E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় অনিয়ম দুর্নীতির মধ্যেই চলছে জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাস

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৮:০৯:৪৪
সাতক্ষীরায় অনিয়ম দুর্নীতির মধ্যেই চলছে জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাস

রঘুনাথ খাঁ ,সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা শহরের রথখোলায় জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাস পরিচালনায় অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে ছাত্রীদের  স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাসের মালিক এমএ মান্নান। ছাত্রী নিবাসে ১৯৯টি কক্ষে ২২০ জন ছাত্রী অবস্থান করছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। বাকীরা স্নাতক ও চাকুরীজীবি। প্রত্যেককের সিটভাড়া হিসেবে ৮৫০ টাকা দিতে হয়। যদিও চলতি মাস থেকে তা ৯০০ টাকা করা হয়েছে। খাবারের জন্য প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে তিন হাজার ৬০ টাকা জমা দিতে হয়। প্রতি মাসে প্রতি বর্ডারের জন্য ৪০ টি মিল খাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সকাল ৯টার মধ্যে ভাত দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত ৯টার পর একটি রুম থেকে অপর রুমে না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমেরিকায় অবস্থানরত মালিকের ভাই আব্দুল জলিল ও তার জামাতা মঞ্জুরুল কবীর এ ছাত্রী নিবাসের সার্বিক তত্বাবধায়কের দায়ত্ব পালন করে থাকেন। এ ছাড়া আমীর আলী নামে একজন কর্মী ও একজন নৈশপ্রহরী দায়িত্ব পালন করে থাকেন। রান্নার দায়িত্বে পৃথক লোকের ব্যবস্থা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচছুক কয়েকজন ছাত্রী জানান, গত বছরে একই দিনে কমপক্ষে পাঁচটি কক্ষে ছয় থেকে সাত বার চুরি হয়েছে। এক এক বার চুরির ঘটনায় ছাত্রীদের নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিপত্র খোয়া গেছে। অভিযোগ করলেই ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল কবীর ও তার চাচা শ্বশুর ওই দায় ছাত্রীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের বয় ফ্রেণ্ডের পিছনে খরচের জন্য নাটক সাজানো হয়েছে বলে চাপিয়ে দেওয়া হয়। নিয়ম বহির্ভুতভাবে ছাত্রী নিবাসের নীচে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে।

কলেজে যাওয়ার জন্য সকাল ৯টার মধ্যে খাওয়ার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেওয়া হয় কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর। এতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ছাত্রী না খেয়েই কলেজে যেতে বাধ্য হয়। ফলে উদ্বৃত্ত ভাত অন্যত্র ব্যবহার করা হয় বা সেই ভাত দুপুরের মিলে দিয়ে বাঁচানো চাল বিক্রি করা হয়। প্রতিবাদ করলে রান্নার কাজে নিয়োজিত বুয়ারাই উল্টো হুমকি দেন।

যে দিন মাছ , মাংস বা ডিম থাকে সেদিন শেষের দিকে খেতে যাওয়া ছাত্রীদের অনেকেই তা পায় না। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ি খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও তারা পান না। ছাত্রী নিবাসে থেকে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত থাকলে বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে মিল বন্ধ রাখার কথা বললে তা মানেন না কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে না খেলেও মিল চার্জ ধরে নেওয়া হয়। রাত ৯টার আগে একজন শিক্ষার্থী অন্যের সিটে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও কোন কোন দিন সন্ধ্যার পরপরই দু’জনকে এক জায়গায় দেখলে চড়াও হন আব্দুল জলিল বা মঞ্জুরুল কবীর।

মঞ্জুরুল কবীর তাদের দিকে আড়চোখে তাকান এমন অভিযোগ করে কয়েকজন ছাত্রী বলেন, তাদের পোশাক কি ধরণের হবে তাও নির্ধারণ করে দেন ব্যবস্থাপক। তার কথা মত না চললে যে কোন সময় ছাত্রী নিবাস ছেড়ে চলে যাওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। কয়েকজনকে বোরকা পরতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোরে তারা বিছানায় এলোমেলো অবস্থায় থাকাকালিন আব্দুল জলিল সাহেব ঘরে ঢুকে বাতি নিভিয়ে দিতে এলে তারা বিচলিত হন। কোন অভিযোগ করলে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তাদেরকে গালিগালাজ করেন।

ছাত্রীরা তাদের নিবাসে সার্বক্ষণিক একজন নারী কর্মী ছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী সময়মত খাবার, নিদ্দিষ্ট সময়ে মিল বন্ধ করার কথা বললে তা মানার দাবি করেন।

জানতে চাইলে জেবুন্নেছা ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল কবীর বলেন, প্রত্যেক ছাত্রীকে তারা সন্তানের মত দেখেন। কোন কোন দিন সকালের খাবার দেরীতে রান্না হতে পারে। কতিপয় এক -দুজনের পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে দৃষ্টিকটু হওয়ায় পরিবেশ সঠিত রাখতে তাদেরকে সতর্ক করা হয়। যারা এ পরিবেশ মানতে পারবে না তারা এখানে থাকতেই বা যাবে কেন এটা তার বোধগম্য নয়। সবমিলিয়ে এ ছাত্রী নিবাসে থেকে যাতে ভাল রেজাল্ট নিয়ে অভিভাবকদের উপহার দিতে পার সেজন্য সব ধরণের চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের ছাত্রী নিবাসে ছাত্রীর সংখ্যা ২০০ এর কম বলে দাবি করেন তিনি।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test