কমিটির ৩৪ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ১৮:৪৭:৩৫
‘বরসা’ পরিচালনা কমিটির ৩৪ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এ্যসোসিয়েশান অফ রুরাল এ- সোসাল এ্যাডভ্যান্সমেন্ট (বরসা) এর ৩৪ কর্মকর্তাকে দেশত্যাগ, স্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদ হস্তান্তরে দ্বিতীয়বারের মত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির আহম্মেদ চৌধুরী গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এ্যসোসিয়েশান অফ রুরাল এ- সোসাল এ্যাডভ্যান্সমেন্ট (বরসা) সাতক্ষীরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একই সাথে ১০ শতাংশ সুদে গ্রাহকদের সঞ্চয়ী হিসাব খোলা শুরু করে। পাঁচ বছরে দ্বিগুন টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ডিপিএস (এফডিপি ও এফএম) শুরু করে। ব্যবসার সুবিধার্থে বরসা কর্তৃপক্ষ ঢাকার সাংবাদিক সেলিনা পারভিন সড়কের মাইক্রোক্রেডিট রেগুলারিটি অথরিটি থেকে ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ঋণ গ্রহণ শুরু করে। ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘বরসা’ কর্তৃপক্ষ ১৪ দশমিক ০৩৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ৯ দশমিক ০৭৯ কোটি টাকা জমা দেয়। সুদে আসলে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৭ টাকা বকেয়া দেখিয়ে তা পরিশোধ না করায় ‘বরসা’ পরিচালনা কমিটির ৩৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়।

লিগ্যাল নোটিশ এর জবাব না দেওয়ায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলারিটি অথরিটি এর সহকারি পরিচালক মহিউদ্দিন শামীম রিফাত বাদি হয়ে চলতি বছরের ১৬ মার্চ মহামান্য হাইকোর্টে ৪৬৬/২০২৫ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। মামলায় চায়না বাংলা গ্রুপ, বরসা রিসোর্ট এ- ট্যুরিজম লিঃ, চায়না বাংলা ফুডস লিঃ, চায়না বাংলা পলিমার লিঃ ও সিবি হাসপাতাল লিঃ এর প্রতিনিধি ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ‘বরসা’ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচীব আশিকুর রহমান, একেএম আনিছুজ্জামানের স্ত্রী মাসুদা ইয়াসমিন, সদস্য কাজী কামরুজ্জামান, জামায়াত নেতা আমানউল্লাহ আমান, সদস্য সাংবাদিক নাজমুল আলম মুন্না ও তার স্ত্রীসহ ৩৪ জনকে বিবাদী শ্রেণীভুক্ত করা হয়।

বিচারপতি খিজির আহম্মেদ চৌধুরী শুনানী শেষে ৩৪ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগ, স্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদ হস্তান্তরে চার মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদীগণ গত ৩১ জুলাই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ২৯৮৪ নং আপিল মামলা করেন। বিচারপতি ফারাহ মাহাবুব নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রেখে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন। অ্যাড. অন রেকর্ড হিসেব দায়িত্ব পালন করেন মোঃ আতাউর রহমান। পরবর্তীতে ২৬ আগষ্ট মাহামান্য হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো চার মাস বৃদ্ধি করে আগামি ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। রিটকারিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. নাসরিন সুলতানা।

এদিকে ‘বরসা’তে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকার ডিপএস ও ১০ লাখ তিন হাজার ৭৩০ টাকা সঞ্চয়ী হিসাবে মোট এক কোটি তিন লাখ ৫৮ হাজার ২৭০ টাকা জমা করে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরৎ না পাওয়ায় কালিগঞ্জেরর চম্পাফুল ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামের সুশান্ত সরকার, পাঁচী দাসী, বিষ্ণুপদ মন্ডল, সোনামনিসহ ৪৮ জন ৪৬৬/২০২৫ মামলায় পক্ষভুক্ত হন (আদালত নং-১৪, বিজয়)। ৪৮ জনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. সত্যরঞ্জন মন্ডল।

বিবাদী পক্ষের সাতক্ষীরার ভোমরা গ্রামের ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদেশ তিনি গত ২৬ নভেম্বর হাতে পেয়েছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন বলেন, রিট পিটিশনের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদেশটি তিনি ডাকডোগে সকল বিবাদীগণকে পাঠিয়েছেন। একইসাথে সম্পত্তি ও সম্পদ হস্তান্তর রোধে সাতক্ষীরা জেলা রেজিষ্টারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, শহরের পলাশপোলের গোলাম রসুল ও গোলাম মহিউদ্দিনসহ তাদের ওয়ারেশদের কাছ থেকে ৩০ বছর মেয়াদী জমি লীজ নিয়ে তাতে ১০ তলা ভবন বিশিষ্ট সিবি হাসপাতাল বানানো হয়। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বরসা’‘ এর পরিচালক একেএম আনিছুজ্জামান মারা যান। এরপর পরই তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুর আগেই গ্রহকরা বকেয়া টাকার দাবিতে বরসা এর বিভিন্ন অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি টাকা না পাওয়ায় বরসা’র কালিগঞ্জ ও আশাশুনির বড়দল অফিস, শ্যামনগরের বরসা রিসোর্ট, চায়না বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, চায়না বাংলা ফুড ও সিবি হাসপাতাল ভাঙচুর করে। বরসা’র বিভিন্ন শাখা অফিসের ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারা আত্মগোপন করে।

একপর্যায়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে পাস কাটিয়ে সিবি হাসপাতালের জমি ও ভবন সম্পর্কে সঠিক তথ্য গোপন রেখে সদর সাব রেজিষ্টারকে ম্যানেজ করে সিবি হাসপাতাল কমিটির সাবেক সদস্যদের না জানিয়ে সম্প্রতি ভোমরার ব্যবসায়ি আবু হাসান সিবি হাসপাতালের জমি ও ভবন ৩৭ কোটি টাকায় ক্রয় করেছেন মর্মে জানা গেছে। বর্তমানে ঢাকার ব্যাংক ও গ্রাহকদের ৪৬২ কোটি টাকা বকেয়া রেখেই একের পর এক জমি ও সম্পদ হস্তান্তর প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৭ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test