E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুবর্ণচরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন

২০২১ জুন ২৭ ২৩:৫৭:১৮
সুবর্ণচরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন

ইমাম উদ্দিন সুমন, নোয়াখালী : দুই বছর প্রেম, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন প্রেমিক আলা উদ্দিন। সম্প্রতি বিশ্বস্থ সূত্রে কিশোরী জানতে পারেন প্রেমিক আলা উদ্দিন অন্যত্র বিয়ে করার প্রস্ততি নিচ্ছেন এমন খবর পেয়ে কোন অভিভাবক ছাড়াই নিজেই সূদূর চাঁদপুর থেকে নোয়াখালী সুবর্ণচরে এসে বিয়ের দাবিতে অনশন করেছেন কিশোরী মিতু ১৭ (ছন্দনাম)। দাবী না মানলে আত্মহত্যা করার হুমকিও দেন কিশোরী। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে  গ্রামপুলিশ মেয়েটিকে  ঐ বাড়ী থেকে উদ্ধার করে চরজব্বার থানার এসআই দিপক সহ মেয়েটিকে তার গ্রামের বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ঐ কিশোরীর বাড়ী চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্তর্ব্যপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর  গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মিজানুর রহমানের মেয়ে।

২৭ জুন (রবিবার)ঘটনাটি ঘটে সুবর্ণচর উপজেলার ৩ নং চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উরিরচর গ্রামের নুর ইসলামের বাড়ীতে।

বরিবার সকাল ৯ টা থেকে অনশন শুরু করে কিশোরী। খবরটি দ্রæত ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তেই শত শত এলাকাবাসী ভিড় করেন অভিযুক্ত প্রেমিক আলা উদ্দিনের বাড়ীতে। অভিযুক্ত প্রেমিক আলা উদ্দিন (২১) উপজেলার ৩ নং চরক্লার্ক
ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উরিরচর গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র।

কিশোরী মিতু (ছন্দনাম) অভিযোগ করে বলেন, "২০১৮ সালের শেষের দিকে আলা উদ্দিন চাঁদপুর হাজিগঞ্জের মোহাম্মদপুর গ্রামে আমার পাশের বাড়ীতে টিউবয়েল বসানোর কাজ করেন, ঐ বাড়িতে প্রাইভেট পড়ার সুবাধে আলা উদ্দিন প্রায় আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রত্যাক্ষাণ করলে আমার ধুলাভাইয়ের কাছ থেকে আমার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। দীর্ঘদিন ফোনে কথা বলার পর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় চাঁদপুরের কয়েকটি হোটেলে নিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে। এবং খাওয়ার জন্য কিছু ঔষধও কিনে দেয় প্রেমিক আলা উদ্দিন।

এক পর্যায়ে আমি তাকে বিয়ের জন্য তাগিত দিলে আলা উদ্দিন আমাকে তার বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য বলে পরে আলা উদ্দিনের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমি আমার বাবা সহ তার বাড়ীতে আসি। এসব ঘটনা শুনে আলা উদ্দিনের বাবা-মা আমাকে মেনে নিতে রাজি নয়। তখন আলা উদ্দিন তার বোনের বাড়ীতে লুকিয়ে থাকে। পরে আমার বাবা সহ ৩ নং চরক্লার্ক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করলে ছেলে লুকিয়ে থাকায় চেয়ারম্যান ছেলেকে হাজির করবে মর্মে আমাদের উভয় পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেন এবং ১ মাসের সময় নেন। পরে আমি আমার বাবাসহ চাঁদপুর হাজিগঞ্জে বাড়ীতে চলে যায়। গত ২০ জুন আমি আলা উদ্দিনের গ্রামের কয়েকজনের কাছে জানতে পারি আলা উদ্দিন তার খালাতো বোনের সাথে বিয়ের প্রস্ততি নিচ্ছেন এমন খবর পেয়ে আর দেরি করিনি। গত ২৫ জুন আমি চাঁদপুর থেকে আলা উদ্দিনের সাথে ফোনে কথা বলে সুবর্ণচর আসি, সুবর্ণচরে আসার পর আলা উদ্দিন সোনাপুর নামক স্থানে ডেকে নিয়ে তার বাড়ীতে যাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা গাড়ী ভাড়া দেয়। এর পর আমাকে একাই তার বাড়ীতে পাঠায়। পরে আমি আলা উদ্দিনের বাড়ীতে এসে অবস্থান নিলে তারা আমাকে গালমন্ধ করে বের করে দেয়। থাকার জায়গায় না থাকায় পাশ্ববর্তি বাড়ীর এক মহিলাকে খালা ডেকে তার বাড়ীতে আশ্রয় নিই। আলা উদ্দিন সাথে সাথে তার ব্যবহারিক মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।

উপায়ান্তর না দেখে আমি অনশনের সিদ্ধান্ত নিই। এবং আজ সকালে তার বাড়িতে অবস্থান করি, আলা উদ্দিনকে তার পরিবার লুকিয়ে রেখেছে। তারা যদি আলা উদ্দিনকে এনে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না করে তাহলে আমি এখানেই আত্মহত্যা করবো।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলা উদ্দিনের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দেয়ার পরেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্বব হয়নি।

অভিযুক্ত আলা উদ্দিনের বাবা বলেন, আমার ছেলের সাথে মেয়ের সম্পর্ক আছে এটা আগে জানতাম না, মেয়ে তার বাবা সহ আসার পর আমরা চেয়ারম্যানের কাছে যাই, চেয়ারম্যান ১ মাসের সময় দিয়েছে, ছেলে কোথায় আছে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, ছেলেকে এখনো বিয়ে পড়ায়নি, এখন মেয়েটি কাছ থেকে শুনেছে , আমরা জানিনা।

চরক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল বাসার বলেন, ১০/১২ দিন আগে মেয়েটি তার বাবা সহ আমার কাছে এসেছিলো, যেহেতু ছেলেটি পলাতক তাই আমি উভয় পক্ষে মুসলেকা নিয়ে ১ মাসের মধ্যে ছেলের বাবাকে হাজির হওয়ার কথা বলেছি, ছেলের বিয়ে হয়েছে এমন খবর শুনিনি।

চরজব্বার থানার এসআই দিপক বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই, তখন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে ব্যাকের বাজার নিয়ে আসে, সেখানেই মেয়ের মুখ থেকে সব শুনি। যেহেতু মেয়ের সাথে ছেলের যে ঘটনার অভিযোগ সেটি চাঁদপুর, ঘটনা যে থানার অধিনে সে থানায় অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে মেয়েটি। পরে আমরা মেয়েটিকে ঐ থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়ে তার বাড়ীতে যাওয়ার জন্য সহায়তা করি।


চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হক তরিক খন্দকার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, এবিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এস/এসপি/জুন ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test