E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শনিবার জরুরি সভা

সাতক্ষীরায় পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৭

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ০১ ২২:২৩:০৬
সাতক্ষীরায় পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৭

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা বাস, মিনিবাস, কোষ্টার ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির নির্বাচন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠণের সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছে।

সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বৃহষ্পতিবার দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, সহ সাংগঠণিক সম্পাদক শাহীনুর ইসলাম মিলন, যুগ্ম সম্পাদক মহিদুল ইসলাম মধু, শ্রমিক শাহীনুর ইসলাম, মোজাফফর রহমান, রুবেল হোসেন ও জিয়াউর রহমান। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তৌহিদুল ইসলামকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাধারণ শ্রমিকরা জানান, বাস, মিনিবাস, কোষ্টার ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ডিসেম্বর ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যথা সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর খুলনার যুগ্ম শ্রম কমিশনার মিজানুর রহমান সমিতিকে একটি চিঠি দিয়ে নির্বাচন তপশীল ঘোষণা করে ৪৫ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে বলেন।

একইভাবে সমিতির ১৩ সদস্যের পরিবর্তে মালিকদের সংখ্যা অনুযায়ি নয় সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠণের নির্দেশ দেওয়া হয়। যেন তেন প্রকারে নয় সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠণ করে যুগ্ম শ্রম কমিশনারের কাছে পাঠানো হলে তিনি তা গ্রহণ করলেও অনুমোদন দেননি।

শ্রমিকরা জানান, যথা সময়ে মালিক সমিতির ভোট হলে নির্বাচনে ভরাডুবি হবে জেনে সভাপতি আবু আহম্মেদের পক্ষে বাস মালিক ও কুলিয়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলেও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তা খারিজ হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মঙ্গলবার সাইফুল করিম সাবু মালিক সমিতির অফিসে দেখিয়ে নির্বাচন তপশীল ঘোষণার জন্য সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্শেদকে বলেন। এ নিয়ে বুধবার উভয়পক্ষের মধ্যে দফা মারপিটের ঘটনা ঘটে।

শ্রমিকরা আরো জানান, আবু আহম্মেদ নির্বাচন দেওয়া নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হতে থাকে। বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার সময় টার্মিনালের সামনে বটতলায় শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলামকে মারপিট করে রসুলপুরের গুলিবিদ্ধ রুবেল, পলাশপোলের মিজান, মাটিয়াডাঙার জিয়া, দক্ষিণ আলীপুরের ডাকাত আদর আলী সরদারের ছেলে শফি ডাকাতসহ ২৫/৩০ জন।

এ খবর শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় কাছাকাছি অবস্থান করা অন্য শ্রমিকরা ছুঁটে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে সাত জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে একদল ক্ষুব্ধ শ্রমিক বাস মালিক সমিতির সদস্য আসাদুল হকের অফিস কক্ষে চড়াও হলে তিনি আত্মরক্ষায় নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তল বের করলে আরো উত্তেজনা বেড়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা আবু আহম্মেদের অফিস কক্ষে ও চড়াও হয়।

পুলিশ এসে অবরুদ্ধ আসাদুল চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে শ্রমিক নেতাদের উপর হামলাকারি সন্ত্রাসিদের গ্রেফতারের দাবিতে সাতক্ষীরার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে টার্মিনাল থেকে কোন বাস না বের হলেও যেসব বাস খুলনা, কালিগঞ্জ, ও যশোর থেকে আসছিল সেই সব বাস আবারো বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে থাকে। পরে সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে আগামী শনিবার আহবায়ক কমিটি গঠণের জন্য জরুরী সভা আহবান ডাকার জন্য মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্শেদকে ঘোষণা দেওয়ার কথা বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ হাফিজুল্লাহ জানান, অবস্থার অবনতি হওয়ায় শ্রমিক নেতা তৌহিদুল ইসলামকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জানান, শ্রমিক নেতাদের উপর বহিরাগত হামলাকারিদের গ্রেফতারের দাবিতে সাধারণ শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসাথে টার্মিনাল চত্বরে আবাসিক হোটেল পরিচালনার নামে পতিতালয় গড়ে তোলা জনির হোটেল, শাপলা হোটেল, পদ্মা হোটেল, স্বদেশ হোটেল ও সাতক্ষীরা আবাসিকে অবস্থানরত বহিরাগত অস্ত্রধারি সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালানোর দাবি করেন তিনি। শ্রমিক নেতাদের উপর হামলার ঘটনায় রাতেই থানায় অভিযোগ দেওয়া হবে।

তবে বাস মিনিবাস কোষ্টার ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবু আহম্মেদ জানান, সাইফুল করিম সাবুর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আসাদুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি তার অফিসেও হামলা চালিয়েছে।
একইভাবে শ্রমিক নেতা সাইফুল করিম সাবু সাংবাদিকদের বলেন, মালিক সমিতির ভোট না দেওয়ার জন্য আবু আহম্মেদ বহিরাগত সন্ত্রাসিদের নিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়েছে।

বাস মিনিবাস কোষ্টার ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোর্শেদ জানান, শনিবার সকাল ১১টায় নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরী সভা আহবান করে বোর্ডে নোটিশ ঝুলানো হয়েছে। ওইদিন আলোচনা সাপেক্ষে আহবায়ক কমিটি গঠণ হতে পারে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মদ জানান, উত্তেজনা থাকায় বাস টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। যাত্রী দুর্ভোগ এড়াতে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test