E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবহেলিত চরাঞ্চল এখন পল্লী বিদ্যুতের আলোয় উদ্ভাসিত

২০২৩ এপ্রিল ০৬ ১৬:০৬:২৬
অবহেলিত চরাঞ্চল এখন পল্লী বিদ্যুতের আলোয় উদ্ভাসিত

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : প্রমত্তা যমুনাবেষ্টিত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে একসময় সন্ধ্যা হলেই নেমে আসত ভুতুরে অন্ধকার। রাতে খুবই কষ্টকর হতো সাধারণ জনগণের চলাচল। আশেপাশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এই চরাঞ্চল ছিল বরাবর উপেক্ষিত বিদ্যুতের আলোয় এখন ঝলমল করছে সেই অবহেলিত ও দুর্গম অঞ্চল। অন্ধকার নেমে আসলেই জ্বলে ওঠে পল্লী বিদ্যুতের বাতির আলো।

ইসলামপুরে ৪ ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষকে ২০২২ সালের শুরুর দিকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়। সেই সময় যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে ২টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ৮৯ কিলোমিটার এলাকায় ২ হাজার ৮ শ ৮৮টি সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এরপর থেকেই পল্লী বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে বদলে যেতে শুরু করেছে দুর্গম চরাঞ্চলের জনজীবন। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ইতিবাচক প্রসার ঘটেছে স্থানীয়দের।

এক বছরের ব্যবধানে সেই ৪ ইউনিয়নে এখন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। সরাসরি বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছেন অর্ধলক্ষ সাধারণ মানুষ। এখন সেই দুর্গম চরের প্রায় প্রতি ঘরেই রয়েছে বাতি, ফ্যান, টেলিভিশনসহ ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী।

বুধবার (৫ এপ্রিল) ওই উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার পূর্ব মণ্ডলপাড়া গ্রামের মো. হাসু মন্ডলের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, কোনোদিন চিন্তাও করি নাইখে ইনু কারেন (বিদ্যুৎ) আবো। কারেন আইলে আমি সংযোগ নেই। এহন আংগরে ৪ ঘরে ৪টা ফ্যান ও ৪টা বাত্তি জ্বলে। বিলও আহে ম্যালা কম। এছাড়া এহন আর আগের মতো কারেন যায়না। হারা দিনে দুই একবার মিলাইয়ে এক ঘন্টার মুতন কারেন থাহেনা। নইলে সবসমুয় কারেন পাই।

একই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, আগে একটা মোবাইল কেনার আগে হাজারবার চার্জ করার বিষয় নিয়ে চিন্তা করতাম। এখন আমাদের সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। এটাই হচ্ছে পরিবর্তন। এই দুর্গম চরে বিদ্যুতের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছি।”

একই ইউনিয়নের পশ্চিম মণ্ডলপাড়া এলাকার মুদি দোকানি আব্দুল মোতালেব (৩৫) বলেন, আগে বেচাবিক্রি অইত কম। গরম আইলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়তাম আমরা। রাইতে কাস্টমার একেবারেই আইতো না। বিদ্যুৎ আওয়ার পর বেচাবিক্রি বাড়ছে। এহন দিনে ৭-৮ হাজার টাকা বিক্রি করি। এই বাজারে বিদ্যুৎ আসাতে আমার দৈনিক ২-৩ হাজার টাকা বেশি বেচা হচ্ছে।”

মুদি দোকানি আব্দুল মোতালেব আরও বলেন, মণ্ডল বাজারে আরও ৫০-৬০টি দোকান আছে। কারেন আওয়ার সব দোকানেই বেচাকিনি বাড়ছে।

একই গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, আগে আমরা তেল দিয়ে সেচ পাম্প চালাইতাম। খরচ অইতো বেশি। এহন সবাই কারেন দিয়া পাম্প চালাই। তেলের দাম এহন বেশি। এই এলাকায় কারেন না থাকলে আমরা বিপদে পড়তাম।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ইসলামপুর জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আলীবর্দী খান সুজন জানান, “গত ৬মাসে ৩৩/১১ কেভি ২০ এমভিএ উপকেন্দ্রের বাস বার সম্প্রসারণ, অভার লোড ফিডার বিভাজন করতে নতুন ৪টি ফিডার নির্মানের উদ্যোগ, ১২০ ফিট বোরিং গ্রাউন্ডিং করতে ৬টি ফিডারে ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন, ১৫০টি স্থানে ২৫ কেভিএ বা এর চেয়ে বড় আকারের ট্রান্সফরমারের বোরিং গ্রাউন্ড, ক্লাইম্বিং অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ণ এবং পিডিবির নষ্ট স্টিলের ২০০টি খুঁটি পরিবর্তন, গুণগত মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে টুইস্টিং পরিহার করে কানেক্টর স্থাপন, দীর্ঘ দিনের ব্যবহৃত ডি১ সাইজের তার ডি৩ সাইজে পরিবর্তন এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে থান্ডারিং হতে লাইনকে নিরাপদ রাখতে গ্রাউন্ডিং করা হয়েছে।”

মো. আলীবর্দী খান সুজন আরও বলেন, “আমরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবসময় গ্রাহকদের সেবায় কাজ করে থাকি। তবে ইসলামপুরে একটি শ্রেণি যাদের কারণে গ্রাহকদের অনেক অর্থ অপচয় হয় এবং গ্রাহকরা অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। গ্রাহকদের কাছে শুধুমাত্র একটি অনুরোধ থাকবে যে, যে কোনো প্রয়োজনে তারা যেন ওই শ্রেণীর লোকজনের দ্বারস্থ না হয়ে সরাসরি পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন।”

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test