E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরায় আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীর জামিন

২০১৬ মে ২৬ ১১:৫৯:৪৩
সাতক্ষীরায় আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীর জামিন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : জালিয়াতির মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় জড়িত এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আদেশ দিলেও গত এক সপ্তাহেও মামলা নেয়নি পুলিশ। গত বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মহিবুল হাসান এ  সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দেন।

মামলার বিবরনে জানা যায়, গত বছরের ৮ সেস্টেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী রেউই বাজারের পার্শ্ববর্তী কৃষি ব্যাংকের সামনে একটি বাড়ির ছাদ থেকে তিন কেজি ৮০০ গ্রাম গাজাসহ দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের মাদক ব্যবসাঢি মোজাম সরদারকে গ্রেফতার করেন সদর থানার সহকারি উপপরিদর্শক আব্দুল মালেক। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন মাদক বিক্রেতা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন সহকারি উপপরিদর্শক আব্দুল মালেক বাদি হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় গ্রেফতারকৃত মোজাম সরদার ছাড়াও কলারোয়া উপজেলার সাহাপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম (বর্তমানে সদর উপজেলার হাওয়ালখালি গ্রামের মতলেবের ঘরজামাই), রেউই গ্রামের আমিরুল ইসলাম, হাওয়ালখালি গ্রামের শহীদুল ইসলাম ও তার ভাই মুকুল হোসেনকে আসামী করা হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে এজাহারভুক্ত আসামীদের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের অ্যাড.আব্দুল লতিফ আসামী মোজাম সরদারের জামিনের জন্য ওকালতনামায় সাক্ষর করেন। ওই দিন মোজাম সরদারের জামিন আবেদন করেন অ্যাড. আব্দুল লতিফের সেরেস্তার কনিষ্ট আইনজীবী সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. রেশমা পারভিন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাড, ইয়ারুল ইসলাম। বিচারক মহিবুল হাসান বৃহত্তর জামিন শুনানীর জন্য পহেলা অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওই দিন অ্যাড, রেশমা পারভিনের সাক্ষর ও সিলমোহর সম্বলিত জামিননামার কাগজপত্র সদর কোর্ট জিআরও মিজানুর রহমান ও তার সহযোগি বেসরকারি কর্মচারি দাউদ হোসেনের মাধ্যমে বিচারকের কাছে উপস্থাপন করা হয়। জামিননামায় অ্যাড.আব্দুল লতিফের আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান গাইন ও জামিনদার হিসেবে কামারবায়সা গ্রামের আমের আলীর সাক্ষর দেখানো হয়। গত ১৯ মে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এ মামলার এক পলাতক আসামীকে স্বেচ্ছায় হাজির করিয়ে আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। ওকালতনামায় সাক্ষর না থাকলেও জ্যেষ্ট আইনজীবী হিসেবে জামিন শুনানীতে অংশ নেন অ্যাড. আব্দুল মজিদ। তিনি তার আসামীর জামিন চাওয়ার সময় ১নং আসামীর জামিন পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিচারক মহিবুল হাসান মামলার নথি পর্যালোচনাকালে মোজাম সরদারের জামিন দেওয়ার আদেশটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে দাউদ হোসেনের হাতে লেখা জিআরও মিজানুর রহমানের মাধ্যমে তার কাছে সাক্ষরের জন্য নিয়ে আসা জামিনাদেশটি পর্যালোচনার একপর্যায়ে ওই জামিন আদেশ বাতিল করে আসামী মোজাম সরদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। একই সাথে এ অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি উর্দ্ধতন কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করেন। ওকালতনামায় সাক্ষরকারি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, জামিননাময় সাক্ষরকারি অ্যাড. রেশমা পারভিন, জিআরও মিজানুর রহমান ও দাউদ হোসেনকে ডাকিয়ে এনে এ জামিনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সহকারির পিপি অ্যাড. রেশমা পারভিন লিখিতভাবে জানিয়ে দেন যে, মোজাম সরদারের পক্ষে দায়েরকৃত জামিননামায় তার যে সাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে সেটা তার নয়। অ্যাড, আব্দুল লতিফের আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান জালিয়াতির মাধ্যমে তা উপস্থাপন করেছেন।

আদালত সূত্রে আরো জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে গাজা ব্যবসায়ির জামিনে মৃক্তির ঘটনায় ওকালতনামায় সাক্ষরকারি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, না অ্যাড, রেশমা পারভিন বা সদর কোর্ট জিআরও মিজানুর রহমান জড়িত তা নিয়ে আদালত পাড়ায় গুঞ্জন ওঠে। ক্রমশঃ পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় আব্দুল লতিফ, রেশমা পারভিন, আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান, জিআরও মিজানুর রহমান, দাউদ হোসেনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিচারক মহিবুল হাসান ১৯ মে সন্ধ্যায় এ নিয়ে পুলিশকে মামলা করার জন্য একটি আদেশনামা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আদেশনামায় জিআরও সহকারি উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান, জিআরও সহকারি মোঃ দাউদ হোসেন, আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান গাইন, জামিনদার আমের আলী, আসামী মোজাম সরদারের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৬১,১৬৭,৪০৯,৪২০,৪৬৬,৪৬৭,৪৬৮,৪৭১ ধারাসহ ১৯৭৪ সালের দূর্ণীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫ ধারায় মামলা করার জন্য বলা হয়।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ জানান, বিষয়টি বিচারাধীন তাই সব কিছু জানলেও এই মুহুর্তে সাংবাদিকদের কোন তথ্য দেওয়া ঠিক হবে না। তবে সদর থানার জিআর-৪৩৭/১৫ নং মামলার কোন আসামীর পক্ষে ওকালতনামায় তার সাক্ষর নেই বলে জানান তিনি।

আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান জানান, তিনি জামিনদার হিসেবে আমের আলীর সাক্ষর, অ্যাড. রেশমা পারভিনের সিল ও স্বাক্ষরিত জামিননামাটি সদর জিআরও সাহেবের কাছে যথাযথ পদ্ধতিতে জমা দিয়েছেন। এখন নিজেরা বাঁচতে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

সহকারি পিপি অ্যাড, রেশমা পারভিন জানান, তিনি মোজাম সরদারের পক্ষে জ্যেষ্ট আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল লতিফের সহযোগি হিসেবে জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে জামিনামায় যে সাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে সেটা তার নয়। অ্যাড. আব্দুল লতিফের আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমান গাইন এ সিল ও সাক্ষর জালিয়াতি করেছেন। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে লিখিত দিয়েছেন। বিচারক মহিবুল হাসান সদর কোর্টের জিআরও মিজানুর রহমান, দাউদ হোসেন, আইনজীবী সহকারি হাফিজুর রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সদর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ জানান, কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করার আদেশনামাটি থানায় পাঠানো হয়েছে মর্মে তিনি শুনেছেন। তবে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি হাতে পাননি।




(আরএনকে/এস/মে২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test