E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরের ঐতিহ্য রায় অথৈ মিমিক্রি করে ভাইরাল

২০২৩ আগস্ট ১৩ ১৮:৫৪:০৬
মাদারীপুরের ঐতিহ্য রায় অথৈ মিমিক্রি করে ভাইরাল

মাদারীপুর প্রতিনিধি : কখনও মীনা কার্টুনের চরিত্র, ডোরেমন, সিসিমপুর, হ্যারি পটারের হারমায়নি গ্রেঞ্জার, মোটু-পাতলু এর চা ওয়ালা কিংবা যে কোন শিল্পের গান সব কিছুই উঠে আসে ঐতিহ্য রায় অথৈ এর কণ্ঠে। তিনি ইচ্ছে করলেই যে কোন চরিত্র বা কণ্ঠ হুবহু করতে পারেন। অল্পদিনেই মিমিক্রি করে ভাইরাল তিনি। ফেসবুকে তার ফলোয়াল ৩ লাখ ৩৭ হাজার। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার শিবচরের গুয়াতলা এলাকার মেয়ে ঐতিহ্য অথৈ রায়। মা ঝর্ণা মজুমদার মাদারীপুর সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। বাবা ডা. তরুণ কুমার রায় শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাটের উপজেলা প্রাণী কর্মকর্তা। দুই ভাই বোনের মধ্যে ঐতিহ্য অথৈ বড়। ছোট ভাই ঐহিক অনাবিল রায়।

বাবা দীর্ঘ বছর মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রাণী কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী করার সুবাদে ঐতিহ্যের ছোট বেলা থেকেই মাদারীপুর শহরের কেটেছেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা শহরের ১ নং শকুনি (কলেজ রোড) এলাকার সরকারী কলেজে পিছনে বাবা-মায়ের সাথে থাকেন। পড়েন মাদারীপুর সরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে।

ছোট বেলা থেকেই মিমিক্রি করলেও ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সময় নিজেকে প্রকাশ করেন বহুগুনের অধিকারী এই ঐতিহ্য অথৈ রায়। তিনি শুধু মিমিক্রিই নয় ভালো গান, কবিতাও করেন। গানের জন্যও তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ভালো রেজাল্ট করেও বিভিন্ন বৃত্তিসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই মেধাবী ঐতিহ্য অথৈ রায়।

খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ঐতিহ্য অথৈ বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হচ্ছে ২০২১ সালে মাদারীপুর পৌরসভার আয়োজনে 'গানে গানে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা' শীর্ষক গান প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরষ্কার, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সঙ্গীত এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত, ২০১৯ ও ২০২০ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগীতায় রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সঙ্গীত, উচ্চাঙ্গ সংগীতে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম, ২০১৭ সালে রবীন্দ্র সংগীত ও উচ্চাঙ্গ সংগীতে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে উচ্চাঙ্গ সংগীতে আঞ্চলিক পর্যায়ে দ্বিতীয়, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদ, মাদারীপুর শাখা আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রসংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র সংগীতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছে এতিহ্য অথৈ। এছাড়াও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০১৯ এবং ২০২৩ এ ভাষা ও সাহিত্য (বাংলা, ইংরেজি) বিষয়ে গ্রুপ ক এবং পরবর্তীতে গ্রুপ গ এ মাদারীপুর জেলায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত লাভ করেন। এছাড়াও ঐতিহ্য অথৈকে নিয়ে বিবিসিসহ নানা মিডিয়াতেও সংবাদ প্রচার হয়েছে।

ঐতিহ্য অথৈ রায় বলেন, মাদারীপুর পৌরসভা সংলগ্ন মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মিমিক্রি শুরু করি। প্রথম দিকে আমি আমার কানিজদের কণ্ঠ নকল করতাম। মাকে শোনাতাম। মা শুনে মুগ্ধ হতেন এবং বার বার আমার কাছ থেকে শুনতে চাইতেন। এরপর স্কুলের বন্ধুদের শোনাতাম। তাদের কণ্ঠ নকল করতাম। তারা আমাকে দেখে চেষ্টা করতো। কিন্তু আমার বন্ধুদেরটা ভালো হতো না। তখন আমার মনে হতো, তাহলে মিমিক্রি বিষয়টি অনেক কঠিন। আমি ঘরে বসে বসেই নানা আত্মীয়-স্বজন আর পছন্দের কার্টুণের চরিত্র মিমিক্রি করতে থাকি। তখন শুধু আমার মা, পরিবার ও বন্ধরাই জানতেন মিমিক্রির বিষয়টি।

পরে ২০২০ সালে মহামারি করোনা ভাইরাসের সময় লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। স্কুল বন্ধ। সারা দিন বাসায় থাকতে হয়েছে। তাছাড়া অনলাইনে পড়াশুনার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়েছে। ঘরে বসে বসে অলস সময় কাটাতে থাকি। আসলে আমি পড়াশুনার পাশাপাশি নানা প্রতিযোগিতাও অংশগ্রহণ করি। লকডাউনের কারণে সব ধরণের প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনলাইনে একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। সেই গান মোটামুটি ভাবে ভাইরাল হয়। এরপর আমি ফেসবুকে ঐতিহ্য অথৈ নামে একটি পেইজ খুলি। প্রথমে মীনা কার্টুনের একটি চরিত্র মিমিক্রি করি। সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। তখন অনেকেই আমাকে মীনা বলেও ডাকতেন। এরপর বিবিসিতে একটি ইন্টারভিউ দেই। এরপর থেকে আমার পরিচিতি হতে থাকে। আমার পেইজে মিমিক্রিগুলোর ভিডিও দিতে থাকি। অল্প কদিনের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। বর্তমানে আমার ফেসবুক ফলোয়ার ৩ লাখ ৩৭ হাজার। আসলে আমি জানতামই না মিমিক্রি যে একটি শিল্প। এটাকে নিয়ে অনেকদুর যাওয়া যায়। তাছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ঔপন্যাসিক আবু ইসহাকের উপন্যাস 'ময়না কেন কয়না কথা' অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শর্টফিল্ম 'ময়না' এ নাম ভূমিকায় আমি কণ্ঠ দিয়েছি। ভবিষ্যতে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে আমার।

ঐতিহ্য অথৈ এর মা অধ্যাপিকা ঝর্ণা মজুমদার বলেন, আসলে ঐতিহ্য ঘরে বসে বসে নিজে একা একা মিমিক্রি করতো, প্রথমে আমি জানতাম না। তবে প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থা ঐতিহ্য ওর কাজিনদের কণ্ঠ মিমিক্রি করতো। তখন আমার ভালো লাগতো। পরে বিভিন্ন কার্টুনের চরিত্র মিমিক্রি করতো। আসলে ও ঘরে বসে নিজে একা একাই এতদুর এগিয়ে আসতে পেরেছে। তবে পড়াশুনার চাপ থাকায় অনেক সময় মিমিক্রি নিয়ে অত বেশি সময় দিতে পারে না।

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, যে কেউ ইচ্ছে করলেই মিমিক্রি করতে পারবেনা। আমাদের দেশে এর চর্চাও তেমন নেই। যেখানে আমাদের মাদারীপুরের মেয়ে ঐতিহ্য এই মিমিক্রি নিয়ে অনেকদুর এগিয়ে গেছে, এটা আমাদের জন্য গৌরব। ওর পরিচিতি শুধু দেশে নয় বিদেশেও ছড়িয়ে পড়–ক, এই কামনা করি।

(এএসএ/এসপি/আগস্ট ১৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test