E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৭ দিনেও উদ্ধার হয়নি ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজ

২০১৬ এপ্রিল ০৫ ১৭:০৮:০৪
১৭ দিনেও উদ্ধার হয়নি ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ১৭ দিন পার হলেও সুন্দরবনের শেলা নদীর হরিণটানা এলাকায় তলা ফেটে এক হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া সি হর্স-১ নামের জাহাজটির উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি বিআইডাব্লিউটিএ ও বনবিভাগ।

কবে নাগাদ তারা উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা। অবশ্য বনবিভাগ দাবি করেছে মালিক পক্ষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে তারা খুব শিগগির ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার কাজ শুরু করবে। তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সুন্দরবনে ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী কোস্টার উদ্ধারে ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এদিকে কোস্টার ডুবির ঘটনা তদন্তে বনবিভাগ ও জেলা প্রশাসন পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করে। এরমধ্যে বনবিভাগের একটি কমিটি নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পেরেছে। বাকি দুটির তদন্ত কাজ এখনো চলছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো সম্প্রতি তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল দূর্ঘটনাস্থলে এসে জরিপ কাজ শেষ করেছে। তারা খুব শিগগির তাদের ডুবে যাওয়া জাহাজটির উদ্ধার কাজ শুরু করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। আমরা জাহাজটি উদ্ধারে তাদের সহযোগিতা করছি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আশরাফ হোসেন বলেন, শেলা নদীতে ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজটির ওজন প্রায় সাড়ে সাতশ মেট্রিক টন। অথচ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে আমাদের যে উদ্ধারকারী যান রয়েছে তার উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ২৫০ মেট্রিক টন। একারনে আমরা তা উদ্ধার করতে পারছিনা। এজন্য জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তারা ভাড়া করা প্রাইভেট কোন যান এনে তাদের ওই জাহাজটি উত্তোলন করবে বলে আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারা যদি ডুবে যাওয়া জাহাজটির উদ্ধার কাজ খুব শিগগির যদি শুরু করতে না পারে তাহলে তা নিলামে বিক্রি করে দিয়ে তা তোলার ব্যবস্থা করা হবে বলে হুশিঁয়ার করে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বেলা) খুলনার বিভাগের সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল এই প্রতিবেদককে বলেন, সংশ্লিদের সুন্দরবনের প্রতি ভালবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সুন্দরবনে একটা দূর্ঘটনা ঘটলে তারা খুব তৎপরতা দেখায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তাতে ভাটা পড়ে। গত এক বছরে সুন্দরবনের ভেতরে অন্তত তিনটি (র্ফানেস অয়েলবাহী ট্যাঙ্কার, সারবাহী ও কয়লাবাহী) নৌযান ডুবেছে। একটি বাদে অন্য দুটি তারা উদ্ধার করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, কয়লা, সার ও তেল পড়ে সুন্দরবনের পরিবেশ, প্রতিবেশ, জলজপ্রাণীর কমবেশি ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া এসব যান উদ্ধার না হওয়ায় নদীতে পলি পড়ে নদী ভরাট হওয়ারও আশংকা রয়েছে। তাই অবিলম্বে সুন্দরবনের নদীতে ডুবে থাকা নৌযানগুলো উদ্ধারের তাগিদ দেন তিনি।

তেল,গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বাগেরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব ফররুখ হাসান জুয়েল এই প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও শেলা নদীতে ডুবে যাওয়া কয়লাবাহী জাহাজ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের কোন তৎপরতা নেই। তারা চিঠি চালাচালিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সংশ্লিষ্টরা আদৌ জাহাজটি তুলতে কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির প্রধান বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোমিনুর রশিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা তদন্ত কাজ অনেকটাই শেষ করেছি। খুব শিগগির তা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেব।

বন বিভাগের গঠিত অপর একটি কমিটির প্রধান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহিদুল কবির এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ২৩ থেকে ২৫ মার্চ সাত সদস্যের তদন্ত দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।

উল্লেখ্য: গত ১৯ মার্চ বিকালে সুন্দরবনের শেলা নদীর হরিণটানা এলাকায় তলাফেটে এক হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া সি হর্স-১ নামের জাহাজটি। এরআগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি তেলবাহী কার্গো সুন্দরবনের শেলা নদীতে ডুবে যায়।

(একে/এএস/এপ্রিল ০৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test