E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১০ বছর পর নাটোরে ২ ডিসেম্বর আ’লীগের সম্মেলন

২০১৪ নভেম্বর ২৩ ১১:০৬:০৬
১০ বছর পর নাটোরে ২ ডিসেম্বর আ’লীগের সম্মেলন

নাটোর প্রতিনিধি :দীর্ঘ ১০ বছর পর আগামী ২ ডিসেম্বর নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃনমূল থেকে সর্বস্তরে নেতা, কর্মী, সমর্থক শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে নতুন জেলা নেতৃত্বে কে আসবেন তা নিয়ে আলাপ আলোচনা, উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শহরের কানাইখালী স্টেডিয়াম মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীন নানা কোন্দলে একাধিক ভাগে বিভক্ত নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের দলের তৃনমুল নেতা কর্মীরা জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সৎ, ত্যাগী ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছে। আগামীতে নাটোর জেলা আওয়ামলীগের নেতৃত্বে কে আসছে তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ।
দলীয় সুত্রে জানা যায়,২০০৪ সালের ১৬ জুন জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা প্রবীন আইনজীবী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খান সভাপতি ও প্রয়াত অ্যাডভোকেট হানিফ আলী শেখ সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর আর কোন সম্মেলন হয়নি। ২০১১ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হানিফ আলী শেখ মারা গেলে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তবে অভ্যন্তরীন নানা কোন্দলে একাধিক ভাগে বিভক্ত নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের কার্যক্রম ছিল অনেকটাই স্থবির।

আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরলেও নেতাদের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ। তবে আওয়ামীলীগের নেতাদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও কর্মীদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ও নাটোর-২( সদর ) আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন ওপেন সিক্রেট।

গত সংসদ নির্বাচনের আগে নাটোর কানাইখালি পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে জনসভার মঞ্চে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ও সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তৎকালীন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

অনেক কারনের মধ্যে হাতাহাতির ওই ঘটনা আহাদ আলী সরকারের মন্ত্রী থাকাবস্থায় মনোনয়ন না পাওয়া ছিল অন্যতম প্রধান একটা কারন বলে নাটোরবাসী মনে করেন। অন্যদিকে নাটোর-৪ আসনের সাংসদ আব্দুল কুদ্দুসের সাথে নেতা কর্মীদের কোন্দল রয়েছে চরমে। এখনও তার নির্বাচনী এলাকা গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা সম্মেলন হয়নি। একারনে সম্মেলন বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস জানিয়েছেন,গত ১৬ নভেম্বর গুরুদাসপুর উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি দু’টি গঠিত হয়েছে। অন্যদিকে সিংড়ায় উপজেলা সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলকের সাথে সিনিয়র নেতা কর্মীদের সাথে বিরোধ চরমে।

নাটোর জেলায় নবগঠিত নলডাঙ্গা উপজেলাসহ মোট উপজেলা সাতটি। জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ৫ টি উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। নাটোর জেলায় ৪টি সংসদীয় আসন। বিগত সংসদ নির্বাচনে ৪টি আসনেই আওয়ামী প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।

নাটোর ৩ সিংড়া আসনের নির্বাচিত সাংসদ জুনাইদ আহমেদ পলক মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসাবে স্থান পেয়েছেন। তিনি জেলা সম্মেলনে কোন শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।

এদিকে নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে কে কে দাঁড়াচ্ছেন , কে হবেন সভাপতি কে হবেন সাধারন সম্পাদক তা নিয়ে আলাপ আলোচনার শেষ নেই। তবে জেলা কমিটির সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন, বর্তমান সভাপতি সাজেদুর রহমান খান, লালপুর ও বাগাতিপাড়া নিয়ে গঠিত নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য, রাকসুর সাবেক এজিএস অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ এবং বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর- ৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার এবং নাটোর জজ কোর্টির পিপি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ।

সাজেদুর রহমান খান ও আহাদ আলী সরকার ছাড়া অন্যরা ইতিমধ্যে সভাপতি পদের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। সাজেদুর রহমান খান সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া আহাদ আলী সরকার একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন।

অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে নাটোর ২ সদর আসনের সংসদ সদস্য, নাটোর জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল ও নাটোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নাটোর জেলা যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রমজান প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এরমধ্যে শফিকুল ইসলাম শিমুল দলের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন।
এদিকে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপিকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থল কানাইখালি মাঠে সম্মেলনের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাজেদুর রহমান খানকে অর্থ উপকমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে । স্থানীয় একটি সুত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে কমিটি গঠন নিয়ে বিশেষ করে সভাপতি পদ নিয়ে গোলযোগের আশংকা করছেন অনেকে।

তবে জেলা আওয়ামীলীগ উপ-দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস দলের মধ্যে কোন ধরনের কোন্দল নেই দাবী করে জানান, সম্মেলন শান্তিপূর্ন ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে নির্দিষ্ট সংখ্যক কাউন্সিলর ও ডেলিগেটর সহ দলের প্রায় ২৫ হাজার নেতা কর্মী উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি জানান।

সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক এমপি,সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ মাহমুদ স্বপন এমপি,খালেদ মাহমুদ চৌধুরী,রাজশাহী সিটি করপরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সহ কেন্দ্রিয় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।



(এমআর/এসসি/নভেম্বর২৩,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test