E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় কালামের কবরের পাশে মায়ের আকুতি

২০১৫ এপ্রিল ১৩ ১৩:৪৭:৪৬
আগৈলঝাড়ায় কালামের কবরের পাশে মায়ের আকুতি

বরিশাল প্রতিনিধি : মোরা কাম কইগা পেট চালাই, মোরা এমপি মন্ত্রী হমুনা, মোরা কোন রাজনীতি করিনা।  ক্ষমতার লাইগ্যা মোগো কেন পরান যাইবে? না খাইয়া থাহি, কই কেউ তো দেহেনা, টাহার লাইগ্যা মোর বাজানের(ছেলের) মিলাদ পরাইতে পারি না। ওআল্লারে তুমি একি করলা ? মোগো পরিবারের আয় করবার মানুষটারে হারাইয়া মোরা এহন মানবেতর জীবন যাপন করছি।

ঢাকায় পেট্রোল বোমায় নিহত আগৈলঝাড়ার আবুল কালাম ওরফে কালুর বাড়িতে সোমবার সকালে গেলে দেখা নিহতের কবরের পাশে এভাবেই কেঁদে বলছিল নিহতের মা সাফিযা বেগম (৬৫)। ২০ দলীয় জোটের অবরোধ হরতাল চলাকালে গত ৯ জানুয়ারি ঢাকায় পেট্রোল বোমায় নিহত হয় প্রাইভেটকার চালক আবুল কালাম। কালামের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি কোন সাহায্য সহযোগীতা পাননি তারা।
নিহতের পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের মৃত আব্দুল হক হাওলাদারের ছেলে প্রাইভেটকার চালক আবুল কালাম ওরফে কালুর আয় দিয়ে তাদের ৭ সদস্যের সংসার চলত। গত ৯ জানুয়ারি কাজের সময় রাজধানীর মগবাজারের আগোরা শপিং কমপেক্সের সম্মুখে দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সাত দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ১৫ জানুয়ারি আবুল কালাম মৃত্যু বরণ করে। এ ঘটনায় রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এস, আই) এমদাদুল হক বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহতের মা সাফিয়া বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেই দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। টাকার অভাবে সন্তানদের লেহাপড়া করাতে পারেননি। মানুষের সহায়তায় ছেলে আবুল কালাম ঢাকায় গিয়ে ড্রাইভিং শিখে চাকুরী নেয়। বিলাপ করে তিনি বলেন, “মোর বাপজানে চাকুরী নেওয়ার পর কইতো মা তোমার আর কষ্ট করতে হইবো না। মুই কাম কইররা তোমার কষ্ট দুর করমু। মোর বাবায় মোরে সুখের সপ্ন দেখাইতো, ও আল্লাহ মুই এ্যাহন কি নিয়া বাঁচমু ”। পরিবারের অন্যান্যরা জানান, আবুল কালাম নিহত হওয়ার পরে তার দাফনের জন্য মাত্র ৪ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। তারা জানান, টাকার অভাবে চেহলাম ও দোয়া অনুষ্ঠান করতে পারেননি।
রাংতা গ্রামের আব্দুর রশিদ হাওলাদার (৭০), সেফালী বেগম (৪৫), মিঠু হোসেন(৪২) জানান, কালাম নিহত হওযার পরে অর্থের অভাবে ছেলের জন্য চেহলাম বা দোয়া করতে পারেনি নিহতের পরিবার। বর্তমানে প্রায়ই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে পরিবারটির। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে রাজনীতি মাকে সন্তান হারা করে, যে রাজনীতি স্ত্রীকে স্বামী হারা করে, যে রাজনীতি পুত্রকে পিতা হারা করে সেই রাজনীতি দেশের মাইনুষের কি কাজে লাগবে”। রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদ ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলাউদ্দিন জানান, অসহায় পরিবারে পাশে কেইই দাড়ায়নি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের মা সাফিযা বেগম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন কিন্তু এখনো কোন সাড়া মিলেনি।
(টিবি/পিবি/ এপ্রিল ১৩,২০১৫)



পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test