E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদীতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে মিছিল ও বিক্ষোভ

২০১৫ আগস্ট ০৬ ১৭:৫১:৪৮
ঈশ্বরদীতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে মিছিল ও বিক্ষোভ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রে শ্রমিকরা লাঠি-সোটা নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ৪/৫ দিন আগে নোটিশ দেয়ার নিয়ম থাকলেও নোটিশ না দিয়েই বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় আছে ৩ বছর মাষ্টাররোলে চাকরি করলে তাদের স্থায়ীকরণের বিধান রয়েছে। অথচ অনেকেই ২০ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করলেও চাকরি স্থায়ী করা তো দূরের কথা- ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের আগে শ্রমিক নেতাদের সাথে কোন আলোচনাও করা হয়নি বলে জানান তারা।

কুষ্টিয়ার ফরিদা খাতুন ২০ বছর ধরে মাষ্টার রোলে ডাল গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করছেন। হঠাৎ করেই গত ১লা আগষ্টে তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। স্বামী পরিত্যক্তা ফরিদার একমাত্র মেয়ে পাবনা এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।

ফরিদা বললেন, বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি, চাকরি না থাকলে এখন কিভাবে চলবে। অরনকোলা গ্রামের বিধবা মনোয়ারা অনিয়মিত নারী শ্রমিক হিসেবে ৮ বছর ধরে মাষ্টাররোলে চাকরি করছেন। ৩ বছর পর চাকরি স্থায়ী হবে এজন্য ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

ছাঁটাই হওয়ায় তিনি ৩ ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। সুলতান গিয়াস ও আব্দুল আলীম ২০ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করলেও চাকরি স্থায়ী হয়নি। গত ১লা আগষ্ট শনিবার ছুটির দিনে নোটিশ বোর্ডে নোটিশ টাঙ্গিয়ে পরিচালক শোয়েব হাসান এভাবে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে মোট ৮৬ জন মৌসুমি, অনিয়মিতম ও অফিস মাষ্টার রোলের শ্রমিকদেরকে এভাবে গণ ছাঁটাই করেছেন। এমনকি মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন কে ছাটাই করে মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছেন।

শ্রমিক সমিতির সভাপতি সকিম উদ্দিন জানান, ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম মন্ডলের স্বাক্ষরে এসব অনিয়মিত ও মাষ্টাররোলে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এরা কাজ করবে বলে নিয়োগ পত্রে উল্লেখ থাকলেও তারই অধ:স্তন কর্মকর্তা কিভাবে এই ৮৬ জনকে ছাঁটাই করল এই নিয়ে গবেষনা কেন্দ্রের অভ্যন্তরে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এসময় অরনকোলা গ্রামের তারেক বিশ্বাস, চরমিরকামারি গ্রামের আইয়ুব আলী, সিরাজগঞ্জের রুহুল আমিন, চরমিরকামারী গ্রামের রফিকুল ইসলাম,বেদৃনদিয়ার আলাউদ্দিনসহ প্রায় অধিকাংশ শ্রমিক জানান, চাকরি নেয়ার সময় থেকে তিন বছর পার হলে চাকুরী স্থায়ী হবে এই কথা শুনে ও বিশ্বাস করে তাদের প্রত্যেকেই পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত টাকা হেড অফিসের প্রশাসনকে দিয়ে ঢাকায় গিয়ে তাদের চাকুরী দেওয়া হয়েছে। যার সাথে স্থানীয় ডাল গবেষনা কেন্দ্রের পূর্ববর্তী পরিচালক ও বর্তমান পরিচালক শোয়েব হাসানও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে শ্রমিকরা জানান।

শ্রমিকরা আরো বলেন, স্থানীয় ফান্ডে টাকা নেই এমন খোড়া অজুহাতে ইতিপূর্বেও পরিচালক শোয়েব হাসান শ্রমিক ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ উক্ত কর্মকর্তাকে ছাঁটাই না করার জন্য বলেন। তিনি মন্ত্রীর আদেশ অমান্য করে শ্রমিক ছাঁটাই করে ঈশ্বরদী ত্যাগ করেছেন।

এ ব্যাপরে বৃহস্পতিবার পরিচালক শোয়েব হাসানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইত্তেফাককে জানান, ছাঁটাই কথাটি ঠিক নয়। শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়নি। ফান্ডে টাকা না থাকায় সাময়িকভাবে তাদের কাজ বন্ধ করা হয়েছে। টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থার জন্যই আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। টাকা পেলে কাল থেকেই তারা কাজ করতে পারবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, স্বাভাবিকভাবে এসময়টা মাঠে কোন ফসল থাকে না এবং কাজও থাকে না বলে ডিজি অফিসের কোন বরাদ্দ নেই। চাকরি স্থায়ীকরণ প্রসংগে তিনি জানান, এই কেন্দ্রে দুটি কোটায় ৮৫টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এখানে কোন পদ খালি নেই। কেউ অবসরে গেলে তখন স্থায়ী করা যাবে বলে তিনি জানান।

ফান্ড প্রসংগে শ্রমিকরা জানান, এই কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক জমি চাষাবাদ ছাড়াই পড়ে আছে। ১৯৮১ সালে এখানে ১১৬জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। সেসময় বছরে ১/২ বার ফসল হতো। এখন ১৫০ জন শ্রমিক কর্মরত। বছরে ৩ টি ফসল হয়। প্রতিষ্ঠানের পতিত জমিতে ফসল ছাড়াও সবজি ও ফলের বাগান, বিশাল জলাশয়ে নিয়মিত মাছ চাষ করলে ফান্ড সংকট তো হবেই না বরং উদ্বৃত্ত থাকবে বলে তারা জানান।

(এসকেকে/এসএফকে/আগস্ট ০৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test