E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রূপপুরের আলোয় আলোকিত ঈশ্বরদী জনপদ

২০২১ জানুয়ারি ৩১ ২৩:০৫:৪৩
রূপপুরের আলোয় আলোকিত ঈশ্বরদী জনপদ

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) : রূপপুর প্রকল্প ঘিরে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে ঈশ্বরদী জনপদ। যেখানে এক সময়ে বিষাক্ত সাপের অভয়ারণ্য ছিল, সেখানেই এখন অনেকগুলো বিশালাকৃতির সুউচ্চ ভবন শোভা বর্ধন করছে। সন্ধ্যার পর  যেখানে এক সময়ে নিকষ কালো আঁধারে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকতো, সেখানে এখন বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।

ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া সড়কের দিয়াড় সাহাপুর নতুনহাট মোড় থেকে প্রকল্প এলাকা রূপপুর পর্যন্ত এই পরিবেশ এখন দৃশ্যমান। রূপপুর পারমাণবিক বিদূৎ প্রকল্প ঘিরে আলোকিত হয়ে উঠেছে আশপাশের এলাকা। অতীতে কেউ কল্পনাই করেনি, এই অজ-পাড়াগাঁয়ে এমন রাজধানীর মতো আধুনিক ভবন নির্মাণ হয়ে গ্রাম শহরে পরিণত হবে। রূপপুর প্রকল্পের আবাসন সিটি দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক ‘গ্রীণ সিটি’ ঘিরেই বদলে যাচ্ছে সবকিছু। আজ গ্রীণ সিটির কল্যাণে বদলে গেছে পাকশীসহ এই এলাকার চিত্র।

১৯৬১ সালে পদ্মার তীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের অক্টোবরে এই প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন করেন। রাশিয়ার সাথে চুক্তি করে নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। বিদ্যুত কেন্দ্রের ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে দেয়া সম্ভব হবে। পরের বছর চালু হবে সমান মতার দ্বিতীয় ইউনিট।

প্রায় আট হাজারের মতো জনবল এখন এ প্রকল্পে কাজ করছে, যার মধ্যে রাশিয়ানসহ বিদেশী জনবল রয়েছে প্রায় তিন হাজারের বেশি। বিদ্যুত কেন্দ্রের রাশিয়ান কর্মকর্তাদের বসবাসের আবাসন প্রকল্প গ্রীন সিটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ৩৬ দশমিক ১১ একর জমিতে গ্রিনসিটি নির্মাণ কাজও পূর্ণোদ্যমে চলছে। বাস্তবায়নে রয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। আবাসনের জন্য মোট ২১টি বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোর মধ্যে ২০তলা বিশিষ্ট ১২টি, ১৬তলা বিশিষ্ট ৭টি এবং ১৫ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন রয়েছে।

১৫তলার দুটি ভবনে ১৫০০ বর্গফুটের ফাট থাকছে। ১২৫০ বর্গফুটের ফাটের ১৬টি এবং ৮৫০ বর্গফুটের ফাটের ২০তলা বিশিষ্ট ৩টি ভবন রয়েছে। ডরমেটরি কাম মাল্টিপারপাস কমার্শিয়াল ২০তলা ১টি ভবন নির্মাণের টেন্ডার ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। ফায়ার ষ্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টও গ্রিনসিটিতে থাকছে।

এছাড়াও গ্রিনসিটিতে ১টি দোতালা মসজিদ ভবন, ছয় তলা বিশিষ্ট স্কুল ভবন, দ্বিতল সাব-ষ্টেশন, জেনারেটর, পাম্প হাউজ ভবন, খেলার মাঠ, গেস্ট হাউজ এবং ফোয়ারা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রকল্পে কর্মরত দেশি ও বিদেশিরা এই গ্রিনসিটিতে বসবাস করবেন। এপর্যন্ত দশটি আবাসিক ভবনের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সম্পূর্ণ শেষ হওয়া ২০ তলা বিশিষ্ট ৬টি এবং ১৬ তলা বিশিষ্ট ৪টি দৃষ্টিনন্দন ভবন।

বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত বেশীরভাগ রাশিয়ানসহ বিদেশিরা বসবাসও শুরু করেছেন এখানে। আরো বেশ কয়েকটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। আলাদাভাবে একটি পাওয়ার সাব ষ্টেশন নির্মাণ হয়েছে। কোয়ার্টারগুলোতে আধুনিক মানের সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সকল ইউনিটেই আসবাবপত্র সরবরাহ হয়েছে। এসি, ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন, রান্নার গ্যাস সরবরাহ এমনকি বাথরুমে গিজারের ব্যবস্থাও সকল ফ্লাটেই রাখা হয়েছে। আধুনিকতার সবকিছুই আবাসিক কোয়ার্টারে বিদ্যমান। প্রথমদিকে দেশের আলোচিত দুর্নীতির ঘটনা ‘বালিশ-কান্ড’ এখন অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে।

পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম বাবু মন্ডল, এলাকার শ্রমিকনেতা বীর-মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদূল্লাহ ও রূপপুর গ্রামের বাসিন্দা পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল হক মালিথা তাদের অনূভূতি ব্যক্ত করে বলেন, অদূরদর্শী সাহসি নেতৃত্বের কারণে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শি নেতৃত্বেই দেশের সর্ববৃহত এই প্রকল্প আলোর মূখ দেখতে সক্ষম হচ্ছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান রূপপুর প্রকল্পকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ আখ্যা দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মিত্র শক্তি রাশিয়া এই পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবারও প্রমাণ করেছে তারা আমাদের পরমবন্ধু। বাংলাদেশ সরকারের সাথে রাশিয়ান সরকারের (জিসিসি) চুক্তিপত্র রয়েছে। তাতে নির্ধারিত সময়ে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের আবাসন ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে না পারলে বাংলাদেশকে তিপূরণ দিতে হতো প্রায় ৪০হাজার কোটি টাকা।

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, '১২ মাসের মধ্যে তিনটি ২০তলা ভবন নির্মাণ করে প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা নজির স্থাপন করেছেন। একাজের জন্য অবশ্যই তারা প্রশংসার দাবিদার।

(এসকেকে/এসপি/জানুয়ারি ৩১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test