E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভাঙ্গন ঠেকাতে পদ্মা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি

২০১৫ আগস্ট ১৬ ১৮:৪৯:১৫
ভাঙ্গন ঠেকাতে পদ্মা নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণের দাবি ঈশ্বরদী বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। ভঙ্গনের করাল গ্রাসে ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বাড়ি-ঘর, ফসলের জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ ও মন্দির।

এলাকাবাসীর দাবি বাস্তবায়নে বাঁধ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। এখন বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি প্রবাহ অনেক বেশী। এই পানি কমার সাথে সাথেই আবারো শুরু হবে নদী ভাঙ্গণ। তাই সাঁড়া ইউনিয়নবাসী চরম শংকিত।

ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়নের কোমরপুর হতে সাঁড়া ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার তিলকপুর হতে গৌরিপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণের জন্য বাঁধের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের গতি দেখে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কি-না। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২’শ ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। চলতি বছরের ২৫শে মার্চ ভূমিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ এমপি আনুষ্ঠানিক ভাবে বাঁম তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, পদ্মা নদীর বাম তীরের ভাঙ্গন হতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কোমরপুর হতে সাঁড়া-ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার তিলকপুর হতে গৌরিপুর পর্যন্ত এলাকার মানুষের জান-মাল রক্ষা করা। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন হতে ‘পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প’ এর পদ্মা নদীর বাম তীর বন্যা বাঁধের অংশ রক্ষা হলে ব্যাপক এলাকার কৃষি জমি ও মূল্যবান স্থাপনা রক্ষা পাবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন পূর্বক ৮’শ ৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার বিপুল পরিমাণ সরকারি-বেসরকারি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষা করা। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ বারংবার জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করায় প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৩ হতে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ।

সংশোধিত ডিপিপি অনুসারে প্রকল্পের ভৌত কাজের মোট ২০টি প্যাকেজের মধ্যে বর্তমানে ৭টি প্যাকেজের কাজ চলমান আছে। চলতি বছরের ৯ই মার্চ ৫টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করে ৯ই এপ্রিল তারিখে গ্রহণ করা হয়। এবং আরও ৮টি প্যাকেজের দরপত্র দ্রুত আহ্বান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ বলছেন প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত আছে।

অপরদিকে প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। পদ্মা নদীর তীরে বসবাসরত এলাকাবাসীরা জানান, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে অন্ততঃ ১০ বার ঘরের স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। এ বছরও যদি বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হয় তবে আবারও হয়ত ঘরের স্থান পরিবর্তন করতে হবে।

ভাঙ্গন কবলিত ভূক্তভোগীরা বলেন, এ জনপদে একসময় থানা ছিল, রেলওয়ে স্টেশন ছিল, নদী বন্দর ছিল, ইংরেজ সাহেবদের হাট ছিল এবং পাবলিকদের হাট ছিল। অথচ কালের বিবর্তনে প্রমত্তা পদ্মার দংশনে এই জনপদটি বিলীন হয়ে যায়। এখানকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ নিঃস্ব, অসহায় ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, রাজশাহীর বোয়ালিয়া কাদিরগঞ্জের মেসার্স এ এস কনস্ট্রাকসন বাঁধ নির্মাণের কাজ পেয়েছে। বুধবার সরেজমিনে সাঁড়া পদ্মা নদীর বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আড়মবাড়িয়া স্কুলের সামনের অংশ বাদে প্রকল্প এলাকা জুড়েই বাঁধের কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। কোমপুর থেকে লালপুরের গৌরিপুর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ কাজেরও তেমন অগ্রগতি নেই। ব্লক নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ডাম্পিং ও ড্রেজিং এর কাজ চলছে। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে চলতি বছরের মধ্যে সম্পন্ন না হওয়ার আশংকা রয়েছে।

এদিকে কাজের ধীরগতির কারণে নদী তীরবর্তি এলাকার মানুষ আবারো ভাঙ্গণের আশংকায় মধ্যে শঙ্কাগ্রস্থ। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারলে নির্মাণাধীন প্রকল্পটি হতে সুফল হয়ত তারা পাবেন না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় জনস্বার্থ রক্ষার্থে সরকারের গৃহীত এই বৃহৎ প্রকল্পটি’র উদ্দেশ্য ব্যহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

তারা বলছেন, এ যাবত ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা ডাম্পিং কাজ শেষ হয়েছে। আরো ৩০ হাজার বস্তার কাজ বর্ষা শেষ হলে করা হবে। লোয়ার ডাম্পিং করে তারপর পিসি ব্লক এর কাজ করা হবে।

এদিকে নদীতে পানি কমে যাওয়ার পরই আবারো নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন এলাকার অভিজ্ঞ ও বয়স্ক মানুষ।

(এসকেকে/এএস/আগস্ট ১৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test