E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কালিগঞ্জে অবরুদ্ধ সুনীল মণ্ডলের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক 

২০২৫ ডিসেম্বর ১৪ ১৩:১৯:২৮
কালিগঞ্জে অবরুদ্ধ সুনীল মণ্ডলের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :  আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল বাজারের পাশে সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের পরিকল্পিত কাঁটাতারের বেড়া ও ইটের প্রাচীর দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা সুনীল মণ্ডলের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনউদ্দিন মঈন। গত ৪৮ ঘণ্টায় পুলিশ সুনীল মণ্ডলের অবরুদ্ধ পরিবারের পাশে না গেলেও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনউদ্দিন মঈনের নির্দেশে কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার (ভূমি) মঈনুদ্দিন খান ও চম্পাফুল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মুকিত হোসেন শুক্রবার দুপুর দুটোর দিকে জবরদখলকারীদের সতর্ক করেন। শনিবার সামাদ গাজী আবারো দখল প্রক্রিয়া চালাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন।

চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজারের মাধবী রানী মণ্ডল জানান, একই গ্রামের আব্দুস সামাদ গাজী (৬৫) ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের (৪৫) সাথে তাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ¦ালানো মামলার আসামী সামাদ গাজীর বিরুদ্ধে কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তার ও তার ছেলে আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

মাধবী মণ্ডল আরো জানান, সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর ২০১২ সালে তাদের সাড়ে ১৬ শতক জমি জবরদখলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দেঃ ৪৮৮/২৩ ও তাদের সকল জমি জবরদখল করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে দেঃ ৩১৪/২১ মামলা (নিষেধাজ্ঞা) করেন সুনীল মণ্ডল। গত ৬ নভেম্বর উচ্ছেদের মামলার রায় তাদের বিপক্ষে ও নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় জমি জবরদখলের আবারো হুমকি দেওয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী সুনীল মণ্ডল গত ১৯ নভেম্বর মারা যান। তার ছেলে শংকর মণ্ডল গত পহেলা ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যথাক্রমে দেঃ আপীল (২০১/২৫) ও মিস আপীল(৫৩/২৫) দাখিল করে। তবে ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ও ডিক্রি পাওয়ার পর তার স্বামীর নামে গেজেট হয়। ওই জমি অবমুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। ২৮ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলাম মঈন বিবাদী পক্ষ সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয়। আগামি ২৪ ডিসেম্বর রায় এর জন্য দিন ধার্য আছে। ওই জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীর কবীর জবরদখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সামাদ গাজী তাদের (মাধবী) জমিতে একটি টিনের ঘর বানিয়ে তাতে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে কাঁটা তারের বেড়া ও ইট দিয়ে প্রাচীর নির্মান করে তাদের বাড়ির প্রবেশ পথ,টিউবওয়েল, তুলসী মন্দিরসহ সকল পথ বন্ধ করে দেয়। তিনি সকাল ১১ টার দিকে বিষয়টি নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তারকে জানালে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জুয়েল হোসেনকে নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ পাওয়ার পরও ৪৮ ঘণ্টায়ও পুলিশ ঘটনান্থলে যায়নি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদেরকে আদালতে যেতে বলেন।

এ অবস্থায় কালিগঞ্জ থানার কোন প্রশাসনের সদস্য তার কাজে বাধা দিতে আসবে না মর্মে বাজারে প্রচার দেন। বাধ্য হয়ে বিষয়টি তিনি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনুদ্দিন মঈনকে অবহিত করলে তারই নির্দেশে শুক্রবার দুপুরে চম্পাফুল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মুকিত হোসেন ও অফিস সহকারি পরিতোষ মণ্ডল ঘটনান্থলে এসে উভয়পকক্ষের সঙ্গে বলেন। সামাদ গাজীকে ওই জমিতে কোন প্রকার কাজ না করার কথা বলে যান। এরপরও শনিবার সকালে আবার ও কাজ শুরু করলে তাদের সঙ্গে সামাদ গাজী ও তার শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের বচসা হয়।

এ ব্যাপারে আলমগীর কবীর শনিবার সকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, সুনীল মণ্ডলের কোন কাগজপত্র নেই। তাদের মাত্র ৪১ শতক জমি থাকলেও তারা ৮ বিঘার মত জমি দখল করছে। তাই তারা বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন ধরে ইটের প্রাচীর ও কাটা তারের বেড়া দিয়ে জমি ঘিরে নিয়েছেন। ঘরের পিছন দিক দিয়ে তাদের বের হওয়ার জন্য চার হাত রাস্তা দিয়েছেন। শনিবার সকালে তাদের নবনির্মিত প্রাচীরে এক শ্রমিককে পানি দিতে পাঠালে সুনীল মণলের পরিবারের এক সদস্য তাকে মারপিট করেছে। তবে বিষয়টি তিনি আদালতের বাইরে এসে সমঝোতা করার দাবি জানান।

চম্পাফুল ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের তহশীলদার মুকিত হোসেন জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নির্দেশ পেয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মঈনুদ্দিন খান তাকে শুক্রবার দুপুরে চম্পাফুলে পাঠান। বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার সুনীল মণ্ডলের ঘরবাড়ি কাটা তারের বেড়া দিয়ে ও ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাতে তিনি অবাক হয়েছেন। এর ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। সামাদ গাজী জবরদখলকৃত জমি থেকে বাঁশ বিক্রি করলে তা কাটার সময় বাধা দিয়েছেন তিনি। সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীরকে কাজ বন্ধ করার জন্য সতর্ক করে আসা হয়েছে। শনিবার সকালে আবারো কাজ করার খবর পেয়ে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। তবে ইতিপূর্বে চম্পাফুল অফিসে সাড়ে ৫ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, সুনীল মণ্ডলের জমির ন্যয্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন সামাদ গাজী ও আলমগীর কবীর।

কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নির্দেশে তাকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চম্পাফুলে যেতে বললেও একটি বাচ্চা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া, খারাপ রাস্তাসহ বিভিন্ন কারণে তিনি সন্ধ্যার পর চম্পাফুল বাজারে যেয়ে সামাদ গাজীকে সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। শনিবার সকালে সামাদ গাজী আবারো কাজ শুরু করার খবর পেয়ে তাকে আবারো সতর্ক করা হয়েছে। সহকারি কমিশনার (ভূমি) রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করবেন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনউদ্দিন মঈন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গতঃ গত ১৭ আগষ্ট থেকে ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত সামাদ গাজী ও তার ছেলে আলমগীরের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী সুনীল মণ্ডলের দখলীয় ও পৈতৃক জমি জবরদখলের উদ্দেশ্যে তিন লক্ষাধিক টাকার ফলজ ও বনজ গাছ এর পাশাপাশি ফসলাদি লুটপাট করে ওই পরিবারের যাতায়াতের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চারি ধারে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করলে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহম্মেদ ও সিপাহী কামরুল ইসলামকে শোকজ করে ১৯ আগষ্ট আদালতের কাঠগোড়ায় ডাকা হয়।গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে থাকাকালিন সুনীল মণ্ডলের বসতবাড়ি সংলগ্ন কাঠঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে সামাদ গাজী বাদি হয়ে সুনীল মণ্ডল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্বাহী আদালতে মামলা করেন।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test