E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাটি ও কলা গাছের ভাষা এবং ভালবাসা স্মারক

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২১ ২০:৫৬:০৮



মাটি ও কলা গাছের ভাষা এবং ভালবাসা স্মারক

পাথরঘাটা(বরগুনা)প্রতিনিধি :রাব্বী, নিয়াজ,মূসা ও নাঈম ওরা প্রাথমিক থেকে  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে  উঠেছে এবছর। ক্লাশ শুরুর হয়েছে মাত্র কদিন আগে। এর মধ্যে এসে গেল ভাষার মাস। প্রাণে তাদের  শৈশবের উচ্ছলতা, নিজে কিছু করে দেখানোর অদম্য উৎসাহ। তাই গ্রামের আরো ৪/৫ জন মিলে যুক্তি পরামর্শ করে শুরু করল শহীদ স্মরনে দিনটি পালন করবে। শুরু হয়ে গেল কাজ। স্থির হল,তাদের বাড়ির শষ্য খেতে এখন কোন ফসল নেই,সেখানেই হবে শহীদ মিনার। নির্মাণ করবে নিজ হাতে নিজ শ্রম দিয়ে।

নাঈম ওদের সাত জনের মধ্যে বয়সে কিছুটা বড় কিন্তু সেও মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র । সবার বাড়ি পাথরঘাটা পৌর সভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বড়ইতলা গ্রামে। দল বেধে ওরা মাটি কেটে মিনারের বেদী তৈরী করল। সেখানে তাদের বাগান থেকে কেটে পোতাঁ হল কলা গাছ। বেদী ও কলা গাছ ঢেকে দেয়া হয় পুরোণ সংবাাদপত্র ও রংবেরং এর কাগজ দিয়ে। লেখা হয় দিবসের তাৎপর্যপূর্ণ নাম। মৌসুমী ফুলের আক্রা তবু সংগ্রহ করা হয় প্রতিবেশীর বাগান থেকে এবং কয়েকটি ক্রয় করে। কাঠেরগুড়িতে রঙ মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় চারিদিকে। বহু রঙা কাাঠের গুড়ি দিয়ে অক্ষর বানিয়ে মাটিতে লেখা হয় প্রান ছুয়ে যাওয়া মাতৃভাষায় আমর একুশের কথা। মিনারের চারিদিকে বাঁেশর খুটি পুঁতে তাতে চিকন রশি বেধে একটি সীমানা নির্ধারণ করা হয়। প্রধান সড়ক থেকে প্রবেশের জন্য একটি গেট তৈরী করা হয়। প্রত্যুষে আসতে থাকে শিশু, কিশোর,যুবক এবং প্রোঢ় গ্রাম বাসী। প্রত্যেকেই হৃষ্টচিত্তে উৎসাহ দিয়ে যায়। বাহবা দিতে আসে যারা কিছু চাদাঁ দিয়ে সাহায্য করেছিল ক‘দিন আগে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল বড়ইতলা গ্রামের শহীদ মিনার তৈরীর অন্যতম উদ্যোক্তা পাথরঘাটা কেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র মো. মূসাকে দেখা গেল মিনারের পাশে একটি সামিয়ানা তার পাশে একটি বড় শব্দ (সাউন্ডবক্স) ঠিকঠাক করছে, বাজছে দেশত্ব বোধক গান। হেসে হেসে আমন্ত্রন দিলো, বিকালে গান শুনতে আসবেন। শহীদ দিবসে গান কেন ? এমন প্রশ্নের জবাব,‘ ৫২ এর শহীদ দিবস কিন্তু এখন আর্ন্তজাতিক ভাষা দিবস। আজ আনন্দের দিন। শহীদদের রক্তে আমরা বিশ্ব জয় করেছি।

এমন দৃশ্য আজ পাথরঘাটা উপজেলার সাতটি ই্উনিয়ন ও পৌর সভার বিভিন্ন মহল্লায়। এর উদ্যোক্তা সবাই শিশু কিশোর ছেলে মেয়ে। সারা দিন চলছে । আনুমানিক এর সংখ্যা হবে প্রায় সাড়ে তিনশ পৃথক শহীদ মিনার।

উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবশ্য সরকারি ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। পাথরঘাটা উপজেলায় ১৪৭টি প্রাথমিক,৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্্রাসা ও ৫টি উচ্চমাধ্যমিক এবং ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবশ্য শহীদ মিনার নেই। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হায়দার হোসেন বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা দিবস পালনের জন্য বলা হলে ও মিনার নির্মান বা এ জন্য উদ্যোগের আর্থিক সহায়তা নেই বললে চলে।

এব্যাপরে পাথরঘাটার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নিবার্হী আফিসার মো, ইকবাল হোসেন বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বর্তমান প্রজন্মের এ শিশু কিশোরগণ। শিশুদের চেতনায় ধারণ করা ‘একুশ’ অবশ্যই অর্জনের আনন্দ তারা উপভোগ করবে । শেখাবে আমাদের আধমরাদের।




(এমএসআইকে/এস/ফেব্রুয়ারি২১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test