E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় বক্তারা

৫২ বছরেও জাতির জনকের স্বপ্নের ‘সেকুলার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা যায়নি

২০২৩ মার্চ ২৭ ১৬:২৮:৩৭
৫২ বছরেও জাতির জনকের স্বপ্নের ‘সেকুলার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা যায়নি

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনায় বক্তারা বললেন,'মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরও এ দেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার আলোকে তাঁরই স্বপ্নের সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ একটি 'সেকুলার বাংলাদেশ' আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। এটিই আমাদের ৫২ বছরের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি। আর ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ তথা জনযুদ্ধের মাধ্যমে মাত্র নয় মাসে বর্বর পাকিস্তানী হায়নাদেরকে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে 'বাংলাদেশ' নামক স্বাধীন একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করাই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ধীরে ধীরে যেই বাংলাদেশ আজ এ অঞ্চলে আঞ্চলিক নেতৃত্ব দেওয়ারও যোগ্য হয়ে উঠছে।'

২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫২ বছর পূর্তিতে ভার্চুয়াল এক ঋদ্ধ আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকজন গুণী আলোচক তাঁদের আলোচনাকালে সুস্পষ্টভাবে তথ্য উপাত্বের আলোকে দৃঢ়তার সাথে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে প্রকাশিত দর্শকনন্দিত জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল 'নবীনগরের কথা'র উদ্যোগে 'স্বাধীনতার ৫২ বছর : জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি' শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নবীনগরের কথার সম্পাদক ও দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর পরিকল্পনা ও প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় দু'ঘন্টারও বেশী সময় ধরে চলা নবীনগরের কথার নিয়মিত ফেসবুক লাইভের ২০৬ পর্বের এ আয়োজনে 'আলোচক' হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত (যুক্তরাষ্ট্র) বীর মুক্তিযোদ্ধা এম হুমায়ুন কবির, মুক্তিযুদ্ধ ধারার দৈনিক বাংলা ৭১ এর সম্পাদক কারা নির্যাতিত সাংবাদিক প্রবীর সিকদার, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. আরশাদ হোসেন আসাদ ও ভারতের নয়াদিল্লী থেকে যুক্ত হওয়া বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অনলবর্ষী সুবক্তা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সুলেখক শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য।

বক্তারা তাঁদের সারগর্ভ আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের পটুভূমি ব্যাখা করে বলেন, ১৯৭১ সালে সংঘটিত নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো প্রকৃত অর্থে একটি জনযুদ্ধ। যে যুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক চিহ্নিত রাজাকার ছাড়া এদেশের প্রায় সকল মানুষই স্বত:স্ফুর্তভাবে বঙ্গবন্ধুর আহবানে জীবন বাজি রেখে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, জাতির জনকের কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পরপর একটানা তিনবার থাকার পরও জাতির জনকের স্বপ্নের সেই কাংখিত সেকুলার বাংলাদেশটি এখনও আমরা গড়ে তুলতে পারিনি।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এ দেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বৈষম্য বেড়েছে। সাধারণ মানুষের অধিকার, ন্যায় বিচার, সুশাসন, জনগণের নিরাপত্তা বিধান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেভাবে এখনও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বক্তারা বলেন, দেশে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হলে ন্যায় বিচার ও সুশাসন সুনিশ্চিত করতে হবে।

রাজনীতিবিদদেরকে সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। কারণ আমাদের জাতির জনকের আদর্শ ও চেতনায় সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে পরিচালিত করতে হলে, এ দেশের সকল রাজনীতিবিদকে সবার আগে 'সৎ' হতে হবে। কারণ, ন্যায় বিচার ও সুশাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গেলে, সৎ রাজনীতিবিদ হওয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।

বক্তারা দুঃখ করে বলেন, বিগত ৫২ বছরে আমাদের অর্জন ও প্রাপ্তি অনেক। বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে যে চোখ ধাঁধানো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা বিশ্ববাসির কাছে আজ একটি রোল মডেল। কিন্তু সরকারের অভূতপূর্ব এসব তাক্ লাগানো কর্মযজ্ঞ ও অভূতপূর্ব উন্নয়নও যেন ন্যায় বিচার ও সুশাসনের অভাবে অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সাধারণ মানুষ আজ অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। এমনকি সাংবাদিকেরাও আজ অজানা এক আতংকে স্বাধীনভাবে সবকিছু বলতে ও লিখতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ আজ বিচার চাইতে গেলে, নেতাদের কাছে আগে যেতে হয়, তাঁদের সন্তুষ্টি করতে হয়। এমনকি, জনপ্রতিনিধিদের হুকুম ছাড়া অনেক সময় থানা পুলিশও মামলা নিতে চায়না।

বক্তারা সুস্পষ্টভাবে বলেন, দেশের প্রায় সব দলেই রাজনীতিটা যেন আর প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। রাজনীতি চলে গেছে ক্ষমতাবান ও পেশী শক্তির হাতে। সেজন্যই স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এত এত উন্নয়ন ও অর্জনের পরও, প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তিটা মিলাতে পারছেনা সাধারণ জনগণ।

বক্তারা সুস্পষ্টভাবে বলেন, তাই জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে সবার আগে এ দেশটির জন্য ৩০০ জন সোনার মানুষ দরকার! সৎ ও নিষ্ঠাবান খ্যাত মাত্র ৩০০ প্রকৃত রাজনীতিবিদই বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্নের সেই সত্যিকারের একটি মর্যাদাশীল সেকুলার বাংলাদেশ গড়তে পারবেন।

বক্তারা আলোচনার শেষের দিকে এসে হতাশার সুরে বলেন,' যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বণি 'জয় বাংলা' ও 'জাতির পিতার' স্বীকৃতির জন্য উচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষা করতে হয়, যেই দেশে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করা যাবেনা বলে 'ইনডেমিনিট এ্যাক্ট' তৈরী করা হয়, যেই দেশে ৫২ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নতুন করে করতে হয় এবং ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য সততা, নীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সমঝোতা আর আপোষ করে রাষ্ট্র চালাতে হয়, সেখানে ৫২ বছর পর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেবতো কোনভাবেই মিলানো যাবেনা।

তবে বক্তারা বলেন, এরপরও সুখের কথা হলো- নানান অসংগতি, নেতিবাচক ঘটনা ও শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বিশ্ব নেতারা স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে আজ গলা উঁচু করেই বলতে বাধ্য হচ্ছেন,'শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে।'

(জিডি/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test