E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মংলা বন্দরে এবার পিপিপি’র মাধ্যমে নির্মিত হবে দুটি জেটি

২০১৬ এপ্রিল ০৪ ১২:৫৫:৩৬
মংলা বন্দরে এবার পিপিপি’র মাধ্যমে নির্মিত হবে দুটি জেটি

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : মংলা সমুদ্র বন্দরে (মবক) এবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতেদুটি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মবকের ৩ ও ৪ নম্বর নামের এই দুটি জেটি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ দশমিক ৭৫ মিলয়ন ডলার।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জিএমএপিএস-পাওয়ার পিসি কনসোর্টিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে মংলা বন্দরের উপর কয়েকগুণ বেশী চাপ সামাল দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে বন্দরটির কর্মক্ষমতা বাড়াতেই এই জেটি নির্মাণ করা হবে। পিপিপি’র এই প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য এখন অর্থনৈতিক বিষয় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে রয়েছে। খুব সহসাই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছে মবক।

মংলা বন্দরের কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় চার দশক আগে একটি বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা সমুদ্র বন্দরের এই জেটি দু’টি উন্নয়ন শুরু করলেও পরে তা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর বর্তমান সরকার ফের জেটি দুটির কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে মংলা বন্দরের উপর কয়েকগুণ বেশী চাপ সামাল দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে বন্দরটির কর্মক্ষমতা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পিপিপি’র ভিত্তিতে এই উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় রিকোয়েস্ট ফর কোয়লিফিকেশন (আরএফকিউ) আহ্বান করলে তিনটি প্রতিষ্ঠান এতে সাড়া দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (ইউইসিএল) কনসোর্টিয়াম অব সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড অ্যান্ড সামিট পাওয়ার লিমিটেড (এসএপিএল-এপিএল) এবং জিএমএপিএস-পাওয়ার পিসি কনসোর্টিয়াম। এরমধ্যে কারিগরি যাচাই কমিটি (টিইসি) জিএমএপিএস-পাওয়ার পিসি কনসোর্টিয়মকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কনসেশন অ্যাগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করে।

মবক সূত্র আরো জানায়, আলোচিত এই পিপিপি প্রকল্পের হ্রাসকৃত সময় ধরা হয়েছে ৩০ বছর। এই সময়ের মধ্যে ২ বছর নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের জাহাজের আগমনের হার ৫০ ভাগ বাড়বে। এর ফলে প্রথম পাঁচ বছর পিপিপি প্রকল্পের জেটি পাবে ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ আর বন্দরের জেটি পাবে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। দ্বিতীয় পাঁচ বছর প্রকল্পের জেটি পাবে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বন্দরের জেটি পাবে ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ। পরের ১৮ বছর প্রকল্পের জেটি পাবে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বন্দরের জেটি পাবে ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া ফিল্ড রয়ালিটি হিসেবে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রথম বছর পাবে দুই লাখ ডলার যা পরবর্তী বছরগুলোতে পূর্ববর্তী বছরগুলো থেকে দুই শতাংশ হারে বাড়তে থাকবে। ভ্যারিয়েবল রয়ালিটি হিসেবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনার প্রতি দুই ডলার এবং প্রতি টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আরো পাবে ২০ সেন্ট করে।

মংলা বন্দরের চীফ প্লানিং অফিসার মো. জহিরুল হক জানান, পিপিপি’র মাধ্যমে মবকের ৩ ও ৪ নম্বর নামের এই দুটি জেটি উন্নয়ন প্রকল্পটি মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর কাজ শেষ করতে দুবছর সময় লাগবে। পিপিপি’র এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে মংলা বন্দরের উপর কয়েকগুণ বেশী চাপ সামাল দেয়া সহজতর হবে। বন্দর উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের আমলে ৫শ’ ৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প ও ৪টি উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন কাজ হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যে ৫টি উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৪টি উন্নয়ন কর্মসূচীর কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। বাকী ৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৮৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০টি আধুনিক কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২৬০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আউটার বার ড্রেজিং ও ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আনুসাঙ্গিক সুবিধাসহ একটি কাটার সেকশন ড্রজার ক্রয় প্রকল্পসহ বৈদেশিক অর্থায়ানে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের নতুন কন্টেইনার টার্মিনাল, কন্টেইনার ইয়ার্ড, আধুনিক স্কানার, বন্দর এলাকার সব সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের ৮টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

মবকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের চাপ ক্রমান্নয়ে সামল দিতে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ১০ ও ১১ নম্বর জেটি দু’টিকেও হাই মালটিপারপাস জেটি নির্মাণের পরিকল্পনাসহ বন্দরে পণ্য পরিবহনের চাপ কমাতে মংলা-ঢাকা সড়ককে দ্রুত চার লেন সড়ক নির্মানে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (মবক)।

(এসএকে/এস/এপ্রিল০৪,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test