E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ায় জিআর প্রকল্পের চাল হরিলুট

২০১৪ জুলাই ২৩ ১৭:৪৫:১৪
কুষ্টিয়ায় জিআর প্রকল্পের চাল হরিলুট

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় নামযজ্ঞ ও ওয়াজ মাহফিলে অনুষ্ঠানে আসা লোকজন এবং এতিম শিশুদের খাবারের জন্য জিআর প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৭২ টন চাল হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা এই অপকর্মের হোতা। ভুয়া প্রকল্প তৈরি দেখিয়ে পুরো খাদ্যশস্যই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে না দিয়েই টাকা পুরেছেন নিজ পকেটে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানায়, গত ৩০ জুন জিআর প্রকল্পের মাধ্যমে খোকসার ১৩টি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, ১৪টি মন্দিরে নামযজ্ঞ ও তিনটি মাদ্রাসা হেফজখানায় খাবারের জন্য ৭২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তরের বিশেষ বরাদ্দ থেকে এসব খাদ্যশস্য ছাড় করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে চাহিদাপত্র তৈরি করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ওই চাহিদাপত্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। ব্যবসায়ীরা ওই চাহিদাপত্র খাদ্যগুদামে জমা দিয়ে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।

তালিকা অনুযায়ী মোড়াগাছা ইউনিয়নের মোড়াগাছা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে আসা মুসল্লিদের খাবারের জন্য তিন টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ জুলাই দুপুরে ওই মসজিদে গিয়ে জানা যায়, গত পাঁচ-ছয় মাসে সেখানে কোনো ওয়াজ মাহফিল হয়নি। বরাদ্দের বিষয়টিও কেউ জানেন না। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল বারিক মোল্লা মসজিদ কমিটির সভাপতি পরিচয় দিয়ে চাহিদাপত্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন।

মসজিদ কমিটির সদস্য আবু বাক্কার বলেন, বারিক মেম্বার মসজিদ কমিটির কেউ নন। পাশেই মোড়াগাছা দুর্গামন্দির। এই মন্দিরে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের নামে তিন টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। মন্দির কমিটির সভাপতি পরিচয়ে অরুণ কুমার নামের এক ব্যক্তি ওই চাল উত্তোলন করে বিক্রি করেন। ওই মন্দিরের বাসিন্দা অরুণ বলেন, ‘আমার বাড়ির ওপর মন্দির। অথচ আমি জানি না চাল বরাদ্দ এসেছে। তা ছাড়া মন্দিরের কোনো কমিটিও নেই।’

মোড়াগাছা কালীমন্দিরে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের নামে তিন টন খাদ্যশস্য বিক্রি করেছেন ভাদু মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। ওই মন্দির কমিটির সদস্য বিকাশ বলেন, ভাদু নামে তাঁদের মন্দিরে কোনো লোক নেই। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ পাল বলেন, জিআরের চাল বিক্রি করার কোনো বিধান নেই। তা হয়ে থাকলে অনিয়ম হয়েছে।

খোকসা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কাজ তদারকি করার দায়িত্ব আমার নয়। এটা ট্যাগ অফিসার ও ইউএনও করবেন।’ বরাদ্দের কতটুকু কাজ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি বরাদ্দ এসেছে। তবে প্রকল্পের পিআইসি বা সভাপতিকে ছিল তা আমার জানা নেই।

খোকসা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, গত ৩০ জুন ও ১ জুলাই গুদাম থেকে ৭২ টন খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উত্তোলন করেছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিছু পরিমাণ চাল নিয়ে গেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা খান বলেন, বরাদ্দের কাজ হতে হবে। না হয় সার্টিফিকেট মামলা করা হবে।

(কেকে/এটিঅার/জুলাই ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test