E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে ৩৮ মাস অচল সিসমোগ্রাফ

২০১৫ এপ্রিল ২৯ ১৩:৫৪:৪০
বরিশালে ৩৮ মাস অচল সিসমোগ্রাফ

বরিশাল প্রতিনিধি : দীর্ঘ ৩৮ মাসেও মাত্র একটি সেন্সরের অভাবে সচল করা যায়নি দক্ষিণাঞ্চলের ভূমিকম্পনের মাত্রা নির্ণয়কারী একমাত্র পরিমাপক যন্ত্র সিসমোগ্রাফ। ফলে সম্পূর্ণ অচল অবস্থায় পরে রয়েছে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) স্থাপিত ভূমিকম্পন পরিমাপক এই যন্ত্রটি। যে কারণে গত ২৫ ও ২৬ এপ্রিল এ অঞ্চলের উপর দিয়ে হয়ে যাওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পনের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সম্পাদিত একটি চুক্তির আওতায় ভূমিকম্পনের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের এ মেশিনটি স্থাপন করা হয়।
পবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সিসমোগ্রাফি মেশিনের তদারকির দায়িত্বে থাকা ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনিবুর রহমান জানান, ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ মেশিনটি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর সিসমোগ্রাফ মেশিন দিয়ে দুটি ভূমিকম্পনের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মেশিনটিতে সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে একাডেমীক ভবনে আন্ডার গ্রাউন্ড চেম্বারের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে সংযোগসহ ভূ-কম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি চালু করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি চালুর এক বছর যেতে না যেতেই মেশিনের সেন্সর নষ্ট হয়ে যায়। সেই থেকে গত ৩৮মাস যাবত যন্ত্রটি অকেজো হয়ে পরে রয়েছে। অকেজো হয়ে পরে থাকা সিসমোগ্রাফ যন্ত্রটি চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সাখাওয়াত হোসেন ও প্রফেসর আ.ক.ম মোস্তফা জামান একাধিকবার ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আকতারের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন সুফল মেলেনি।
প্রসংগতঃ যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ভূমিকম্পনের মাত্রা নির্ণয়ে সিসমোগ্রাফি যন্ত্র স্থাপনের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আকতার। চুক্তির আওতায় অনুদান হিসেবে পাওয়া একটি সিসমোগ্রাফি মেশিন ২০০৩ সালে প্রথম ঢাবি ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাপ্তাইয়ে স্থাপন করা হয়েছে।
মুনিবুর রহমান আরও বলেন, ভূমিকম্পের চারটি স্টেজ। প্রাইমারি ওয়েভ, সেকেন্ডারি ওয়েভ, সার্ফেস ওয়েভ এবং রিলে ওয়েভ। চারটি ওয়েভ একসাথে বের হলেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ পাওয়ার এক থেকে দুই মিনিট আগে সতকর্ বার্তা পাওয়া সম্ভব। যদি ২৪ ঘণ্টা এ মেশিন মনিটর করা হয় তাহলে জনগণকে ভূমিকম্পন সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি জান মালের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। পবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, সিসমোগ্রাফি মেশিনটি তিন ভাগে বিভক্ত। এর সেন্সর সেন্স করে, রিসিভার রিসিভ করে, আর সফটওয়্যারের সাহায্যে কম্পিউটার মনিটরের মাত্রা এবং দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। এছাড়া এ মেশিনের অংশ বিশেষ (প্লেট) মাটির নিচে থাকে। ওই প্লেটের সাহায্যে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ ভূমির অবস্থান ওপরে উঠছে, নাকি নিচে নামছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বরিশাল বিভাগের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা জানান, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি দীর্ঘ ৩৮ মাস ধরে অচল থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে সিসমোগ্রাফি যন্ত্রটি সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন তারা।
(টিবি/পিবি/ এপ্রিল ২৯,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test