E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও নওগাঁর সাপাহারের গণকবরটি অবহেলিত

২০১৯ ডিসেম্বর ০৪ ১৭:০৮:৫৮
স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও নওগাঁর সাপাহারের গণকবরটি অবহেলিত

নওগাঁ প্রতিনিধি : মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৮বছর পেরিয়ে ৪৯বছরে পা দিলেও নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা জিরো পয়েন্টে অবস্থিত গণকবরটির কেউ খোঁজ রাখেনি । অযত্ন আর অবহেলায় সেটি আজ স্মৃতির পাতা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি ও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা গেছে, একাত্তরে দেশে স্বাধিনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপাহার উপজেলাতেও পাকি সেনারা তাদের শক্তিশালী ক্যাম্প (ঘাঁটি) স্থাপন করে। এর পর সেখান থেকে তারা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র মানুষদের বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে মা বোনদের ইজ্জত হরণ করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সে সময় অসংখ্য স্বাধীনতাকামী মানুষদের ধরে এনে ব্রাশ ফায়ার করে উপজেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় বর্তমানে নব নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স্রভবনের সামানে রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত বৃটিশ শাসনমলের একটি বিশাল আকৃতির পাত কুয়ায় ফেলে দিত।

এমনকি অনেক সময় জীবন্ত মানুষদেরকেও সেখানে ফেলে দিয়ে জীবন্ত কবর দিত। সে হিসেবে ওই কুপটি একটি গণকবরে পরিণত হয়। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বরেন্দ্র এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে সম্ভবত ১৯৮৫ কিংবা ৮৬সালের দিকে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত রোস্তম আলী প্রিন্সিপাল ওই গণকবরের কুপটিকে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসময় কুপ খননকারী কয়েকজন মিস্ত্রি সংস্কারের জন্য নামে ওই কুপে। কিন্তু সেসময় সেখান থেকে মানুষের হাড় গোর ও কঙ্কাল বের হতে থাকলে মিস্ত্রিরা ভয়ে আঁতকে ওঠে এবং কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তাদের পারিশ্রমিক দ্বিগুন হারে বেড়ে দেয়ায় তারা সমস্ত হাড় গোড়গুলি কুপ থেকে তুলে অন্যত্র দাফন করে কুয়াটিকে পুণ:সংস্কার করে। এর কয়েক সপ্তাহ পরে সে কুয়ার পানি পানের উপযোগী করে তোলা হয়।

এর পর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নলকুপ, গভীর নলকুপ স্থাপন করে মানুষ পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাতে থাকে। যার ফলে ধিরে ধিরে কুপটি আবারো অকেজো হয়ে পানি পানের অনোপযোগী হয়ে পড়ে। এক সময় তা ময়লা মাটি আর আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়। পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানকার পরিবেশ এমন মসৃণ হয়ে পড়েছে যে, ওই গণকবর বা কুপটি কোথায় ছিল তা বোঝাও বেশ মুশকিল ব্যাপার হয়ে পড়েছে। উপজেলার অনেক স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেউ ওই গণকবরটি খোঁজ নেয়নি কিংবা ভবিষ্যত প্রজম্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে স্থানটি ঘিরে রেখেও তার স্মৃতি রক্ষা করেনি।

এ বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব ওমর আলী দু:খ প্রকাশ করে জানান, স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কিংবা কোন সরকারও জায়গাটির স্মৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। তবে বর্তমান সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের সকল গণকবরের স্মৃতি রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলে তিনি সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে ওই গণকবরটির তালিকা প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে গণকবরটির স্মৃতি রক্ষায় ২কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পর সরকারের গণপূর্ত বিভাগের লোকজন জায়গাটি পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু বর্তমানে জায়গাটির স্পেজ ছোট হওয়ায় সেখানে কোন স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে জানান।

বীর মুক্তিদোদ্ধা আলতাফুল হক চৌধুরী আরব সহ উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দাবী ছোট পরিসরে হলেও মহান মুক্তি যুদ্ধের কথা ভবিষ্যত প্রজম্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে সেখানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপিত করা হোক। এজন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আকুল আবেদন জানিয়েছেন সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণ।

(বিএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test