সুন্দরবনের দুবলারচরে শুরু হয়েছে ৩দিনের রাস উৎসব

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব মঙ্গলবার সকালে অস্থায়ী মন্দিরে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার আলোরকোলে দুবরার চরের সমুদ্রে দিনের প্রধম জোয়ারের পানিতে হাজার-হাজার সনাতন হিন্দু নর-নারীরা তাদের পাপ মোচনের প্রত্যাশায় পূণ্যস্নানে আংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে রাস উৎসব শেষ হবে।

৬ শত বছরের অধিককাল ধরে দরবেশ গাজী-কালুর পূণ্যভূমি সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূণ্যস্নান প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে। সুন্দরবন বিভাগের মতে এবছর হবে ১৩২তম রাস উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষ্যে শনিবার থেকে গোটা সুন্দরবনে ১০ দিনের রেড এলার্ড জারি করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, তিথী নক্ষত্রের কারনে এ বছর তিন দিনের রাস উৎসব মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম জোয়ারে পূর্ণ¯পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। সুন্দরবনের ৮টি নৌ রুট দিয়ে লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলার যোগে আলোরকোলে এসেছে র্পূণার্থী ও দর্শনার্থী। তাদেরকে সুন্দরবন বিভাগের নির্ধারন করে দেয়া ১৩টি বন অফিস থেকে জন প্রতি ৫০ টাকা রাজস্ব প্রদান করে রাস মেলায় যেতে অনুমতিপত্র নিতে হয়েছে। র্পূণার্থী ও দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের ২০টি ভ্রম্যমান টিমসহ এবার র‌্যাব, কোষ্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের নিয়মিত টহল চলছে। রয়েছে তিন জন ডাক্তারসহ ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম। এছাড়া, দর্শনার্থীর অগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য সাথে নেয়া, রান্নার কাঠ আহরণ ও হাঁস- মুরগীর মাংস ছাড়া সব ধরনের মাংস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাস মেলায় কোন ভাবেই যেন হরিণ শিকার, ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগের জারি করা এসব নিষেদ্ধাজ্ঞা অমান্যকারিদের জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা হবে তিনি জানান।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন জানান, বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে মঙ্গলবার সকাল থেকে ১৩২তম শুরু হবে রাস উৎসব। সুন্দরবন বিভাগের হিসেবে এতথ্যটি পাওয়া গেলেও ঐতিহাসিকদের মতে, ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব থেকেই সুন্দরবনে রাস উৎসব হয়ে আসছে। প্রতি বছর বাংলা কার্ত্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের রাস পূর্ণিমার তিথিতে এই রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা রাস পূর্ণিমার পর দিন প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের লোনা পানিতে পূর্ণস্নান করে তাদের পাপ মোচন হবে,Ñএমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিয়েছে। কালের বির্বত্তণে জেলে ও বনজীবীসহ অন্যান্য ধর্মলম্বিরাও সুন্দরবনের দরবেশ গাজী-কালুর স্বরণের মানত দিতে এই উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। হাজার-হাজার মানুসের পদচারণায় এই রাস উৎসব মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবে তীর্থ যাত্রী, ইকোটুরিস্ট ও দর্শনার্থীদের ট্যুরিষ্টলঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে এসে থাকে। এবারও এসেছে অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। এই রাস উৎসবের সময় তিনদিনব্যাপী মেলায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ী। এ ছাড়া, নানা ধরনের সাং®কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আযোজন করা হয়েছে।
সুন্দরবনের আলোরকোলে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন ধর্মের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার ইকো ট্যুরিষ্ট (প্রতিবেশ পর্যটক) ঐতিহ্যবাহী এই রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। এ উপলক্ষ্যে আলোরকোলে বসে দিন দিনব্যাপী মেলা। এই উৎসবকে সামনে রেখে দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে চোরা শিকারীর দল সুন্দরবনের হরিণ শিকারে মেতে ওঠে।



(একে/এসসি/নবেম্বর২৪,২০১৫)