E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধান কেনার সরকারি ঘোষণায় ভরসা পাচ্ছে না কৃষকেরা

২০১৬ মে ১৮ ১৬:২৬:৫৯
ধান কেনার সরকারি ঘোষণায় ভরসা পাচ্ছে না কৃষকেরা

আল মাহবুবুল আলম, মদন (নেত্রকোণা) : ৫ মে থেকে কৃষকের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান কেনার ঘোষণায় নেত্রকোণার মদন উপজেলার কৃষকেরা কোন ভরসা পাচ্ছে না।

কৃষকরা জানায়, প্রতি বছরই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সরকার এমন ঘোষণা দেয়। পরে ধান-চাউল সবই কেনে চাউলকল মালিকদের কাছ থেকে। ফলে কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে কোন সুফল পাচ্ছে না। অনেক কৃষক ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ধান কেটে জমিতেই মাড়াই করে ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে দিচ্ছে।

গত ২৪ এপ্রিল সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকের পর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ৫ মে থেকে ৩১ আগস্ট সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে। এবার মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ মেট্রিক টন হবে ধান, বাকিটা চাল।

নেত্রকোণা মদন উপজেলার বাঘমারা গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান মিলন বলেন, প্রতিবছরই সরকার ঘোষণা দেয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে। কিন্তু বাস্তবে খাদ্য বিভাগ এক-দুই দিন লোক দেখানো কিছু ধান কেনার পর আর কেনে না। এবারও যে এর ব্যতিক্রম হবে এমন ভরসা কোন কৃষকই পাবেন না বলেন, হাফিজুর জানান। একই ধরনের মন্তব্য করেন, দেওসহিলা গ্রামের কৃষক আক্কু মিয়া ।

উপজেলার নায়েকপুর গ্রামের কৃষক ময়না মিয়া বলেন, সরকার ২৩টাকা কেজি দরে ধান কিনলে বাজার কিছুটা হয়ত বাড়বে। তাতে কৃষকের কি লাভ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ধান কিনবে কৃষকের কাছ থেকে। এই ধান ব্যবসায়ীরা বেচবে মিলারদের কাছে। মিলারেরা বেচবে সরকারের কাছে। এই যে হাত বদল হতে হতে সরকারের বেধে দেয়া ধানের দাম কৃষকের কাছে পৌছার কোন সম্ভাবনাই নেই। এখনতো ৪শ৫০টাকা মণ দরে ধান বেচে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আবাদ খরচই উঠছে না। তবে সরকারের ঘোষিত দাম পেলে কৃষকের লাভ থাকবে বলেন কৃষক ময়না মিয়া ।

উপজেলার মদন ইউনিয়নের মদন দক্ষিন পাড়ার কৃষক গোলাম সাকের নান্টু অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে কম দামে ফড়িয়াদের মাধ্যমে ধান কিনে মিলমালিকেরা গুদামজাত শুরু করে দিয়েছেন। তারা কমদামে কেনা এই ধানই পরে সরকারের কাছে বেচবে। তাই সরকার ধান কেনা শুরু করলেও ধানের বাজার তেমন বাড়বে না বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন মদন উপজেলার ফচিকা গ্রামের ব্যবসায়ী বিজন পাল। তিনি জানান, ৪৫০ থেকে ৪৭০টাকা মন দরে কেনা ধান বেচছেন চাউলকল মালিকদের কাছে। তিনি বলেন, চাউলকল মালিকেরাই তাদের প্রধান ক্রেতা।

তিনি বলেন, প্রায় এক দশক ধরে ধান ব্যবসায় করছি। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী খাদ্য বিভাগ কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনতে কোন দিনই দেখিনি। প্রথমে দুই এক দিন লোকদেখানো ধান কেনে খাদ্য বিভাগ। পরে কখন কার কাছ থেকে ধান কেনে তা আর কেউ জানতে পারে না। খাদ্যবিভাগ মূলত ধান কেনে চাউল কল মালিকদের কাছ থেকে।

মদন উপজেলার মেজর অটো রাইচ মিলের মালিক সোহরাব হোসেন জানান, এখন ধান মওজুদ করার সঠিক সময় না। তাই কোন চাউলকলের মালিকই ধান মজুদ করবেন না। তারা ধান কেনার পরপরই ক্রাশিং করে চাউল বাজারে বেচে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আজিজুল হক জানান,চলতি অর্থ বছরে মদন উপজেলা থেকে ২ হাজার ৯শত ৬মেট্রিক টন ধান ক্রয় করার জন্য গত১২ এপ্রিল উপজেলার কৃষি অফিস কৃষকদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটির নিকট জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তালিকা পেলেই ক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে।

এ ব্যাপারে কৃষি অফিসার গোলাম রসুল জানান, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করার জন্য প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে। তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হবে। তবে ধান ক্রয় করার কার্যক্রম আগে শুরু হলে এ এলাকার কৃষকরা আর ও উপকৃত হত।

(এএমএ/এএস/মে ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test