E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রসঙ্গে

২০২২ মার্চ ০৯ ১৭:১৩:০৬
মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রসঙ্গে

আবীর আহাদ


আসছে ২৬ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীবাহাদুর বেশকিছু দিন ধরে যে বচন ঝেড়ে আসছেন তা যদি সত্য হয় তাহলে তাঁকে একটা সাধুবাদ জানানো হবে। তবে সাধুবাদের পূর্বশর্ত হতে হবে যে, প্রকাশিব্য সে তালিকা যেনো শুধুমাত্র প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়। কারণ আমাদের বদ্ধমূল ধারণা এই যে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধাসহ বিরাটসংখ্যক রাজাকার অবস্থান করছে।

আমরা জানি যে, গত ৫০ বছরে অন্তত সাতবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধার বয়স, সংজ্ঞা ও মানদণ্ড পাল্টেছে ১১ বার। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের বিষয়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। এখন নতুন প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, ২৬ মার্চের মধ্য চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বরাত দিয়ে ৮ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকায় এসেছে যে ২৬ মার্চ প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের সমন্বিত তালিকা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। যাঁদের ব্যাপারে জেলা-উপজেলায় তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তাঁরা এ তালিকা থেকে আপাতত বাদ থাকবেন। আগে ১ লাখ ৯৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে মাসে ভাতা পাঠানো হতো। ভাতা পাওয়া সব বীর মুক্তিযোদ্ধার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নামে একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করার পর এ সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কম বা বেশি সেটি বড়ো কথা নয়। মূল কথাটা হলো, কোনো প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা যেমন তালিকার বাইরে থাকবেন না, তেমনি কোনো অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকবে না। একটা কথা সরকারসহ সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও তিতিক্ষা দিয়ে দেশটা স্বাধীন করেছিলেন বলেই যিনি জীবনে যা কল্পনাও করেননি তিনি তাই হয়েছেন। এ বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করলে মঙ্গল। কিন্তু আমরা কী দেখছি? মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু সমাজে জাতে ওঠার জন্যে অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটা দুর্বৃত্তচক্র রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা বনে যাচ্ছে!

বিশেষ করে অতীত ও বর্তমান ক্ষমতার সাথে জড়িত, দুর্নীতি, লুটপাট ও অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী, এমপি, মন্ত্রীদের কেউ কেউ সামান্য মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ও মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনারে ভাগ বসানোর জন্যে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন এবং হচ্ছেন! বিশেষ করে রাষ্ট্রের মূল ক্ষমতাবানদের নিকটজনদের অনেকেই এ অপকর্মের সাথে জড়িত! তাদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও বা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও মূল-ক্ষমতাবানদের মধ্যে যখন কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না, তখন ধরে নেয়া যায় যে, এ অপকর্মে তাঁদেরও সায় রয়েছে! অথবা তাঁরা তাদের খুশি দেখতে চান!

আমাদের কথা পরিষ্কার। যতোই মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করুন, করেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কোনো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারবে না। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কেবলমাত্র প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই থাকবেন। জামুকা নামক জাল মুক্তিযোদ্ধা তৈরির মেশিনটি বাতিল করতে হবে। সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণে বঙ্গবন্ধু সরকারের ৭২ সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে উচ্চ আদালত, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিশন গঠন করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test