E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চাঁদপুরে খুন করে ৪ মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা

২০১৭ অক্টোবর ১৭ ১৪:২১:৫০
চাঁদপুরে খুন করে ৪ মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা

চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুর শহরে ট্রাক রোড এলাকায় সেবা আয়েশা গার্ডেন নামে বহুতল ভবনের কেয়ারটেকার দেলোয়ার হোসেন (৫৮) কে জবাই করে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। দেলোয়ারের হাত-পা বেঁধে তাকে নৃশংসভাবে খুন করে ভবনের নিচতলার গ্যারেজ থেকে চারটি মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে ওই খুনি দুর্বৃৃত্তরা। ১৫ অক্টোবর রোববার গভীর রাতের কোনো এক সময় এ নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটে। নিহত দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি মতলব পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডস্থ দিঘলদী গ্রামে। তিনি এই ভবনে ৮/৯ মাস যাবৎ কেয়ারটেকার হিসেবে চাকুরি করছিলেন।

সেবা আয়েশা গার্ডেন নামে নয়তলা বিশিষ্ট এই বহুতল ভবনটির মূল কাজ শেষ হলেও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় এয়ারটেল সিম কোম্পানীর কাস্টমার কেয়ার অফিস। অন্যান্য ফ্ল্যাটের কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি হয়, কিছু ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া রয়েছে এবং কিছু ফ্ল্যাট এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় খালি রয়েছে। এই ভবনের নিচতলা পুরোটাই গাড়ির গ্যারেজ। এই গ্যারেজের সামনের অংশে উত্তর পাশে একটি রুমে কেয়ারটেকার দেলোয়ার হোসেন থাকতেন। এই রুমেই দুর্বৃত্তরা তার হাত-পা বেঁধে জবাই করে খুন করে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওই রুমে দেলোয়ারের নিথর দেহ খাটের উপর পড়ে আছে। আর খাটের নিচে ফ্লোরে অনেক রক্ত। মনে হলো যেনো তার পুরো শরীরের রক্তই ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।

ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়ালি উল্লাহ অলি, নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সিরাজুল মোস্তফাসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাকে দেখা গেলো। তাঁরা সকলেই ছিলেন বিমর্ষ। স্মরণকালে শহরের উপরে এমন লোমহর্ষক নৃশংস ঘটনায় সবাই হতবাক। ভবনটির বাইরে ছিলো শত শত উৎসুক মানুষ। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দলের সদস্যরা। তারা ঘটনাস্থলে এসে নির্দিষ্ট এরিয়ার পুরোটা ফিতা দিয়ে ঘিরে ফেলেন এবং তাদের নানা কাজ শুরু করেন। ঘটনাস্থল থেকে দু’টি ভাঙ্গা তালা আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। পিবিআই’র সদস্যরা লাশের সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহসহ নানা আনুষাঙ্গিক কাজ সেরে লাশ মর্গে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করে দেয়।

ঘটনাস্থলে নিহত দেলোয়ারের স্ত্রী ও ২ মেয়ে

নৃশংসতম এ হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নিহত দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী জোছনা বেগম (৫৩), বড় মেয়ে ফাতেমা (৩৫) ও ছোট মেয়ে কুলছুমা (৩০) এবং দেলোয়ারের ভায়রা ভাই রহমত উলøাহ। নিহত দেলোয়ারের ২ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে ছেলে আঃ মালেক (২৮) ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন বলে দেলোয়ারের স্ত্রী ও মেয়েরা জানান। ছেলে খবর পেয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে বলে তারা জানান। দেলোয়ারের স্ত্রী-সন্তানদের আহাজারিতে তখন পরিবেশ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে।

দেলোয়ারের স্ত্রী জোছনা বেগম জানান, তার স্বামী ৬/৭ বছর সৌদি আরব ছিলেন। সেখান থেকে একেবারে দেশে চলে আসেন প্রায় চার বছর হবে। দেশে আসার পর তিনি অনেকটা বেকার ছিলেন। কিছুদিন পর ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকুরি নেন। সেখানে কয়েক বছর চাকুরি করার পর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে আসেন। গ্রামে অনেকদিন বেকার ছিলেন। এরপর ৮/৯ মাস হলো এখানে (সেবা আয়েশা গার্ডেন) চাকুরি নেন। এখানে বেতন ছয় হাজার টাকা করে পেতেন বলে স্ত্রী জোছনা বেগম জানান। থাকার রুম মালিকের পক্ষ থেকে দেয়া হলেও খাওয়া নিজের উপর ছিলে বলে তিনি জানান। আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না থাকায় অল্প বেতন এবং কম সুযোগ সুবিধায়ও এ চাকুরি করতে বাধ্য হন তিনি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত দেলোয়ারের স্ত্রী বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার পর প্রথমদর্শী

নৃশংসতম এ হত্যাকাণ্ডের পর ভোর বেলা ঘটনা প্রথম দেখেছেন এই ভবনের ৮ম তলার ফ্ল্যাটের মালিক সাইফুল ইসলাম। তিনি জানালেন যে চারটি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে তার একটির মালিক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি জানান, সাইফুল ইসলাম ভোরে হাঁটতে বের হওয়ার জন্য নিচে নামেন। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেটের দিকে এগিয়ে যেতে কেয়ারটেকার দেলোয়ার রুমের দিকে তাকিয়েই তিনি দেখেন রুমের দরজা খোলা এবং খাটের উপর রক্তাক্ত অবস্থায় দেলোয়ার পড়ে আছে। আর খাটের সামনে ফ্লোরে অনেক রক্ত পড়ে আছে। তখনই ঘটনা জানাজানি হয় এবং চাঁদপুর মডেল থানায় ফোন দেয়া হয়। থানায় জানানোর পর থানা থেকে জানানো হয় নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সিরাজুল মোস্তফাকে। তিনি আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টায় ঘটনাস্থলে যান। এরপর অন্যান্য পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থলে আসেন।

মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, এ ঘটনায় চারটি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তার নিজের একটি (বাজাজ কোম্পানীর পালসার), এই ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক মোঃ হাবিবের সুজুকি কোম্পানীর একটি, জনৈক রনির একটি (সুজুকি) ও ফয়সালের একটি (পালসার)।

আবুল কালাম আজাদ জানান, এই চার মোটর সাইকেল মালিকের মধ্যে শুধু ফয়সাল এই ভবনে ভাড়া থাকেন। আর অন্য তিনজন আশপাশে অন্য বাসায় ভাড়া থাকেন। তারা তাদের মোটর সাইকেলের নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে রাখেন। এই চার জনের মধ্যে হাবিব ফ্ল্যাটের মালিক হলেও পাশেই ভাড়া থাকেন। মোটর সাইকেল ছাড়া প্রাইভেট কারসহ অন্য গাড়িও এখানে রাখা হয়। মোটর সাইকেলের জন্য ভাড়া দিতে হয় কিনা তা না বললেও প্রাইভেটকারের জন্য মাসে ১২শ’ টাকা ভাড়া দিতে হয় বলে আবুল কালাম আজাদ জানান।

সম্পূর্ণ অরক্ষিত নিরাপত্তাহীন বহুতল ভবন

চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোডে অবস্থিত সেবা আয়েশা গার্ডেন নামে নয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবনটি একেবারেই অরক্ষিত। নিরাপত্তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেলো না ভবনটিতে। ভবনটির নিচতলার তিনদিক দিয়েই উপরের দিকে খোলা। আশপাশে রয়েছে টিনশেড অনেক বাসাবাড়ি। আবার ভবনের প্রধান ফটকের সাথে দক্ষিণ পাশে যে ছোট পকেট গেইটটি রয়েছে সেটির উচ্চতাও তেমন একটা বেশি নয়। এই গেইট টপকিয়ে এবং তিনদিকের দেয়ালের উপর যে ফাঁকা জায়গা রয়েছে, এদিক দিয়েও যে কোনো মানুষ ভেতরে ঢুকতে পারবে। তাছাড়া ভবনটিতে কোনো সিসি ক্যামেরাও নেই। এমন নিরাপত্তাহীন অরক্ষিত অবস্থা দেখে অনেকেই হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

(ইউএইচ/এসপি/অক্টোবর ১৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test