E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৮ বছর

ভালো নেই রানা প্লাজায় হাত হারানো শিল্পী

২০২১ এপ্রিল ২৪ ১৪:৪৭:৪৯
ভালো নেই রানা প্লাজায় হাত হারানো শিল্পী

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি : ‘সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও গা শিউরে উঠে। মনে হয় যেন সবকিছু ভেঙে গায়ে পড়ছে। রাতে ঘুমের ঘরে প্রায়ই চিৎকার করে উঠি। ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্ধকারে তিন রাত, তিন দিন চাপা পড়েছিলাম। বের হওয়ার সুযোগ ও সাধ্য কোনটাই ছিল না। চিৎকার দিলেও কেউ শোনেনি। ক্ষুধা আর চাপা পড়া হাতের যন্ত্রণায় শুধু ছটফট করছিলাম।’

২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে হাত হারানো পোশাক কারখানার শ্রমিক শিল্পী আক্তার এভাবেই তুলে ধরেন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সেই দুঃসহ দিনের স্মৃতিগুলো। রানা প্লাজা ধসের আট বছর পার হয়ে গেলেও এখনো দুঃসহ সেই স্মৃতি ভুলতে পারেনি তিনি। সেই স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। ঘুমের ঘরেও পিছু ছাড়ে না সে দুঃস্বপ্ন।

শিল্পী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের তারাইল উত্তরপাড়া গ্রামের ওহিদ বিশ্বাসের স্ত্রী।

বিয়ের পর স্বামীর সংসার চালাতে কষ্ট হয়। স্বামী-সন্তান ও ননদ লতা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় যান। কিছুদিন পরে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেতনে সাভারের রানা প্লাজার ৫ম তলায় অবস্থিত ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড পোষাক কারখানায় ফিনিশিং হেলপার হিসেবে কাজ নেন। দুর্ঘটনার ৬ মাস আগে তিনি ওই পোশাক কারখানায় যোগ দিয়েছিলেন। ভবন ধসের আগের দিন তার স্বামী অসুস্থ থাকার কারণে ডিউটি করতে যাননি। প্রতি মাসের ২৪ তারিখে ওভারটাইমের বেতন শীট তৈরী করা হয়। তাই সকলের মতো শিল্পীও সে দিন অসুস্থ স্বামীকে বাসায় রেখে হাজিরা দিতে কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু সব কিছুই যেন উলোট-পালট হয়ে যায়। শিল্পী বেগম বেঁচে গেলেও ননদী লতা বেগমের লাশের সন্ধান আজও মেলেনি।

সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিল্পী আক্তার বলেন, ‘অন্যান্য দিনের মত, সেদিন অফিসে গিয়েছিলাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। বিকট শব্দ শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর ঝাঁকুনি দিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই ধসে পড়ে ভবন। আস্তে আস্তে হাতের উপর অনুভব করি ভারি কোন বস্তুর উপস্থিতি। ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসে নিঃশ্বাস। কয়েক ঘন্টা পর চাপা পড়া হাতে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকি। অন্ধকারে চারিদিকে শোনা যায় শুধু মানুষের বাঁচার আকুতি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দু’দিন পরে নাকে আসে পঁচা লাশের প্রচন্ড দূর্গন্ধ। এভাবে বিনা খাবারে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে মেশিনের নিচে ৭২ ঘন্টা চাপা পড়েছিলাম। ডান হাত মেশিনের নিচে পড়ে থেতলে যায়। তিনদিন পর উদ্ধারকর্মীরা কাছে গিয়ে বলেন হাত কেটে বের করতে হবে। প্রথমে আমি রাজি না হলেও, পরে রাজি হই। তিন দিন পর আমাকে উদ্ধার করে সাভার সেনানিবাস হাসপাতালে ভর্তি করেন উদ্ধারকর্মীরা।’

সরেজমিনে শিল্পী বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ডান হাত হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। এক হাত দিয়েই রান্না-বান্নাসহ সংসারের যাবতীয় কাজ করছেন। এখনো তার শরীরে নানা ধরণের সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত খেতে হয় ওষুধ। সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পীকে এককালীন ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিমাসে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকার মতো পান এবং অসুস্থ স্বামী ওহিদ বিশ্বাস বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান নিয়ে বসেছেন। তা দিয়েই কোন মতে চলছে শিল্পীর সংসার ও তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া এবং নিজের ওষুধ কেনা। এভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনমতে চলছে শিল্পী বেগমের সংসার।

শিল্পী বেগমের স্বামী ওহিদ বিশ্বাস (৪৫) বলেন, আমি খুব অসুস্থ, শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে কোন কাজ করতে পারি না। তারপর ছেলে মেয়ের লেখাপড়া এবং ঘরে অসুস্থ মা রয়েছে। সব মিলিয়ে কষ্টে চলতে হয়। এছাড়াও আমার স্ত্রী মাথা ও বুকে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল। সে ব্যথার জন্য এখনও ওষুধ খেতে হয়।

(এল/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test