E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্ণফুলীর ‘নয়াহাট সেতু’

আশ্বাস দেয়, প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পাকা সেতু দেয় না!

২০২৩ মার্চ ২৮ ১৬:৪২:৩৭
আশ্বাস দেয়, প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পাকা সেতু দেয় না!

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের লোহার তৈরি নয়াহাট সেতুটি র্দীঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও ২৬ বছরেও পাকাকরণ করা হয়নি। জানা যায়, একাধিক জনপ্রতিনিধি বিগত ২৬ বছরে এসে আর দেখে গেছেন। অথচ চরপাথরঘাটাবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেননি কেউ। ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এলজিইডি, ইউএনও এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যও বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিয়েছেন ‘নয়াহাট সেতু’ টেকসই পাকাকরণের। কিন্তু এখনো অবধি কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়নি কোন কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টায় উপজেলার চরপাথরঘাটার বাদামতলে এক উঠোন বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছিলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে কর্ণফুলীতে প্রথম কাজ হবে নয়াহাট সেতু নির্মাণ’। ওই অনুষ্ঠানে তৎকালিন থানা যুবলীগের সহ-সভাপতি ফরিদ জুয়েল ও উপজেলা সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মার্শাল মনিরের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেছিলেন চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমেদ।

এলাকার মা বোনদের উদ্দেশে এমপি প্রার্থী তখন বলেছিলেন, ‘ধানের শীষ এখন পেটের বিষ হয়ে গেছে। আপনারা ধানের শীঁষের জন্য পাগল হবেন না। আপনাদের এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমার। নো চিন্তা ডু ফুর্তি। কর্ণফুলী উপজেলা যখন করতে পেরেছি আমি আশা করি উন্নয়নও করতে পারবো।’

এর দুই বছর পর ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের নয়াহাট সেতুটি পাকা নির্মাণের দাবিতে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছিলেন চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাব নামে একটি সামাজিক সংগঠন। ওই সময় শিল্পপতি লায়ন এম এন ছাফা, মুহাম্মদ সেলিম খাঁন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফরিদ জুয়েল জানিয়েছিলেন ‘স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নয়াহাট সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয়। অনেক সময় র্দুঘটনার শিকার হতেও হয়।’

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সেলিম হক জানান, ‘বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন করে সেতু তৈরী করে দিবেন। টেনশনের কিছু নাই।’

২০২২ সালের ৫ জুন চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আজিমপাড়াস্থ ‘হল টোয়েন্টি ওয়ান’ এ সংবাদ মাধ্যমের সামনে একই ব্যক্তি নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম হক ১১ প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তাঁর ইশতেহারে জলাবদ্ধতা ও নয়াহাট সেতু দৃষ্টিনন্দন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’ যদিও তিনি নিজ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দ্বলে বিজয়ী হতে পারেননি। ফলে, নয়াহাট সেতুর দৃষ্টিনন্দনটুকুও আটকে যায়।

চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবের আহমদ বলেন, ‘সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থায় আছে। তবে অনেক সময় পরিষদ থেকে সেতুটি মেরামত করে দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদও চেষ্টা করেছেন। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের কে বলেছেন নয়াহাট সেতু পাকা নির্মাণ করে দিবেন।’

চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ বলেন, ‘উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নয়াহাট খালটির বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। খালটির বর্তমান পরিস্থিতি ও দখলদার বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং খাল খনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নয়াহাট সেতু পাকাকরণ যদিও অন্য বিভাগের।’

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘১০০ মিটারের নিচে সেতুগুলো নির্মাণ করতে ‘উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ’ শিরোনামে প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আশাকরি শিগগরই বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।’

বিগত ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তৎকালিন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ সামশুল তাবরীজ বলেছিলেন, ‘দেড় বছরে যদি একটি উপজেলা সম্ভব হয়, তবে আগামীতে একটি বালিকা স্কুল, একটি মহিলা কলেজ ও একটি নয়াহাট সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না কেন? অনেকে জায়গা জমি দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমিও কথা দিলাম, কর্ণফুলীর উন্নয়নের স্বার্থে যা যা করা দরকার সব ধরনের চেষ্টা করব।’ কিন্তু এ কথার ৬ বছরেও পাকা হয়নি সেতু।

অন্যদিকে, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। বিগত সময়ে কাজ শুরু করা যেত কিন্তু করোনার কারণে মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় নয়াহাট পাকা সেতুর কাজ শুরু হয়নি। এ সেতু দিয়ে এলাকাবাসীর কষ্ট দূর করার জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ১৯শে ডিসেম্বর চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করতে প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চরপাথরঘাটায় আসেন। সে সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হলে নয়াহাট সেতু লোহার পাটাতন দিয়ে তৈরী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র। যা পরে ১৯৯৮ সালে তৈরি শুরু করে এবং ২০০০ সালের ২৯ জানুয়ারী উদ্বোধন করেন তিনি। এর পুর্বে ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছিল কাঠের একটি সাকোঁ। যাও অবকাঠামো সংস্কার করে করে কোন মতে মানুষজন এখনো সেতু পারাপার করছেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test