E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা আর এক সেন্ট মার্টিন ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’

২০১৬ অক্টোবর ০৫ ১৮:৪৬:২৫
বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা আর এক সেন্ট মার্টিন ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট, দুবলারচর ও লোনা পানির মাছের খনি সোয়াচ আব নো গ্রাউন্ডের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরের গভীরে জেগে ওঠা বিশাল ভুখন্ড ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল ও  বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন উপকূলর দুবলারচর- হিরন পয়েন্ট থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগর গভীরে এই দ্বীপটি বাংলাদেশের আর এক ‘সেন্ট মার্টিন’।

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের চার পাশে সমুদ্রের সচ্ছ নীল জল, নানান প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির শব্দ, সৈতকে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ, বাতাসের শো-শো শব্দে মানুষের মনকে প্রকৃতির গভীরে নিয়ে যায়। মাইলের পর মাইল দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতে বসে দেখা মেলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে জুড়ে ঘুরে ফিরছে কচ্ছপ, হাজারো লাল রংঙ্গের ছোট-ছোট শিলা কাকঁড়া। সচ্ছ নীল জলে ঘুরছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সামুদ্রি মাছ, কখনো- কখনো দেখা মিলছে ডলফিনের। সৈকতের নীল জলে নেই কোন হাঙ্গরের আনাগোনা।

সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ে শাপরিং এর আদর্শ জায়গা। প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দার্য লীলাভূমি এই বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড যেকোন দেশী-বিদেশী ইকোট্যুরিষ্টদের জন্য আর্কষনিয় স্থান। তবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের এ উজ্জল সম্ভবনাময় স্থান বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড প্রচার-প্রচারনার অভাব ও বঙ্গপসাগরের অচেনা এক নতুন দ্বীপে নেই কোন দেশী-বিদেশী ইকোট্যুরিষ্টদের আনাগোনা। রোববার সরোজমিনে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ঘুরে দেখা দেছে এমনই চিত্র। দেশের সমুদ্র বিজয়ের পর ব্লুইকোনমির কারনে এই দ্বীপটি শুধু প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দার্য লীলাভূমিই নয়-জলদস্যু দমন, চোরাচালান প্রতিরোধ ও সমুদ্র নিরাপত্তায় রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কোস্টগার্ড এই দ্বীপে করতে যাচ্ছে এইটি শক্তিশালী বেইজ ক্যাম্প। আগামীতে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে কোস্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্প নির্মান হলে ইকোট্যুরিষ্টরা (প্রতিবেশ পর্যটক) র্নিভিগ্নে ঘুরে দেখতে পারবে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দার্য।

দেড় যুগ আগে জেগেওঠে প্রকৃতির নিয়মে বছরের পর বছর ধরে বিশাল আয়তন ধারন করা এই দ্বীপটি সরকারী ভাবে এখনো কোন জরিপ হয়নি। তবে দ্বীপটির উপকূলে মাছ আহরনে থাকা জেলেদের দাবি বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত। বর্ষা মৌসূমেও বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের অধিকাংশ এলাকায় জোয়ারের পানি ওঠেনা। এই দ্বীপ ঘুরে দেখাগেছে, প্রাকৃতিক ভাবে জন্মাতে শুরু করেছে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিত সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়া, পশুর, গরান, ধন্দুল, বাইন, আমুর, টাইগার ফার্নসহ বিভিন্ন লতাগুল্ম ও অর্কিড। এখন রূপ নিচ্ছে ম্যানগ্রোভ বনে। ইকোট্যুরিষ্টদের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে কোস্টগার্ড ও ট্যুরিষ্ট পুলিশের ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্প, সুপেয় পানির জন্য প্রয়োজন দীঘি খনন। প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় পর্যপ্ত সাইক্লোন সেল্টার, আধুনকি বার, সুইমিংপুল, শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল-মোটেল ও গ্যাংওয়ে নির্মান। পর্যটকদের নূন্যতম এই সুযোগ সুবিধা টুকু নিশ্চিত করা গেলে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ইকো ট্যুরিষ্টদের জন্য হয়ে উঠবে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

একযুগ আগে বঙ্গপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা খুবই ছোট এই দ্বীপটিকে চিনতো ‘পুতনির চর’ হিসাবে। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের মালেক ফরাজী নামের এক জেলে বহরদার এই দ্বীপটির নাম করন করেন বঙ্গবন্ধুর নামে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা মালেক ফরাজী ওই দ্বীপটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’ নামের একটি সাইবোর্ড লিখে নিয়ে ওই দ্বীপে টানিয়ে দেয়। এরপর থেকে ওই দ্বীপটির নাম হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু আইর‌্যান্ড। বঙ্গবন্ধু আল্যান্ড উপকূলে মাছ আহরনে থাকা একাধিক জেলের কাছ থেকে জানাগেছে এতথ্য। কোস্টগার্ডেও এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। তিন বছর আগে মারা যাওয়া মালেক ফরাজীর বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড এখন গুগোল ম্যাপেও স্থান করে নিয়েছে।

মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের তত্ববধানে বাগেরহাট ও খুলনার কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে। কোস্টগার্ডের প্রট্রোল বোর্ড কেবিন ক্রজারে করে মংলা কোস্টগার্ড ঘাটি থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে যেতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ও কোস্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্পের প্রস্তাবিত জায়গা।

মংলা কোষ্টগার্ডের পশ্চিম জোনের ষ্টাফ অফিসার (গোয়েন্দা) লেফট্যানেন্ট এএম রাহাতুজ্জামান এসময় বলেন, বঙ্গবন্ধুর আইল্যান্ডে ইকোট্যুরিজমের অপার সম্ভবনাসহ গভীর সমুদ্রে মংলা বন্দরের দেশী-বিদেশী জাহাজের নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধের পাশাপাশি ট্যুরিষ্ট, জেলে-বনজীবীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই দ্বীপে কোষ্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্প নির্মান করা হবে। এটি নির্মিত হলে দেশী ও বিদেশী জাহাজের নিরাপত্তা মনিটরিং সহজ হবে। রাডারের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলে আমাদের ব্লুইকোনমি জোনে নিরাপত্তা দেয়া সহজতর হবে।

(একে/এএস/অক্টোবর ০৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test