E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্গাপুরে স্মৃতিস্তম্ভটি অমর করে রাখবে টঙ্ক আন্দোলনের বীর শহীদদের

২০১৬ ডিসেম্বর ২৯ ১৩:০৫:১৪
দুর্গাপুরে স্মৃতিস্তম্ভটি অমর করে রাখবে টঙ্ক আন্দোলনের বীর শহীদদের

নিতাই সাহা, দুর্গাপুর(নেত্রকোনা):ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তর নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত প্রাকিৃতিক অপরুপ সৌন্দর্যে শোভিত সুসঙ্গ দুর্গাপুর। ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলনের তীর্থ স্থানই হচ্ছে এই সুসঙ্গ দুর্গাপুর।

আর এই আন্দোলনের মহানায়ক ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি ,মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্ঠা, মেহনতি মানুষের মুক্তি সংগ্রামের কিংবদন্তী বিপ্লবী নেতা কমরেড মণিসিংহ। এই বিপ্লবী মহানায়ক জন্মেছিলেন ১৯০১ সালের ২৮ জুলাই আর প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯০ সালেন ৩১ ডিসেম্বর। টঙ্ক আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন নারী সহ ৩১ জন বীর কৃষক ও মেহনতি মানুষ। ওই শহীদদের স্মরণে দুর্গাপুরে নির্মাণ করা হয়েছিল স্মৃতিস্তম্ভ।

অবশ্য সকলেরই জানতে ইচ্ছে করে,টঙ্ক কি ? টঙ্ক মানে ধান কড়ারী খাজনা প্রথা। ফসল হোক বা না হোক কড়ার মত ধান দিতে হবে। টঙ্ক জমির উপর কৃষকদের কোন স্বত্ব ছিল না। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কলমাকান্দা, সুসঙ্গ দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, ও শ্রীবর্দি সহ সুসঙ্গ জমিদারী এলাকার সর্বত্রই এই প্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রথার নাম কেন টঙ্ক হল তা জানা যায় না, এটা স্থানীয় নাম।

টঙ্ক প্রথানুযায়ী সোয়া একর জমির জন্য ধান দিতে হতো সাত থেকে পনের মন অথচ সেই সময়ে জোত জমির খাজনা ছিল সোয়া একরে পাঁচ থেকে সাত টাকা মাত্র। প্রতি মন ধানের দাম ছিল সোয়া দুই টাকা। ফলে সোয়া একরে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হতো এগার টাকা থেকে সতের টাকা।

এই প্রথা শুধু জমিদারদেরই ছিল তা নয়,মধ্যবিত্ত মহজনরাও এই প্রথায় লাভবান হতেন। একমাত্র সুসঙ্গ জমিদারই টঙ্ক প্রথায় দুই লাখ মন ধান আদায় করতেন। এটা ছিল জঘন্যতম সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ব্যবস্থা। এ শোষণের হাত থেকে ওইসব এলাকার কৃষক ও মেহনতি মানুষদের রক্ষা করতে কমরেড মণিসিংহ ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ টঙ্ক প্রথা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এতে কমরেডের সহযোগী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন লেঙ্গুরার ললিত সরকার, ভূপেন ভট্রাচার্য, হালুয়াঘাটের প্রথম গুপ্ত ও নালিতাবাড়ির জলধর পাল।

টঙ্ক আন্দোলনে সুসঙ্গ জমিদার বাহিনীর লাটিয়ালদের হাতে শহীদ হন রাশিমণি হাজং, সুরেন্দ্র হাজং, মঙ্গল সরকার, অগেন্দ্র,সুরেন্দ্র ,শঙ্কমণি ,রেবতি,যোগেন, স্বরাজ ও অজ্ঞাতনামা ১৩ জন। মণি হাজং ও সুরেন্দ্র হাজং ১৯৪৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুর্গাপুরের বহেরাতলীতে এবং মঙ্গল সরকার ,অগেন্দ্র , সুরেন্দ্র হাজং, মঙ্গল সরকার,অগেন্দ্র,সুরেন্দ্র ,শঙ্কমণি , রেবতি,যোগেন ও স্বরাজ ১৯৪৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী কলমাকান্দার লেংগুরায় শহীদ হন। একই সালে (অজ্ঞাত তারিখ) লেংগুড়ায় শচী রায়, দুবরাজ, মোহনপুরের রবি দাম, মাহাতাব উদ্দিন সহ অজ্ঞাত অনেকে শহীদ হন।

এই অঞ্চলের (তৎকালীন সুসঙ্গ দুর্গাপুর জমিদারী এলাকার) মানুষ আজো স্মরণ করে আত্মত্যাগী ওই বীর শহীদদের। তাদের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যেই সুসঙ্গ দুর্গাপুরে স্থাপন করা হয়েছে ‘‘টঙ্ক শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’’। প্রয়াত কমরেড রবি নিয়োগী ১৯৯৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ( বাংলা ১৪০০ সালের ১৭ পৌষ) শুক্রবার এই স্মৃতিস্তম্ভ ফলক উম্মোচন করেন। যে জমির উপর টঙ্ক শহীদ স্মৃতি স্তম্ভটি স্থাপিত হয় সেই জমি দান করেন সাবেক সংসদ সদস্য জালাল উদ্দিন তালুকদার। স্মৃতি স্তম্ভের স্থাপত্য শিল্পী (অৎপযরঃবপঃ) হচ্ছেন রবিউল হোসাইন, এর নির্মান প্রকৌশলী শেখ মুঃ শহীদুল্লাহ্ । নির্মান কাজ তত্ত্বাবধান করেন শেখ মুঃ মুনিরুজ্জামান।

তেভাগা টঙ্ক নানকার আন্দোলনের স্মৃতিরক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যেগেই টঙ্ক শহীদ নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত হয়। প্রায় আটত্তর বছর আগের সেই আন্দোলন সংগ্রামকে ঘিরে আজো এতদাঞ্চলের মানুষ স্মরণ করে আত্মত্যাগী বীর শহীদদের কথা। আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা কমরেড মণি সিংহের মৃত্যুবার্ষিকী ৩১ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ওইসব শহীদদের স্মরণে স্মুতিস্তম্ভ প্রাঙ্গনে জমে ওঠে কমরেড মণিসিংহ মেলা। দিন দিন এর আয়োজনের ব্যাপ্তি বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ সপ্তাহব্যাপি এই মেলা উপভোগ করতে দুর্গাপুরে আসেন।










(এেএস/এস/ডিসেম্বর২৯,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test