E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন : কেন হয় কেন নয়

২০২১ আগস্ট ২০ ১৫:১৯:৩৫
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন : কেন হয় কেন নয়

আবীর আহাদ


বেশকিছু দিন ধরে একশ্রেণীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের মধ্য থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের জোরালো দাবি উঠেছে। এ অবস্থার মধ্যে গত জুলাই মাসের শেষভাগে সরকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব কাজী আনোয়ারুল ইসলামকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সব মিলিয়ে সংগতকারণে দিনকে দিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের দাবি বিশেষ শ্রেণীর মধ্যে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিশেষ শ্রেণী বলতে আমরা বুঝি মুক্তিযোদ্ধা তালিকার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগরদের। আর এই কারিগর তারা যারা সরকারের গোঁজামিলের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার ফাঁকফোকর দিয়ে অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবে অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দিয়েছে। এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগররা হয়তো ভাবে যে, একটা নির্বাচন হয়ে গেলে তাদের আইনগত ভিত্তি আরো সবল হবে, অপরদিকে ভুয়ার কারিগররাও এ প্রক্রিয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও তারা ভেতরে ভেতরে জ্বলে মরছে। পূর্বতন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠিত থাকলেও বিগত ৫ বছরেও তারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন করতে পারেননি। বর্তমান গঠিত কমিশন নির্বাচন করতে পারবে তারও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয় কেনো ও কী কারণে সেই নির্বাচন স্থগিত করে রেখেছেন তা অনেকের কাছেই এতোদিনও বোধগম্য নয়। তবে সচেতন মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো এর পেছনের কারসাজিটা বুঝতে পারেন। মূলত: মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের জুয়া ও অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর বিশাল বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ফলে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের জুয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে বিশাল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাণিজ্য প্রকল্পের কাজও গুটিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে এসব অপকীর্তির সাথে জড়িতদের উদরপূর্তিও ঘটেছে। ফলে এখন মুক্তিযোদ্ধা+অমুক্তিযোদ্ধা = মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রকাশ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন দেয়াই যায়। এই নিরিখে মুবিমমন্ত্রী বাহাদুর আগামী ষোলো ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তথাকথিত চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশসহ আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন করার একটা ছক এঁকে রেখেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যদিও মুক্তিযোদ্ধারা মিথ্যাচার ও অতিকথনপ্রিয় মন্ত্রীর কোনো কথার ওপর আস্থা রাখেন না, তারপরও কেনো জানি এবার সবাই একটু নড়েচড়ে বসেছে। বিশেষ করে একটা মানসিক ভীতি থেকে পরিত্রাণ লাভের আশায় লাল মুক্তিবার্তা ও বেসামরিক গেজেটের সাথে জড়িত অমুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগররা যেনতেন পন্থায় একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন!

কিন্তু সবচে' বড়ো প্রশ্ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন যে চান, তো সে নির্বাচনের ভোটার কারা? আমরা জানি, যেখানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা দেড় লক্ষের নিচে, সেখানে সরকারি গেজেটে আছে দু'লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। সেই হিসেবে কমবেশি পঁচাশি হাজারই অমুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্য যারা জীবিত আছেন তারাই হবেন নির্বাচনের ভোটার। আমাদের পরিসংখ্যান বলে, এসব ভোটারের মধ্যে হয়তো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেশিই হবে। ফলে অমুক্তিযোদ্ধারাই সেই নির্বাচনে বিপুল ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। বিশেষ করে উপজেলা/জেলা পর্যায়ের নির্বাচনে অমুক্তিযোদ্ধারাই বেশি প্রার্থী হবে এবং তাদের পক্ষে অমুক্তিযোদ্ধারাই ভোট দেবে। সেই প্রভাবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যে প্যানেল ভুয়াদের ব্যাপারে নমনীয়, সেই প্যানেলই নির্বাচনে জিতবে। ফলে নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সব স্তরই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে যাবে।

তবে এ-কথাও সত্য যে, মুক্তিযোদ্ধাদের দাবিদাওয়া পূরণের লক্ষ্যে একটি নির্বাচিত শক্তিশালী বডি থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সিংহভাগ সদস্য বয়সের ভারে ও রোগেশোকে নূয়ে পড়েছেন এবং তারা মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ধুকে ধুকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একটি সংঘবদ্ধ উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তাই অপরিসীম। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে একটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বাচিত কমিটি তাদের দু:খ-দুর্দশা দূর করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এ ব্যতীত, আজ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান ঘটেছে, সেটাকে প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিপুল ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের বহুসংখ্যক সংগঠন গড়ে ওঠার ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্মরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এবং এসব সংগঠনগুলোর মধ্যে আন্ত:সংগঠন বিরোধ থাকায় জাতীয় প্রয়োজনে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না।

আরেকটি প্রবণতা বিদ্যমান যে, সবাই নেতা হতে চান। ভুয়ারাই এক্ষেত্রে বেশ সোচ্চার। কারণ আগাছার যে বৃদ্ধি বেশি! আবার কেউ কাউকে মান্য করতে চান না। অনেকে আবার কোনো প্রকার যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, অর্থ ও রাজনৈতিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নেতা হতে চান। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কারিগররা ভুয়াদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে লুটকৃত অর্থ হালাল করতে চান। কেউ কেউ নেতা হতে না পেরে সংগঠনের ভেতর নানান চক্রান্ত ও কোন্দল সৃষ্টি করে সংগঠনের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকেন । অনেক ক্ষেত্রে নেতা হতে যাওয়ার লক্ষ্যে নিজ সংগঠনসহ ভিন্ন সংগঠনের মধ্যে হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, অপবাদ, কুৎসাসহ নানান চক্রান্তের ফলে কোনো জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে পারছে না।

এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্যতিক্রম। দেশে বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যে একটি একক জাতীয় সংগঠন সে-সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। আর সরকারও মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে মুক্তিযোদ্ধাদের একক প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন গণ্য করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিস্তৃতি দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত থাকায় এ সংগঠনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক বিপ্লবসহ জাতীয় যেকোনো অনিয়ম-অসংগতির বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব সে-বিষয়ে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই। ফলে জাতীয় ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিষয়ে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা গড়ে উঠেছে।

তবে কথা থেকে যায়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের ভোটার হলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জীবিত মুক্তিযোদ্ধাগণ। আর ঐ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে কমবেশি পঁচাশি হাজার অ-মুক্তিযোদ্ধাই শুধু নয় তাদের মধ্যে বেশ কয়েক হাজার রাজাকারও রয়েছে বলে আমরা সকলেই জানি! এ বিষয়ে আগেই কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। মূলত: বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার বঙ্গবন্ধু সরকারের বাহাত্তর সনের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা পাশ কাটিয়ে নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞা ও ভুয়া নির্দেশিকায় ঐসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান করে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

অতীতে বিভিন্ন সরকারের অ-সদিচ্ছাই শুধু নয়, তথাকথিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ( জামুকা) এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তথাকথিত নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমাণ্ড কাউন্সিলসহ জেলা মহানগর উপজেলা ও ইউনিয়ন কমাণ্ডাররা ব্যক্তিস্বার্থে ঐসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রেখেছেন। তাদের অর্থলিপ্সার কারণে লাল মুক্তিবার্তা, বেসামরিক গেজেট ও অন্যান্য তালিকায় ঐ পরিমাণ ভুয়ারা আজ সগর্বে মুক্তিযোদ্ধা সেজে রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ নানান সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা এখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দখলে নিতে চায়! এসব দেখে দেশের জনগণ ও বিভিন্ন মহলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে। এ-প্রক্রিয়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের মান-মর্যাদা বলতে কিছু নেই। অপরদিকে রাজনৈতিক, দলীয় ও আত্মীয়তার কারণে বিভিন্ন সরকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকার ব্যাপারে অন্ধের মতো চোখ বন্ধ করে থাকছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিতাড়নের বিষয়ে যেনো কারো কোনো দায়িত্বই নেই! মূলত : জাতীয় সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না-থাকার ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র তথা সরকারের এহেন দায়িত্ববোধের অভাব সৃষ্টি হয়েছে ।

এসব কারণ অনুধাবন করে আমার নেতৃত্বে গত ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে "একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ"-এর ব্যানারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৭ সনের বাণিজ্যনির্ভর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই বাতিলসহ 'মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা'র দাবিতে একটি আন্দোলন গড়ে তুলি। নানান দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যেও আন্দোলনটি ঢিমেতালে হলেও প্রবহমান রয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অপসারণের আন্দোলনের প্রেক্ষিত তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই স্থগিত হয়ে যায়। আমার যতোদূর মন হয়, আমাদের মূল দাবির যৌক্তিতা অনুধাবন করে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় তথা সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ও মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

আমাদের সকলের এখন একটাই কাজ হওয়া উচিত, একটি সংযুক্ত প্লাটফরমের পতাকাতলে জড়ো হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে 'মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় তথা সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান' ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অপসারণের মাধ্যমে 'মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠা'র যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নে একটি সংঘবদ্ধ প্রয়াস গড়ে তোলা। রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদাহীন ও ভুয়ার ভারে অপমানিত থাকার কোনো অর্থ থাকতে পারে না। আমরা চাই, সর্বাগ্রে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়ন করা হোক। সেই সর্বজনগ্রাহ্য মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা উচ্চ আদালত ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এ জাতীয় কমিশনের মাধ্যমেই কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন হতে পারে। তারপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন ।

এমনি অবস্থায়, বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন মানে 'যে যবর যা, যে-জাতের তা' যা-তা ! এ-প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন মানে বিশালসংখ্যক ভুয়া ভোটারের আইনি সুরক্ষায় আইনগত: স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে যাবে। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন মানে অতীতের ভুয়ার কারিগররা বিশাল ভুয়াদের সমর্থনে নির্বাচনে আবার বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে আসবে। কারিগররা পুনরায় নতুন ভুয়া সৃষ্টির লাইসেন্স পেয়ে যাবে, আর অর্থের বিনিময়ে পুরাতন ও নতুন ভুয়াদের সুরক্ষা দিয়েই যাবে! এ-অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না ।

অতএব, মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা না-হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো নির্বাচন হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। এটা ন্যায় নীতি ও আদর্শের প্রশ্ন। মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার প্রশ্ন। তাই দ্রুতগতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে নিরলস সংগ্রাম করে চলেছে, সেই প্রয়াসের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দেয়া তাই সকল প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার নৈতিক কর্তব্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের পর জাতীয় মর্যাদায় যে-কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা যতো পারেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন করতে থাকবেন, তাতে কেউ কাউকে বাধা দেবে না। কারো কিছু বলারও থাকবে না।

লেখক : বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বহু গ্রন্থের লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test