E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন

সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানের হাতে চার বিকল্প

২০২৫ মে ২৮ ১৩:৩৮:৪৯
সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানের হাতে চার বিকল্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়, যা তিন দিনেরও বেশি স্থায়ী ছিল। যা গত কয়েক দশকের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত। এরপর ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ।

তবে ভারতশাসিত কাশ্মীরের একটি প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঠিক পরদিন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত।

এর জবাবে পাকিস্তান সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রাপ্য পানির প্রবাহ বন্ধ বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা এবং নিম্নপ্রবাহ অঞ্চলের অধিকার হরণকে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

কিন্তু ভারত এখনো একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেনি, যার ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর গুরুতর হুমকি তৈরি হয়েছে, কারণ দেশটির কৃষি সিন্ধুর পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এখন এ বিষয়ে পাকিস্তানের হাতে চারটি বিকল্প আছে।

ভারত ও পাকিস্তান যখন ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানি চুক্তিতে সই করে, তখন এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক। বর্তমান সংকটে পাকিস্তান আবারও চায় যে, বিশ্বব্যাংক দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করুক।

তবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা চলতি মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান,
বিশ্বব্যাংক বিরোধে সরাসরি সালিশ বা রায় দেবে না, তবে চুক্তির বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সক্রিয় হলে সহায়তা করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের এই অবস্থানে কিছুটা আশার আলো দেখছে পাকিস্তান সরকার।
একজন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা নিক্কেই এশিয়াকে জানান, পাকিস্তানের একাধিক সরকারি বিভাগ বিশ্বব্যাংকের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক মামলা উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের উচিত এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকারিভাবে মধ্যস্থতা চাওয়া, কারণ তাদের মামলা আইনগতভাবে শক্তিশালী।

ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান খালিদ রহমান নিক্কেইকে বলেন আন্তর্জাতিক আইনে উপপ্রবাহ ও উজান অঞ্চলের অধিকার ও দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। ভারত এগুলো লঙ্ঘন করছে এবং পাকিস্তান আইনগতভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানানোর পূর্ণ অধিকার রাখে।

যদি বিশ্বব্যাংক সাহায্য করতে না পারে, তাহলে পাকিস্তান অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন পরামর্শক নাসির মেমন বলেন, পাকিস্তান ‘পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন’ (দ্য হেগ)-এ যেতে পারে, যা চুক্তিতেই উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালত এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিকার চাইতে পারে।

তবে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা জানান যে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রক্রিয়া খুব ধীরগতিতে চলে এবং এতে দ্রুত সমাধান পাওয়া কঠিন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি নয়া দিল্লি রাজি হয়, তাহলে পাকিস্তান চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সরাসরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে পারে।

ইসলামাবাদভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের চেয়ারম্যান খালিদ রহমান বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি মানেই মনোভাবগত দ্বন্দ্বের অবসান নয়। তবে চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার আশা রয়েছে।

তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, যদি পাকিস্তান বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যায় তাহলে তা আলোচনাকে জটিল করে তুলতে পারে।

সাম্প্রতিক সংঘাতের পর ভারতবিরোধী কূটনৈতিক সমর্থন পেতে একটি সংসদীয় দল বিভিন্ন দেশে পাঠানোর ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। ভারতের পক্ষ থেকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কারাচির বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনিস আহমদ নিক্কেইকে বলেন, কূটনৈতিক প্রচারণায় সফল হতে চাইলে পাকিস্তানের পানি চুক্তি নিয়ে মামলা যত্নসহকারে প্রস্তুত করা আবশ্যক।

তিনি বলেন, অতীতে পাকিস্তান তার কেস যথাযথ ও প্রফেশনাল উপায়ে উপস্থাপন করতে পারেনি, যার ফলে তা অবহেলা বা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।

(ওএস/এএস/মে ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test