E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাত পোহালেই জেলা পরিষদ নির্বাচন      

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা!

২০২২ অক্টোবর ১৬ ১৮:২০:০৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা!

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে মামুন নাকি শফিকুল নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, এ নিয়ে গোটা জেলায় চলছে শেষ মুহুর্তের নানা হিসাব নিকাশ। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের বিভিন্ন হিসাব নিকাশ ও কানাঘুষার মধ্যেই আগামীকাল সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২২ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জেলার ১০১টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পাঁচটি পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের প্রায় ১৪'শ ভোটার (জনপ্রতিনিধি) তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদের পরবর্তী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নির্বাচিত করবেন।  তবে ইতিমধ্যেই এ নির্বাচনে ভোট আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা, এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই শঙ্কা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে।  নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশী শক্তির প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে বলে এ শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শঙ্কার ইঙ্গিত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনটি আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা, এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচনে 'চেয়ারম্যান' পদে অবতীর্ণ হওয়া খোদ্ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম এমএসসি। 

গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন নিয়ে তাঁর এ ভীতি ও শঙ্কার কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর গলায় বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। কিন্তু ইতিমধ্যে নানা কার্যক্রমের কারণে নির্বাচনে জোর করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার আমি আশঙ্কা করছি। মূলত দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্র দখল এবং ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমার নিশ্চিত বিজয়কে ছিনিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। তাই এ অবস্থায় সোমবার (আজ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমি নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

তবে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আল মামুন সরকার বলেন, 'এ সবই তার (শফিকুল) মনগড়া সাজানো মিথ্যাচার। তিনি গতবারের মতো এবারও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এসব মিথ্যাচার করে নির্বাচনটিকে মূলত বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ নেই। কারণ, আমার জানা মতে এ পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিবেশ রয়েছে, সেটি খুবই ভালো। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সুতরাং অনর্থক মিথ্যাচার করে কোন লাভ হবেনা।’

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের সাথে কথা বললে, তিনি এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার (ডিসি) সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে এ বিষয়ে বারবার কথা বলতে চেষ্টা করেও রিটার্ণিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলা যায়নি।

উল্লেখ্য, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি শফিকুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই শফিকুল আলম গত জেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে গোটা জেলার নয়টি উপজেলা থেকে সাধারণ সদস্য পদে মোট ৪১ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠেয় আজকের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে শেষ পর্যন্ত আল মামুন সরকার বসতে যাচ্ছেন, নাকি শফিকুল ইসলামই আবার নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা হিসেব নিকাশ ও কানাঘুষা।

এ বিষয়ে জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত সুপরিচিত মুখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, ‘আর কয়েক ঘণ্টা পর রাত পোহালেই নির্বাচন। আমরা চাই যিনিই বিজয়ী হন, নির্বাচনটি যেন 'প্রশ্নবিদ্ধ' না হয়। কারণ, চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থীই যোগ্যতার মাপকাঠিতে কেউ কারও চেয়ে কম নয়। দুজনেই একাত্তরের রণাঙ্গনের সারথী। জীবন বাজি রেখে দুজনেই লড়াই করে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনে যিনিই বিজয়ী হবেন, আমরা স্বাগত জানাবো।'

খেলাঘরের এই 'স্পষ্টবাদী' খ্যাত সাংস্কৃতিক সংগঠক নীহার রঞ্জন বলেন, ‘যিনিই নির্বাচিত হবেন, তাঁর কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসির কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ চাওয়া পাওয়ার বিষয়টির দিকে সুনজর দিবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। জেলাবাসির জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো- শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি আধুনিক মানসম্মত পূর্ণাঙ্গ শিশু পার্ক নির্মাণ, জেলায় বেদখল হওয়া নদী, খাল উদ্ধার করে সৌন্দর্য বর্ধণ ও ওয়াক ওয়ে নির্মাণ, নতুন ট্রেন ও যাত্রীবান্ধব স্টেশন করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সর্বোপরি জেলায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে উচ্চ শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখা।’

(জিডি/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test