E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মঞ্চ নাটকে মহানবীকে কটুক্তি নিয়ে গুজব

বিভীষিকার ১২ বছর: বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুরা 

২০২৪ মার্চ ২৮ ১৮:১৯:২২
বিভীষিকার ১২ বছর: বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুরা 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : যে পত্রিকার মিথ্যা খবরে কালিগঞ্জের চাকদাহ ও ফতেপুরের ১২টি হিন্দু পরিবারসহ ১৫টি পরিবারের বসত বাড়ি, ঠাকুর ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ছাঁই করে দেওয়া হলে সেই দৃষ্টিপাত পত্রিকার সম্পাদক জিএম নূর ইসলামসহ ছয়জন আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও বহুল আলোচিত মাদক মামলার আসামী ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে ম্যানেজ করে নিম্ন আদালত থেকে তারা জামিন পেয়েছে। অথচ যারা সর্বস্ব হারিয়েছে তাদের জীবন চলছে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে। ১২টি বছর কেটে গেলে আইনি জটিলতার মার প্যাঁচে ওই আসামিদের অনেকেই রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গত মঙ্গলবার সকালে আক্ষেপের সঙ্গে এভাবেই আকুতি জানান সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী চাকদহ গ্রামের কল্যানী সরদারের ছেলে সুজিত সরদার।

তিনি জানান, ২০১২ সালের উপজেলার ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবু আল মুনসুরের ‘হুজুরে কেবালা’ গল্পের আলোকে শাহীনুর মীরের রুপান্তরিত নাটক মঞ্চস্ত হওয়ার দ্বিতীয় পর্বে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কুখ্যাত হরিণ শিকারী সাত্তার মোড়লের পরিকল্পনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদকে কটুক্তি সম্পর্কে গুজব রটিয়ে যুবলীগ নেতা নীলকণ্ঠপুর গ্রামের মামুনর রশীদ মিন্টু দর্শকদের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাটক বন্ধ করে দেয়। ২৯ মার্চ সর্বনাশা দৃষ্টিপাত পত্রিকার দক্ষিণ শ্রীপুর প্রতিনিধি এক সময়কার অস্ত্রধারি শিবির ক্যাডার ফতেপুর পাকিস্তান পাড়ার অস্ত্রধারী শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান মিথ্যা প্রতিবেদন ছেপে মৌলবাদিদের উস্কে দেয়। ৩০ মার্চ মিত রানী বালাকে বাড়ি থেকে মোটর সাইকেলে তুলে এনে পুলিশে দেয় বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান পাড়। এরপরপরই গ্রেফতার করা হয় ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজোয়ান হারুনকে। ৩১ মার্চ ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিতা রানী বালা ও লক্ষীপদ ম-লের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে প্রেট্রোল ঢেলে ভষ্মিভূত করা হয়। ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ফতেপুর সাংস্কৃতি পরিষদ, শাহীন মীর ও আকুল মীরের বাড়ি। আব্দুল হাকিমের বাড়ি ভাঙচুর শেষে বাঁশতলা বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ৩১ মার্চ ফতেপুরের সহিংসতার সূত্র ধরে পহেলা এপ্রিল একই উপজেলার চাকদাহে ঘটে যাওয়া আটটি হিন্দু পরিবারের সহিংসতার ঘটনার পূণরাবৃত্তি করতে যেয়ে পাগল প্রায় কৃষ্ণপদ সরদার বলেন, গত চার বছরেও পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি তারা। ছেলেরা চেষ্টা করে বসতঘর কোন রকমে দাঁড় করিয়েছে। যারা গৃহপরিচারিকা আনোয়ারা খাতুনের কথায় লক্ষীপদ ম-লের মেয়ে নমিতা ম-লকে জিম্মি করতে শ্যামাপদ মন্ডলের বাড়ির উঠানে শালিস বসিয়ে উস্কানি দিয়েছিলেন গণপতি গ্রামের সেই আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ কবীর কাজল। বিএনপি নেতা গোলাম মাসুদ, যুবলীগ নেদা রিয়াজুল ইসলাম খোকা, কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক এমদাদ হোসেন, সহকারি উপপরিদর্শক বসির আহম্মেদ, ও পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম সালাহ্উদ্দিন।

চাকদাহ গ্রামের কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য জানান, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিল দু’টি গ্রামে সহিংসতার ঘটনায় তৎকালিন উপপরিদর্শক ও বর্তমানে পিরোজপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সহিংসতার উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে লস্কর জায়াদুল হককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। অথচ সেই পুলিশ কর্মকর্তাই পরবর্তীতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তবে ফতেপুর ও চাকদাহের ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু চারটি পরিবার প্রধান বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এদেশ তাদের বসবাসের সহায়ক নয় উল্লেখ করে বলেন, জন্মভিটা বুঝি থাকা আর হবে না।

ফতেপুর সাংস্কৃতিক পরিষদের সদস্য ছাদিক হোসেন বলেন, দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক আবু তালেব মোল্লা তৎকালিন বার্তা সম্পাদক ডিএম কামরুল ইসলাম, দক্ষিণ শ্রীপুর প্রতিনিধি অস্ত্রধারি শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান ও যুবলীগ নেতা নীলকণ্ঠপুর গ্রামের মামুনর রশীদ মিন্টু ওই মামলায় ২০২২ সালের ২১ মার্চ দায়েরকরা অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রদ্রোহী আইনের ১২০(ক) ধারার মামলার আসামী হয়েও তারা ওই বছরের ৮ এপ্রিল ইয়াসমিন নাহারের আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পয়েছেন। বর্তমানে ও্ মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩ এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ কালীগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চস্ত ‘হুজুরে কেবালা’ গল্পের নাট্যরুপে মহানবীকে কটুক্তি করা হয়েছে মর্মে ২৯ মার্চ দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ৩০ মার্চ দুপুর একটার দিকে বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান পাড় শিক্ষক মিতা রানী বালাকে মোটর সাইকেলে করে বাড়ি থেকে তুলে এনে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রধান শিক্ষক রেজোয়ান হারুন ও ছাত্র সাঈদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন বিকেলে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি সদস্য জাফর সাঁফুইকে দিয়ে নাটক পরিচালনাকারি মীর শাহীনুর রহমানসহ সাত জনের নামে থানায় মামলা করান তৎকালিন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিন।

মহানবীকে কটুক্তি করার গুজবে কৃষ্ণনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান আনছারউদ্দিনের নেতৃত্বে দু’টি মিছিল ৩১ মার্চ সকালে ফতেপুর মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহীনুর মীর, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য আব্দুল হাকিম, শিক্ষিকা মিতা রানী বালা ও লক্ষীপদ মন্ডলের বাড়িসহ কয়েকজনের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফতেপুর সাংস্কৃতিক পরিষদ ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুণ দেওয়া হয়। লক্ষীপদ মন্ডল ও মিতা রানী বালার বাড়িতে দ্বিতীয় দফা অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দেন জাপা নেতা জুলফিকার সাঁফুই, তার ভাই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদি জাফর সাঁফুই, বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী সামছুর গাজীর ছেলে জামায়াত ক্যাডার রবিউল ইসলাম।

ফতেপুরের সহিংসতার জের ধরে ২০১২ সালের পহেলা এপ্রিল চাকদহ গ্রামের কাপালিপাড়ায় মহানবীকে কটুক্তি সংক্রান্ত আনোয়ারা খাতুনের মিথ্যাচারে ফতেপুরের লক্ষীপদ ম-লের মেয়ে নমিতা সরদারের কথার সত্যতা যাঁচাই এর নামে গণপতি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ কবীর কাজল, বিএনপি নেতা গোলাম মাসুদ, যুবলীগ নেতা রিয়াজুল ইসলাম খোকা, কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক এমদাদ হোসেন, সহকারি উপপরিদর্শক বসির আহম্মেদসহ কয়েকজনের উস্কানিতে নমিতা সরদারসহ আটটি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর করে তাদের সর্বস্ব প্রেট্রোল ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
সহিংসতার সকল ঘটনায় ৫ এপ্রিল দায়েরকৃত চারটি মামলায় ৯৪ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা দু’ হাজার ২০০ লোককে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়। কর্তব্যে অবহেলার দায়ে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হককে বাগেরহাটে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের তদন্তকারি সেলের সদস্য ও বামপন্থী নেতারা ফতেপুর ও চাকদাহের সহিংসতা কবলিত বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানগুলি পরিদর্শণ করে শিক্ষক ও ছাত্রদের গ্রেফতারের নিন্দা জানান। একইসাথে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণবাসন, দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

৮ এপ্রিল তৎকালিন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১০ এপ্রিল তৎকালিন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নির্দেশে দৃষ্টিপাত পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করা হয়। ১২ এপ্রিল অস্ত্রধারি শিবির ক্যাডার দৃষ্টিপাত পত্রিকার সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে গাজীপুর সদরের একটি ব্যাচেলার ছাত্রবাস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৫ এপ্রিল তৎকালিন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান ও কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিনকে হাইকোর্টের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ভৎর্সনা করা হয়। ঘটনার তদন্তে হাইকোর্ট একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১২ জুন অতিরিক্ত যুগ্ম সচীব একেএম জহুরুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে তদন্ত শুরু করেন। তবে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। সহিংসতার মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া ও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার নামে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পুলিশ বাণিজ্যের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আদার করে বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৩ সালের ৩০ জুলাই কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান তদন্ত শেষে জাফর সাঁফুই এর দায়েরকৃত শিক্ষক, ছাত্র ও নাট্যকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় (জিআর-৭৯/১২ কালীগঞ্জ) আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদির নারাজির আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তিনি জজ কোর্টে রিভিশন করেন। জজ কোর্টও রিভিশন খারিজ করে দেয়।

ফতেপুর ও চাকদাহের ঘটনায় দায়েরকৃত তিনটি মামলায় ২০১৩ সালের শেষের দিকে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালিন পিপি ও বর্তমানে সাংসদ অ্যাড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ আদালতে না রাজির আবেদন দাখিল করেন। এ সহিংসতার উস্কানিদাতা হিসেবে দৃষ্টিপাত পত্রিকা কর্তৃপক্ষসহ মূল হোতাদের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় (জিআর - ৮৪/১২ কালীগঞ্জ) ও সমাজ সেবক মৌতলার মীর আক্তার হোসেনের দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীটি আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই উপপরিদর্শক নকীব অয়জুল হক আদালতে (ধারা-১৫৩/২৯৫-ক/১২০-৮/৩৪ পিসি)অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলার আসামী মিজানুর রহমানের এক আবেদনের (মিস- ২৯৪৬৫/১৪) প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারক শওকত হোসেন ও বিচারক ফরিদ আহম্মেদ ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর এ মামলার বিচার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভিন্ন বেঞ্চে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পরবতীতে তিনটি মামলা জজ আদালতে চলছে ধীর গতিতে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, ২০১২ সালের ফ%তেপুর ও চাকদাহে সহিংসতাকে ঘিরে দায়েরকৃত পাঁচটি মামলার মধ্যে একটি মামলা খারিজ হয়ে গেছে। অপর চারটি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test