E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মিলছেনা ঠিকানা

স্বজনদের কাছে ফিরতে পারছে না বাগেরহাট নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের ৩০ শিশু কিশোরী

২০১৬ নভেম্বর ১৩ ২১:২৯:১৪
স্বজনদের কাছে ফিরতে পারছে না বাগেরহাট নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের ৩০ শিশু কিশোরী

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট :‘স্যার এখানে থাকতে আমার ভাল লাগে না, আমি বাইরে যেতে চাই। আমাকে একটু বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন না স্যার।’ রবিবার সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের কাছে এভাবে বাইরে বের হয়ে আসার জন্য আকুতি করছিল আজমীরা খাতুন (২৪)। কিন্তু কিভাবে সে বের করে আসবে? অভিভাবক খুঁজে না পাওয়ায় আইনী জটিলতার কারনে সে বের হতে পারছে না। আজমীরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছে বাগেরহাট শহরতলীর পচাদীঘির পাড়ে খুলনা বিভাগীয় নিরাপদ মহিলা ও শিশু-কিশোরীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র। এই আবাসন কেন্দ্রের বন্দি পরিবেশে থাকার কারনে তার প্রকৃত বয়স ২৪ বছর হলেও দেখতে সে ১৩/১৪ বছরের কিশোরীর মত।

এই সেভ হোমে শুধু আজমিরা নয় এরক ১০ বছর ধরে এই নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে রয়েছে তানিয়া (২৩), বিথী (২৪), আরতি (২৮), শহরবানুসহ আরো অনেকে। এরকম এই আবাসন কেন্দ্রের ৩০ হেফাজতির ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । বাইরে বের হতে না পেরে এই নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রটিই এখন তাদের বাড়ি-ঘরে পরিণত হয়েছে। শারীরিক ও মানুষিক প্রতিবন্ধি এসব হেফাজতীরা ষ্পষ্ট ভাবে তাদের ঠিকানা বলতে না পারায় এই অসুবিধা হচ্ছে। আর দীর্ষ সময় ধরে এই আবাসন কেন্দ্রে থাকার কারনে তাদের মানুষিক বিকাশও হচ্ছে না। তবে কতৃপক্ষ বলছে আদালতের নির্দেশে বিভিন্ন ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েও এসব হেফাজতীদের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, অভিভাবক বা নিরাপত্তাহীন নারী, শিশু ও কিশোরীদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে নিরাপদ আবাসিক সুবিধাসহ ভোরণপোষণ, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও পুনর্বাসন সহায়ত প্রদানের লক্ষ্যে দেশের অন্যান্য বিভাগের মত খুলনা বিভাগের নিরাপদ মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র ২০০৩ সালে বাগেরহাট সদর উপজেলার দশানী এলাকার পঁচাদিঘীর পাড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫০ আসন নিয়ে শুরু হওয়া এই আবাসন কেন্দ্রে খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তি পিরোজপুর জেলার হেফাজতীদের ( ভিকটিম) রাখার জন্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে আদালতের মাধ্যেমে আসা এই আবাসন কেন্দ্রে ৫৮জন হেফাজতী রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জনের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে কোন কোন হেফাজতী ৮ থেকে ১০ বছর ধরেও এখানে অবস্থান করছে। শারিরীক ও মানষিক প্রতিবন্ধি এসব হেফাজতীরা দীর্ঘ সময় ধরে এখানে থেকে ক্রমেই তাদের মানষিক অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে।

নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট আফরোজা খাতুন বলেন, অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে এই আবাসন কেন্দ্রের নিবাসিদের সেবা দিতে তাদের হিমসিম কেতে হচ্ছে। এরমধ্যে অনেক নিবাসীর ঠিকানা খুজে না পাওয়ায় তারা বের হতে পারছে না। ফলে তাদের মানষিক বিকাস হচ্ছে না।

খুলনা বিভাগীয় নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের উপ-তত্বাবধায়ক (অঃ দাঃ) এএমএম ফজলে ইলাহী বলেন, আদালতের নির্দেশে বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়েও তাদের প্রকৃত অভিভাবকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে এই আবাসনের ৩০ হেফাজাতি বের হতে পারছেন না।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, অজ্ঞাত পরিচয়ে ৩০ হেফাজতীর স্বজনদের ঠিকানা খুঁজে পেতে নতুন ভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে।

(এসএকে/এস/নভেম্বর ১৩ ,২০১৬ )

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test