E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যা

২০২১ মার্চ ২৭ ১৪:৫৯:০১
পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে এক ব্যবসায়ীকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ ট্রেন লাইলে ফেলে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বনানী থানাধীন চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে রেল লাইন থেকে ওই ব্যবসায়ির ত্রিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। 

নিহত ব্যবসায়ীর নাম সুকৃতি সরকার (৩৬)। তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কোদণ্ডা গ্রামের গোষ্ঠ বিহারী সরকারের ছেলে ।

কোদণ্ডা গ্রামের গোষ্ঠ বিহারী সরকার জানান, তার ছেলে সুকৃতি সরকার ঢাকার মোহাম্মদপুর ৬/৩০, সলিমুল্লাহ রোডে জনৈক ইব্রাহীম হোসেনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ২০১৫ সালের পহেলা মার্চ থেকে এসএমএস ইলেকট্রনিক্স নামে ওয়ালটনের শোরুম পরিচালনা করে আসছিল। সে ঢাকা উদ্যান রোডের সি/৫ ব্লকের ১নং রোড এর ২৭ নং টাওয়ারের আওতাধীন ৪৫ নং বাড়িতে স্ত্রী সুষ্মিতা ও তাদের একমাত্র ছয় বছরের সন্তান সৌমিত্র সরকার ওরফে সজিবকে নিয়ে ভাড়া থাকতো। মোহাম্মদপুর ছাড়াও কুমিল্লার লাক্সসাম, ইছাপুর, ১৪ গ্রাম ও মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় নামকস্থানে সুকৃতির ওয়ালটনের শো রুম ছিল।

শরিয়তপুরের জনৈক মোহাম্মদ আলী তার বাসার পাশে ভাড়া থাকেন। মুন্সিগঞ্জের দীঘির পাড়ের শোরুমটি সুকৃতিসহ, মোহাম্মদ আলী ও মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকার আব্দুর রহিম খানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করার জন্য সিদ্ধান্ত হলে আব্দুর রহিম খান নিজের নামে ট্রেড লাইসেন্স করেন। সে অনুযায়ি ওয়ালটন কোম্পানীর ডিলার আলাউদ্দিনের কাছ থেকে ফ্রিজ ও টিভিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে সুকৃতি মুন্সিগঞ্জের দীঘিরপাড় শোরুমে পাঠায়। পরবর্তীতে আব্দুর রহিম খান ও মোহাম্মদ আলী কোন হিসাব না দিয়ে সুকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বসাবসি শেষে বকেয়া ১৮ লাখ টাকা ফেরৎ চেয়ে দীঘিরপাড়ের শোরুমের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রহিম খানকে জানিয়ে দেয় সুকৃতি। এরপর পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রহিম মোবাইল ফোনে সুকৃতিকে হুমকি দেয়।

গোষ্ঠ বিহারী সরকার আরো জানান, গত ২২ মার্চ রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদ আলী মোবাইল ফোনে সুকৃতিকে তার বাসায় টাকা নিতে যাওয়ার জন্য বলে। রাতে না যেয়ে পরদিন সকালে যাবে বলে মোহাম্দ আলীকে মোবাইল ম্যাসেজ দেয় সুকৃতি। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদ আলীর বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয় সুকৃতি। সকাল ১১টায় স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়। সন্ধা সাতটায় ফোন আসলে ছেলে সজীব ধরে মাকে দেয়। সামান্য কথা হওয়ার পর ফোন কেটে যায়। ওইদিন রাত ৯টার দিকে কমলাপুর রেল পুলিশের এক উপপরিদর্শকের মাধ্যমে বনানী চেয়ারম্যোন বাড়ির পাশের রেল লাইনে সুকৃতির ত্রিখণ্ডিত লাশ পড়ে থাকার কথা জানানোয় পুত্রবধু সুস্মিতা তাকে খবর দেয়। ২৪ মার্চ সকালে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় যেয়ে সুকৃতির ত্রিখন্ডিত লাশ দেখতে পান তিনি। ওইদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সুকৃতির লাশ পোস্তগোলা মহাশ্মশানে সমাধি করা হয়।

গোষ্ঠ বিহারী সরকার অভিযোগ করে বলেন, তার পাওনা টাকা দেওয়ার নাম করে তার ছেলে সুকৃতিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর রেল লাইনে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যার প্রচার চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সুকৃতির মৃত্যুর ব্যাপারে ওয়ালটন কোম্পানীর ঢাকা অফিসের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন জানান, মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রহিম খানের সঙ্গে মাল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সুকৃতির সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল কিছুদিন ধরে।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী ও আব্দুর রহিম খাঁন এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজাহারুল হক জানান, এ সুকৃতির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এটি হত্যা কিনা তা বলা যাবে না।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test