E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিয়ের প্রলোভনে অন্তঃসত্ত্বা বিধবা নারী, আড়াই লক্ষ টাকায় দফা রফার চেষ্টা

২০২০ জানুয়ারি ০১ ২২:১৯:১২
বিয়ের প্রলোভনে অন্তঃসত্ত্বা বিধবা নারী, আড়াই লক্ষ টাকায় দফা রফার চেষ্টা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আব্দুল মান্নানের মেয়ে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মুক্তি খাতুন বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে অন্তঃসত্ত্বা মুক্তি গ্রাম্য রাজনীতির শিকার হলেও সমাজপতিদের কাছে এই নারী সুবিচার পাচ্ছে না। ভয়-ভীতি দেখিয়ে পাতানো এক শালিসে  মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ইজ্জতের দাম ধরা হয়েছে। তবে মুক্তির হতদরিদ্র বাবা এই শলিস মেনে না নেওয়ায় প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকী দিচ্ছে। 

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালে বেদবুনিয়া গ্রামের গেদা লেংরার ছেলে জালাল উদ্দিনের সাথে মুক্তির শরীয়া মোতাবেক বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে থাকাবস্থায় ২০১৬ সালে স্বামী মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর ২ সন্তানের জননী মুক্তি একই গ্রামের জনৈক কিরনের পুত্র জনির কুনজরে পড়ে। মুক্তি খাতুন ২ সন্তানের জননী হওয়ার পরও মুক্তির বাড়ির প্রতিবেশী ঢুলটি বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কিরনের ছেলে জনির কু’নজরে পড়ে সে। জনি, মুক্তি খাতুনকে ছলেবলে কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।

এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুক্তির সাথে শারীরিক গড়ে তোলে। এতে মুক্তি খাতুন ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে জনমনে চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে লোকলজ্জার ভয়ে মুক্তি খাতুন বিষয়টি জনিকে খুলে বলে এবং তাকে বিয়ে করার প্রস্তাাব দেয়। কিন্তু জনি তা না শুনে কৌশলে কেটে পড়ে। ঘটনাটি এলাকার মানুষের মুখে মুখে রটে যাওয়ায় মুক্তির পিতা আব্দুল মান্নান এলাকার মাতব্বর ও স্থানীয় মেম্বর ওবায়দুল হক ও হাফিজুর রহমানের কাছে বিচার দাবী করে। তারা এলাকায় শান্তি স্থাপনের জন্য উভয় পক্ষকে ডেকে নিয়ে আপোষ-মিমাংসার জন্য বসে। কিন্তু গ্রাম্য শালিসে জনি হাজির না হয়ে স্থানীয় মাস্তানদের হাত করে তাদের সহযোগিতা নিয়ে মুক্তি খাতুন ও তার পিতা আব্দুল মান্নানকে এ ব্যাপারে কোথাও কোন অভিযোগ না করার হুমকি দিয়ে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এ ব্যাপারে মুক্তির পিতা আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে কিরনের ছেলে জনিকে ১নং ও প্রধান আসামীসহ মোট ৪ জনকে আসামী করে ঈশ্বরদী থানায় অনেক আগেই একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগে ২নং আসামী করা হয় আতাউল হক প্রাং, ৩নং আসামী করা হয়েছে ধর্ষক ছেলের পিতা কিরন আলী ও ৪নং আসামী করা হয়েছে ইয়ারুল ইসলামকে। এরা ধর্ষকের পক্ষে কাজ করেছে বলে অভিযোগে বলা হয়। কিন্তু আজবধি মামলাটি রেকর্ড হয়নি ও আসামীদের গ্রেফতারে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি।

থানার এসআই মানিক জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে একটি হাতে লিখিত অভিযোগ গ্রহন করে ওসি তদন্ত কর্মকতা বরারবর জমা দিয়েছি।

এদিকে ধর্ষক জনির পক্ষে ধর্ষিতার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অত্র এলাকার মৃত আরশেদ কামারের ছেলে ইয়ারুল ও দিরাজ উদ্দিনের ছেলে আতাউলকে বিশ হাজার টাকা দেয় বলে জানা গেছে । এতেও কোন কাজ না হওয়ায় গত ২৭ ডিসেম্বর দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার এর অফিসে শালিস বৈঠক বসে। এ সময় মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন মালিথা ও ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বর ওবায়দুল হকসহ দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর, ভিকটিম ও পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, বৈঠকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনা নিষ্পত্তি করে ধর্ষিতার নিকট হতে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর গ্রহন পূর্বক বিষয়টির মিমাংসা হয়েছে বলে ঘোষনা দেওয়া হয়। শালিসে এই টাকার ১ লাখ টাকা রাখা হয় সাংবাদিক ও থানা পুলিশ ম্যানেজের জন্য। বাকী ১লাখ ২০ হাজার টাকা ধর্ষিতা মুক্তির জন্য বরাদ্দ করে রাখা হলেও তারা এই টাকা গ্রহন করেননি।

এ ব্যাপারে দাশুড়িয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান বকুল সরদার মোবাইলে শালিসের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা তারই পরিষদের একজনের কাছে জমা আছে। মুক্তি বা তার বাবা টাকা গ্রহন করেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন মালিথা আপোষ মিমাংসা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে ছুটিতে থাকা ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) অরবিন্দ সরকার জানান, অভিযোগ পেয়েছি তবে জোড়ালোভাবে কেউ আসেনি। যার কারনে মামলাও হয়নি। তবে ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযাগকারী পাওয়া গেলে অবশ্যই মামলা হবে।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, থানায় এঘটনার কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ দায়ের হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

হতদরিদ্র পিতা আব্দুল মান্নান তার মেয়ে মুক্তি খাতুনের সম্ভ্রমহানির উপযুক্ত ও ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালীরা। ইতিমধ্যে ধর্ষিতা মেয়েটিকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে রাজশাহী ও পাবনার বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য হন্যে হয়ে অনেকেই ছুটে বেড়াচ্ছেন ।

এরআগেও অনৈতিক কার্য্যকলাপের দায়ে একই এলাকার প্রভাবশালী মহল ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেন। সর্বশেষ ঘটনার মুল হোতা জনি ও তার পিতা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এলাকাবাসীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রকৃত দোষী ব্যাক্তির সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করে এলাকার ব্যভিচার বন্ধের জোর দাবী জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test