E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ৬ অপরাধী চিহ্নিত

২০১৬ এপ্রিল ১৫ ১৭:২২:০৩
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ৬ অপরাধী চিহ্নিত

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী টহল ফাঁড়ির পঁচাকোরালীয়া ও নাপিতখালী বিলের মধ্যবর্তী আব্দুল্লারছিলা এলাকার গহীন অরণ্যে লাগা আগুন দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রনে এসেছে।

ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিই মধ্য রাতে শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও বাগেরহাটে ফিরে এসেছে। এই আগুনে বন বিভাগের হিসেরে ৮ দশমিক ৫৫ একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এঘটনায় জড়িত ৬ জেলে-মৌয়ালকে চিহ্নিত করতে পেরেছে সুন্দরবন বিভাগ। তবে এখনো তাদের নামে মামলা বা আটক করা হয়নি। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সুন্দরবনের আব্দুল্লারছিলা এলাকার গহীন অরণ্যে এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়।

এদিকে আগুনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যেদের কমিটি গঠন করেছে সুন্দরবন বিভাগ। সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েতকে এই তদন্ত কমিটির প্রধান করায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত নিয়ে সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ের মানুষের মনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনে ধানসাগর স্টেশনে প্রতি বছর আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে বন সংগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙ্গুল খোদ এসিএফ বেলায়েতের দিকে। কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরি করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। বন কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে মৌসুম ভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয় ওই বিলগুলো। কারেন্ট জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়। প্রতি মৌসুমে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও রাজস্ব জমা পড়ে না। পকেট ভারি হয় সুন্দরবনের কর্মকর্তাদের। মঙ্গলবার রাতের আব্দুল্লারছিলায় বনে আগুনের ঘটনাটি তারই অংশ। এ কাজের মাস্টার মাইন্ড এসিএফ বেলায়েতকে তদন্ত কমিটির প্রধান করায় তাই নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্ত নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ের সাধারন লোকজন জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে আগুনের সূত্রপাত হলেও বুধবার ভোরে লোকালয়ের লোকজন প্রথমে গহীন অনণ্যে আগুনের কুন্ডলী দেখতে পায়। এরপর বুধবার সকালে তারা বন বিভাগকে জানায়। সকাল ৯টা থেকে প্রথমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে বনকর্মী ও শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ৩-৪শ’ মানুষ । তারা কলস-বালতি নিয়ে আগুন নিভাতে প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করে। দুপুর দুইটার দিকে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগরহাট জেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনা পৌঁছলেও জোয়ারের পানি না ওঠা পর্যাপ্ত তাদের বসে থাকতে হয়। জোয়ারের পানির উপর নির্ভর করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দুদিন লেগে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধায় ঘটনাস্থলে বসে নিভানোর কাজে থাকা মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভক্ত জানান, আমাদের পর্যাপ্ত পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দু’দিন সময় লেগেছে। তবে বাতাসের তীব্রতায় ধোয়ার কুন্ডুলি পাকিয়ে থেতে-থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠছে। এই আগুন গোটা এলাকায় যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পাওে সেজন্য বন সন্নিহিত লোকালয়ের সাধারন মানুষ ও বন বিভাগ দ্বিতীয় দিনেও নালা কেটে সেখানে পানি ভরে ফায়ার লাইন স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে সুন্দরবনের ৮/১০ একরের অধিক বনভূমির সবুজ অরণ্যের সুন্দরী, বলা, বাইন,গরানসহ গাছপালা, নলখাগড়া ও লতাগুল্ম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুন্দরবনে অবস্থান করে আগুন নিয়ন্ত্রন কাজ তদারকী করেন, খুলনা সার্কেরের বন সংরক্ষক জহিরউদ্দিন আহমেদ।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেছেন, আগুন বৃহস্পতিবার রাতে নিভে গেছে। তারপরও আরো ২/৩ দিন ধরে এখানে নজরদারী ও পানি দেয়া হবে। এই আগুনে বন বিভাগের হিসেরে ৮ দশমিক ৫৫ একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এঘটনায় জড়িত ৬ জেলে-মৌয়ালকে চিহ্নিত করা গেছে।

রবিবার তাদের নামে মামলা করা হবে। সর্বশেষ এই অগ্নিকান্ডের মাত্র ১৭ দিনের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন এলাকায় ফের আগুনের ঘটনায় চুপসে গেছেন বনকর্মকর্তারা।

(একে/এএস/এপ্রিল ১৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test