E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বড়াইগ্রামে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪, আহত ৪০ (আপডেট)

২০১৪ অক্টোবর ২০ ২২:১২:৩২ ২০১৪ অক্টোবর ২১ ০৯:২৫:০০
বড়াইগ্রামে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪, আহত ৪০ (আপডেট)

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত ও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। সোমবার বেলা ৩ টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম উপজেলার  রজুর মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে

আহতদের উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, পুলিশ সুপার বাসুদেব বনিক, বড়াইগ্রাম ইউএনও শরীফুন্নেসা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

দূর্ঘটনার পরপরই দুদিকে যানজটের সৃষ্টি হয়। দেড় ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহম্মদ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত টিম গঠন করে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত টিমের অন্যান্যরা হলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ ও বিআরটিএ নাটোরের পরিদর্শক জালিম হায়দার। এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকার অনেকেই তাদের স্বজনদের খুঁজতে এলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
নাটোর ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম মোড়ের আগে রেজুর মোড়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী গামী যাত্রীবাহী কোচ কেয়া পরিবহন (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৫৬৫৬) একই দিক থেকে আসা অপর একটি ট্রাক কে ওভারটেক করার সময় নাটোর থেকে গুরুদাসপুরগামী যাত্রীবাহী লোকাল বাস অথৈ পরিবহনের (সিলেট ব-৬৩৮৪) মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

কেয়া পরিবহনে ৯০ জন ও অথৈ পরিবহনে ৬০ জন যাত্রী ছিল বলে জানা গেছে। কেয়া পরিবহন বাসের পিছনে প্রাইভেটকার নিয়ে আসা বড়াইগ্রামের ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম নয়ন বলেন, এ সময় বিকট শব্দে বাস দুটি মুখোমুখি সংঘর্ষের পর মহাসড়কের দুই পাশের দুটি গর্তে সিটকে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়।
ঘটনার সময় রাস্তা ও আশে পাশে আহত-নিহতরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। দূর্ঘটনার শব্দে আর আহতদের আর্তচিৎকারে শত শত এলাকাবাসী উদ্ধার করতে ছুটে আসে। খবর পেয়ে নাটোর, লালপুর ও দয়ারামপুর ফায়ার সার্ভিস এবং থানা ও হাইওয়ে পুলিশ এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই গাড়ীর চালকসহ ২৯টি লাশ উদ্ধার করে ট্রাকে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আহতদের মধ্যে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ভর্তি অজ্ঞাত আরো পাঁচজন বিকেলে মারা যায়। আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল, বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বনপাড়ার বেসরকারি আমিনা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পরপরই নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান, পুলিশ সুপার বাসদেব বনিক ও বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একরামুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিক কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন (৪০), তার মেয়ে জান্নাতী (৫), একই উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আলাল উদ্দিন, সংগ্রামপুরের আব্দুর রহমানের স্ত্রী আতিকা বেগম, খোকসা গ্রামের কৃষ্ণ পদ সরকার (৫৫), ইন্দ্রাপাড়া গ্রামের জান মোহাম্মদ (৪৮), গুরুদাসপুর উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, তার এসও রেজাউল করিম, একই উপজেলার সিধুলী গ্রামের এবাদ আলী (৪৫), শরীফ উদ্দিন (৩০) লাবু, (৩৫), আলাল (৫৫), সোহরাব হোসেন, আয়নাল হক (৩৫), সতের আলী প্রামনিকের দুই ছেলে রব্বেল আলী (৪৫) ও আতাহার আলী (৫০), বৃচাপিলা গ্রামের বাবুল (৪০), আব্দুল আওয়াল (৩০), তেলটুপি গ্রামের আবু সাইদের মেয়ে মোহনা খাতুন (৫), কহির (৩৫), তোফজ্জল(৪৫), কিসমত (৪৫), আব্দুল কুদ্দুস (৬৬), আব্দুর রহমান(৫৫), রহমত (৫৫), শৈলেন তিলক (৫০), আবুল খায়ের (৬৫), আবু হানিফ(৪০), জকের আলী (৩৮) এবং অথৈ পরিবহনের চালক আলম হোসেন (৪০)। অথৈ পরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে বেশীর ভাগই সিধুলী গ্রামের ডাঃ ইয়ারুল ও আমিরুল ইসলাম জোড়া খুন মামলায় নাটোর কোর্টে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বলে জানা গেছে। দূর্ঘটনায় অথৈ পরিবহনের বেশীর ভাগ যাত্রীই মারা গেছে। নাটোর জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান সন্ধ্যায় বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে ২২টি লাশ উদ্ধার করে বনপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। একই সময়ে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ভর্তি ২০ জনের মধ্যে পাঁচজন এবং গুরুদাসপুর হাসপাতালে আরো একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জান্নাতে চলে গেল শিশু জান্নাত

নাটোরে সুস্থ হতে চিকিৎসা নিতে এসে জান্নাতে চলে গেল শিশু জান্নাত। আট বছর বয়সী জান্নাতি খাতুন বাবা জামাল উদ্দিন বড়াইগ্রামের জোনাইল ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক এবং মা জাকিয়া খাতুন একজন গৃহিনী। মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাড়িতে তার আদরের মোটেও কমতি ছিলনা।

বেশ কিছুদিন ধরে শরীর অসুস্থ থাকায় বাবা-মায়ের সাথে সকালে নাটোরে এসেছিল ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হওয়ার আসায় জান্নাত আবারও বাড়ির পথে রওনা হয়। অনেকের মতো তারাও নাটোর থেকে গুরুদাসপুরের পথে ছেড়ে যাওয়া অথৈ পরিবহনের যাত্রী হয়। কারোই হয়তো জানা ছিল না অথৈ পরিবহন তাদের পরিবারকে শোকের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বড়াইগ্রামের রিজুর মোড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় আরো ৩৪ যাত্রীর সাথে জান্নাতীকেও চলে যেতে হয় পরপারে। সাথে সহযাত্রী হয়েছেন তার বাবা জামাল উদ্দিনও। বেঁচে গেছেন অভাগী মা। প্রিয়জনদের ধারণা শিশুরা নিস্পাপ, শিশু অবস্থায় মারা গেলে তারা সব সময় জান্নাতবাসী হয়। তাই তারা কামনা করছেন তাদের প্রিয় জান্নাত চলে গেছে জান্নাতে।


২৮টি লাশ হস্তান্তর

বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি ফুয়াদ রুহানী জানান, দূর্ঘটনাস্থল থেকে ২২টি এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আহত অবস্থায় ভর্তিকৃতদের মধ্যে পরে নিহত চারজনসহ মোট ২৬জনের লাশ বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়। নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো পাঁচজন এবং বড়াইগ্রাম হাসপাতালে দুইজন মারা যান। দূর্ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪। নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক জানিয়েছেন, নিহতের স্বজনদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে লাশ গুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৮টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী লাশগুলো নাটোর ও রাজশাহী হাসপাতালে রয়েছে।


তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

নাটোরের জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান রাতে জানান, ঘটনার পরপরই যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ও বিআরটিএ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামানকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ঘটনা পরিদর্শনে যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী

নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি ভয়াবহ সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হওয়ার ঘটনা পরিদর্শন করতে রাতেই যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন। নাটোরের জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান জানান, রাত ১১টার দিকে যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।


(এমআর/এসসি/অ/অক্টোবর২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test