E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৪শ’ টাকা উপ-বৃত্তির জন্য ১২শ’ টাকা ঘুষ!

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৯:০৫:২৯
১৪শ’ টাকা উপ-বৃত্তির জন্য ১২শ’ টাকা ঘুষ!

সমরেন্দ্র বিশ্ব শর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : টাকা না দিলে উপ-বৃত্তির কার্ড হয়না গগডা মোজাফরপুর দাখিল মাদ্রাসায়। এমন লিখিত অভিযোগ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার গগডা গ্রামের রিকসা চালক দুলাল মিয়াসহ ২২ জন অভিভাবক।

জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন দুলালের রিকশায় যাত্রী বহন করে ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে। অভাবের সংসারে ছেলে রমজান মিয়া অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে ওই মাদ্রাসায়, তাই ছেলের উপবৃত্তির জন্য যান তিনি মাদ্রাসার সুপার মো: ইয়াহিয়ার কাছে। ভিটে মাটি হীন একজন গরিব রিকশা চালক দুলাল অনেক আকুতি মিনতি করার পর সুপার তার ছেলেকে উপবৃত্তির তালিকায় নাম উঠাতে ওই মাদ্রাসার তার অনুসারী আব্দুল ওয়াহাব নামের এক শিক্ষকের নিকট পাঠান। তখন ২০১৭ সাল।

রিকশা চালক দুলাল মিয়া জানান, সে সময় তার ছেলেকে উপ-বৃত্তির তালিকায় নাম উঠাতে ওই শিক্ষক তার নিকট ১২শ টাকা দাবি করেন। কিন্তু রিকশা চালিয়ে ১২শ টাকা জমিয়ে সে বছর তিনি আর দিতে পারেননি। যে কারণে ছেলে রমজানের উপবৃত্তির তালিকায় আর নাম ওঠেনি।

চলতি বছর রমজান মিয়া ওই মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এবার উপবৃত্তির তালিকায় নাম উঠাতে পারলে দাখিল পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাবে এ পরামর্শ পান রিকশা চালক দুলাল মিয়া। তবে ১ বছরে উপবৃত্তির টাকা ১৪শ এটা কিন্তু রিকশা চালক দুলালের জানা ছিল না। কিছুদনি আগে ছেলের উপবৃত্তির জন্য সুপারের অনুসারী সেই শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাবের নিকট ১২শ টাকা দেন তিনি। টাকা দেওয়ার পর এবার উপবৃত্তির তালিকায় নাম ওঠে তার ছেলের। ব্যাংকে হিসাবও খোলা হয়। এতে তার মনে বেশ আনন্দ। কিন্তু এর পর সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জানতে পারেন উপবৃত্তির জন্য কোন টাকা দিতে হয় না।

তাছাড়া তার ছেলে রমজান অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র হিসেবে ১ বছরে উপবৃত্তির টাকা পাবে ১৪শ, এ বিষয়টি জানতে পেরে তার মাথায় হাত পরে। তাই তিনি ক্ষোভে দুঃখে তার মতো আরো অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করে গত ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। মোট ২২ জন অভিভাবক এ লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তাদিরুল আহমেদ অভিযোগটি জরুরী গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি তদন্তের প্রক্রিয়াধীন, তদন্ত শেষ হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ দিকে মাদ্রাসার সুপার মো: ইয়াহিয়ার সঙ্গে শুক্রবার মুঠোফোনে উপবৃত্তির টাকা নেয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়টি তার জানা নেই বলে তিনি জানান। তবে তিনি বলেন, উপবৃত্তির তালিকা করার সময় তিনি প্রশিক্ষনে ছিলেন। তখন যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা কী করেছেন এটা তার জানা নেই।

অভিভাবদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানতে পেরেছি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

এদিকে রিকশা চালক দুলালের সঙ্গে যারা অভিযোগ ও টাকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, ৭ম শ্রেণীর ছাত্র দিদারুল আমিনের বাবা চংনওগাও গ্রামের সাইফুল ইসলাম তিনি দিয়েছেন ৫২০ টাকা, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ফাহিমা আক্তারের বাবা চিথোলিয়া গ্রামের আবু সিদ্দিক তিনি দিয়েছেন ৪শ টাকা, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী জেনিয়া আক্তারের বাবা গগডা গ্রামের মীর সুবহান তিনি দিয়েছেন ৪শ টাকা, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ছয়দুন গ্রামের মুক্তামনির বাবা আবু হানিফ দিয়েছেন ৪শ টাকা, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী গগডা গ্রামের তানজিলার বাবা মীর আবুল কাশেম দেন ৪শ টাকা, ১০ শ্রেণীর ছাত্র গগডা গ্রামের মোজাম্মেল হকের বাবা হাবিবুর রহমান দেন ৫২০ টাকা, ১০ শ্রেণীর ছাত্র গগডা গ্রামের ছারোয়ার আলমের বাবা আবু সালেক দেন ৬২০ টাকা, ১০ শ্রেণীর ছাত্রী হেপি আক্তারের বাবা মুজিবুর রহমান দেন ৬২০ টাকা, ১০ শ্রেণীর ছাত্র বড়তলা গ্রামের রবিন মিয়ার বাবা আজিজুল হক দেন ৫২০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র চংনওগাও গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের বাবা আলী উসমান দেন ৬০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র চংনওগাও গ্রামের আশিকের বাবা আব্দুস সুবহান দেন ৬শ টাকা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী গগডা গ্রামে আফরোজার বাবা শাহাবুদ্দিন দেন ৩২০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছয়দুন গ্রামের ইমন মিয়ার বাবা রতন মিয়া দেন ৫০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছয়দুন গ্রামের কাউসারের বাবা মানিকুজ্জামান দেন ৫২০ টাকা, নবম শ্রেণীর ছাত্র মাজহারুল ইসলামের বাবা হাবুল মিয়া দেন ৬শ টাকা। নবম শ্রেণীর ছাত্র চংনওগাও গ্রামের রহমতুল্লার বাবা রঞ্জু মিয়া দেন ৬শ টাকা, নবম শ্রেণীর ছাত্র গগডা গ্রামের আকরাম হোসেনের বাবা হাবিবুর রহমান দেন ৬০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র চংনওগাও গ্রামের এনামুল হকের বাবা সিরাজুল ইসলাম দেন ৫শ টাকা, ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছয়দুন গ্রামের ইব্রাহিমের বাবা আবু হানিফ দেন ৫২০ টাকা, ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মোজাফরপুর গ্রামের আশিক মিয়ার বাবা আবুল মিয়া দেন ৫শ টাকা।

এভাবেই ছাত্র অভিভাবকদের কাছথেকে উপবৃত্তির তালিকায় নাম উঠানোর জন্য সুপার তার অনুসারী শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাবের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেন।

মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো: সাইফুল ইসলাম আকন্দ জানান, তিনি উপবৃত্তির জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে কেন টাকা নেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার তাকে জানান, অফিসের অনেক খরচপাতি আছে। তাই কিছু টাকা নিতে হয়। সাইফুল ইসলাম নিজেও সুপারের এহেন অনৈতিক ও দুর্নিতিমূলক কর্মকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।


(এসবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test