E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের মহোৎসব

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৫:২৩:২১
সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের মহোৎসব

নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সোমেশ্বরী নদীটি কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতা বিপন্ন প্রায়। নদী থেকে নিয়মবহির্ভূত বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশ প্রতিবেশ ব্যবস্থা বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

নদীর জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীজ সম্পদ, শত শত বাংলা ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাত এবং নির্গত পোড়া মবিল ও তেলের কারণে বিলুপ্ত প্রায়, বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে সোমেশ্বরীর মহাশোল প্রাপ্তি এখন ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, নদীর পূর্ব পাড় ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। সোমেশ্বরী পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে প্রবাহমান হওয়ায় জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তন ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদীর স্বাভাবিক গতি ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছে।

এখানে সরকার ঘোষিত বালু মহাল রয়েছে ৫টি। প্রতি চৈত্র মাসে যার ইজারার জন্য বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর আইন অনুসারে কার্য সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু এই নদীতে প্রায় তিন শতাধিক বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হচ্ছে সম্পুর্ন বিধিবহির্ভূত ভাবে। যার কারণে ঘোষিত ৫টি বালুমহালে আইন ও বিধি সম্মত উপায়ে উত্তোলনের এবং বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে গত ২০/০৫/১৫ তারিখে রিট দায়ের করে (যার নং ৫৩৩২/২০১৫) এর প্রেক্ষিতে মহামান্য উচ্চ আদালত গত ২৯/০৭/১৫ তারিখে রিটের শুনানী পরবর্তিতে সংশ্লিষ্ট সরকাির বিভাগে রুলনিশি জারী করেন এবং ৬(ছয়) সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেন। যার ফলে নেত্রকোনা জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর স্বাক্ষরিত, যার স্বারক নং ১৯২৫, তারিখ ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, উক্ত কার্যক্রম বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট আদেশ প্রতিপালনের নেত্রকোনা এবং দুর্গাপুর উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আদেশের কপি নির্দেশক্রমে প্রতিপালনের জন্য আদেশ প্রদান করেন এবং সোমেশ্বরী নদীকে কেন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবে না এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলেছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৫ এর চ অনুযায়ী উক্ত মামলাটি বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩,১৮(এ),২১,৩১,৩২ এবং ৪২ অনুচ্ছেদ সমূহের আলোকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ৫ (চ) পরিবেশ সংরক্ষন বিধিমালা ১৯৯৭, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ্যাক্ট ২০০০, মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০, মৎস্য সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৮৫, বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ (ধারা ৯ ও ১০), মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ এর অধীনে উক্ত মামলাটি বর্তমানে চলমান অবস্থায় রয়েছে। এমত:বস্থায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশীদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিকট এরকম কোন কাগজ পত্র নেই, তবে সরকারী বিধি মোতাবেক বালুর ইজারা প্রতি বছর হচ্ছে। কিন্তু পাথর উত্তোলনের কোন ইজারা নেই। বিষয়টি আমি শুনেছি এ ব্যাপারে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেসার্স আরিফ এন্টারপ্রাইজ ইজারাদার মোঃ আলাউদ্দিন আলালসহ অন্যান্য ইজারাদারদের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তার প্রতিবেদককে বলেন আমরা সরকারী নিয়ম মেনেই আমাদের বালু মহাল চালাচ্ছি। তবে পাথর উত্তোলন বিষয়ে কোন ইজারা নেই। তবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এর সময় সাথে অনেক সময় পাথরও উঠছে। এভাবে এগুলো বেচাকেনাও হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, বর্তমানে বিধিবহির্ভূত বালু ও পাথর উত্তোলন ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। অনতিবিলম্বে বিধি সম্মত উপায়ে ঘোষিত বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলনের লক্ষ্যে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করবে বলে স্থানীয় দুর্গাপুরবাসী আশা করছে।

(এনএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test