E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্মশান দখল করে মাটি কেটে ভাটায় নিচ্ছে বিএনপি নেতা 

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৮:৫৮:১১
শ্মশান দখল করে মাটি কেটে ভাটায় নিচ্ছে বিএনপি নেতা 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দেড় শতাধিক বছরের শ্মশান উচ্ছেদ করে দেড় মাস আগে থেকে ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য মাটি কেটে নিচ্ছেন এক বিএনপি নেতা। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেল্ল কুল্ল্যা ইউনিয়নের বেতনা নদীর তীরে মুচিপোতা শ্মশানে এ মাটি কাটার কাজ অব্যহত রয়েছে। 

বুধহাটা ঋষিপাড়া শ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি বাবুল দাস ও সাধারণ সম্পাদক কার্তিক দাস জানান, দেড়’শ বছর আগে জমিদার আমলে কাহার সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তির সৎকার হতো এ শ্মশানে। কাহার সম্প্রদায়ের লোকজন বুধহাটায় চলে যাওয়ার পর কুল্ল্যা এলাকার ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ মারা গেলে পূর্ব পুরুষদের রীতিনীতি অনুযায়ি এখানে সমাধি করা হয়। বর্তমানে এ শ্মশান মুচিপোতা নামে খ্যাত।

১৫০ বছর আগে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দু’ শতাধিক মৃতদেহ সমাধি করার কারণে বেতনা নদীর চরভরাটি প্রায় পাঁচ বিঘা জমি মহাশ্মশানে পরিণত হয়েছে। ওই জমি জবরদখল করার জন্য ভূমিদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে জহিরা বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি স্লুইজ গেট সংলগ্ন বাকা নর্দমা পরিবর্তণ করে সোজাসুজি ভাবে বেতনা নদীতে টেনে নদী চরের বেশ কিছু অংশ জুড়ে বাঁধ দিয়ে মাটি কেটে ব্রীজের মাথার হোসেন আলীর ভাটা ও সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান এলাকার বিএনপি নেতা ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ওসমান গনি মিণ্টুর কুলতিয়া মোড়ের হাজী ব্রিকস এ বিক্রি করা হচ্ছে। দেড়মাস আগে থেকে ওসমান গনি মিন্টু তাদের দীর্ঘদিনের শ্মশান থেকে ম্যাশিন দিয়ে মাট ও বালি তুলে চলেছেন। মাটি তোলার একপর্যায়ে মানুষের কঙ্কাল বের হলেও তারা কোন ভুরুক্ষেপ করছেন না। ফলে তাদের শ্মশান উচ্ছেদ হওয়ার আশাঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে মুচিপোতা শ্মশানে গেলে কুল্ল্যা গ্রামের শহীদুল ইসলাম ও নাসিরউদ্দিন সরদার জানান, বেতনা নদীর তীরে মুচিপোতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানটি অনেক পুরাতন। কয়েক বছর আগে সাতক্ষীরা শহরের মোটর শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম ঘের করার জন্য এখানকার নদীর চর দখল করে মাটি ও বালি তুলে ভাটায় বিক্রি শুরু করে। তার দেখাদেখি কুল্ল্যার রমজান আলী, শহীদুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন নদী চরের কিছু জমি একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে বালি ও মাটি কাটতে থাকে।

শ্মশানের উত্তর পাশের নদীর চরভরাটি এক একর ১০ শতক জমি আনোয়ার হোসেন আশাশুনি ভূমি কমিশনারের কাছ থেকে একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে জমির শ্রেণী পরিবর্তণ করে সেখানে ডাঙার স্থলে জলাশয় বানানোর জন্য ভাটা মালিক ওসমান গনি মিণ্টুর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে ওই জমি শ্মশানের। নদী তীরের এসব জমি নিয়ম বহির্ভুতভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য স্থানীয় সহকারি ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল বারি আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন।শ্মশানের মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করা ও বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রতিবাদে ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষজন ওসমান গনি মিন্টু ও তহশীলদার আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মিছিল করেন।

ইউপি সদস্য আব্দুল মাজেদ গাজী ও সমাজ সেবক ইয়াকুব আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানকার শ্মশানটি ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যবহার করে আসছে। আবু, আনিছ ও রমজান ও শহীদুলসহ একটি মহল শুধুমাত্র শ্মশানের জমি নয়, নদী চরের মাটি ভাটা মালিকের কাছে বিক্রি করে ফায়দা লুটছেন।

ওসমান গনি মিন্টু যেভাবে শ্মশানের জায়গা দখল করে কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে গেছে তাতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সৎকার ব্যবস্থা। তবে ঘেরের সামনে চরভরাটি জায়গা তৈরি হলে যদি তা ওই ঘের মালিক দখল করে থাকেন তাহলে শ্মশানের জায়গার সামনে জেগে ওঠা চর ঋষি সম্প্রদায়ের মানুষ শ্মশান উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করবেন সেটাই স্বাভাবিক।

বিষয়টি স্থানীয়ভাবে কুল্ল্যা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল বারীকে জানালে তিনি শুক্রবার কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন বলে তারা জেনেছেন।

শ্মশানের পার্শ্ববর্তী এক একর ১০ শতক ডাঙা জমি একসনা বন্দোবস্ত গ্রহীতা আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি চলতি বাংলা ১৪২৪ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ওই জমি দখল করবেন। তবে মাছ চাষ করতে নিয়ম বহির্ভুতভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জলাশয় বানানোর জন্য মাটি কেটে নিতে মিন্টু সাহেবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

কুল্ল্যা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল বারী জানান, শ্মশানের জায়গা দখল করে ভাটা মালিক ওসমান গনি মিন্টু মাটি কেটে গভীর করার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি গত ২৮ জানুয়ারি সার্ভেয়র দিয়ে মাপ জরিপ করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে শ্মশানের পাশে আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজনকে যেভাবে একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে তা আশাশুনির সহকারি ভূমি কমিশনারই বলতে পারবেন। এতে তার কোন হাত নেই।

বিএনপি নেতা ও সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ওসমান গনি মিন্টু জানান, আনোয়ার হোসেন নামের একজনকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি মাটি কাটছেন শ্মশান এলাকায়। আপত্তি ওঠায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে এক হাজার ইট দিয়ে শ্মশানের জায়গা চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেছেন। প্রয়োজনে তিনি শ্মশানের গর্ত ভরাট করে দেবেন।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test