E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘কারেন্ট জাল তৈরির মূল উৎস যেখানে তা নির্মূল করা হবে’

২০২৪ মার্চ ১১ ১৮:৪১:১৩
‘কারেন্ট জাল তৈরির মূল উৎস যেখানে তা নির্মূল করা হবে’

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : ইলিশ হলো মাছের রাজা জাটকা ধরলে হবে সাজা" এই স্লোগান নিয়ে চাঁদপুরে উদ্বোধন হলো জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ। সেই সাথে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাটকা না ধরতে ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে নৌ র‌্যালিও করা হয়। সোমবার (১১ মার্চ) চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার বড় স্টেশন মোলহেডে  জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহমান এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর।

আরও উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মইন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএইচএম কবির আহমেদ, মতলব উঃ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় হাজারও জেলেরা উপস্থিত ছিলেন।

মৎস্যজীবী প্রতিনিধির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহআলম মল্লিক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেছন, কারেন্টজাল উৎপাদন হয় বলেই জেলেরা তা ব্যবহারের সুযোগ পায়। তাই কারেন্টজালের উৎসমূল নির্মুল করতে হবে। কারেন্ট জাল উৎপাদনের খোয়ারগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে। এই কাজটি প্রশাসনকেই করতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এই অনুষ্ঠান মূলত একটি সচেতনতামূলক সামাজিক ক্যাম্পেইন। যার মূল লক্ষ্যই হলে মানুষকে জাগ্রত করা। শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে জাটকা নিধন বন্ধ করা যাবে না। মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। এটি যদি আমরা করতে পারি, তাহলে এই ভরা যৌবনের চাঁদপুর আবারো ইলিশের যৌবনে ভরে যাবে। যা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট- বাংলাদেশ গড়ার বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

মন্ত্রী আরো বলেন, “দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। অথচ অবৈধভাবে জাটকা আহরণের নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করে থাকে। জাটকা ধরার সাথে জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন জাটকা ধরলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা কারেন্ট জালসহ অবৈধ জাল ব্যবহার করে জাটকাসহ রেনুপোনা ধরে ফেলে তারা সমাজ ও দেশের শত্রু। দেশের মৎস্য সম্পদের যারা শত্রু তাদের ব্যাপারে কোন তদবীর শোনা হবে না এবং এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে বলে তিনি এ সময় জানান।

মন্ত্রী বলেন, জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর ১১ মার্চ হতে ১৭ মার্চ পর্যন্ত “জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪” উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ইলিশ হলো মাছের রাজা, জাটকা ধরলে হবে সাজা’।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সর্বসাধারণকে বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন।

মন্ত্রী আব্দুর রহমান বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইলিশসহ সকল মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদের সাথে জড়িত মৎস্য চাষী, জেলে/মৎস্যজীবী জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭১ লক্ষ মেট্রিকটনে যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১.৯৯ লক্ষ মে.টন।

দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ ভাগ ইলিশ থেকে আসে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধি ও এ সম্পদের টেকসই উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, জনবান্ধব এ সরকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নেও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তরসহ মাঠ প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি ‘ জাটকা সংরক্ষণ অভিযান’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজনীয় লোকবল, নৌযানসহ প্রয়োজনীয় রশদের স্বল্পতা এবং অভিযানে নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন করছেন।

মন্ত্রী বলেন, জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ হিসেবে বকনা বাছুর (গরু), ছাগল, ভ্যান বিতরণসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্প মেয়াদে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও উপকূল-মোহনা তীরবর্তী ৩১৭০০টি সুফলভোগী জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে জাটকা নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। জাটকা আহরণ বন্ধে অভিযান জোরদারকরণের পাশাপাশি দেশের সকলকে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ সাধারণ মানুষের জন্য আরো সহজলভ্য হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, আর এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশের সকল মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ মাছ যেমন পৌছে দিতে চাই তেমনি দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই।

এ লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে আপামর জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া যে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করছেন তার জন্য তিনি গণমাধ্যমকর্মী দের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমার এলাকার জেলেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিছু জেলে আইন ও নিয়ম মানে না। সরকার যেমন ছেলেদের প্রয়োজন তো দেখবে তেমনি জেলেরাও তাদের ভবিষ্যৎ ও বর্তমান স্বার্থে দেশের ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে আইন মানতে হবে, নিয়ম মেনে মাছ ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ইলিশের জাটকার জন্য ক্ষতিকারক কারেন্ট জালের উৎপাদন আসল ঘোরার জায়গাটা ধরতে হবে। বেয়াইনের জাল উৎপাদন করতে না পারলে এর ব্যবহার জেলেরা করতে পারবে না। তিনি চাঁদপুরে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউট করার দাবি জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর।

(ইউএইচ/এএস/মার্চ ১১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test