E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ার ভবানীপুর গ্রাম এখন পুরুষ শুন্য

২০১৪ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৪:২৪:৫৮
কুষ্টিয়ার ভবানীপুর গ্রাম এখন পুরুষ শুন্য

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখি ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুলিশ আতংকে এখন সেখানে পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে।

এই অবস্থায় সুবিধাভোগী কিছু মানুষ পুলিশের আস্থাভাজন হয়ে কাজ করলেও পুলিশ তাদের আইনের আওতায় নিতে পারছেনা। এলাকার শান্তি শৃংখলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এলাকার দুই পক্ষের মাতুববরদের আইনের আওতায় এনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদানের বিষয়টি অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও এলাকার সব বয়সের মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে আর সেই কারনে এখন এলাকায় অবস্থানরত সাধারন জনগন পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

ফলে গ্রামের সাধারন মানুষ এবং কৃষকেরা মাঠে ফসলের কাজ করতে পারছে না আর আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে কোরবানীর পশু বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে এই পরিস্থিতিতে পশু বিক্রি করতে না পারায় অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর মাঝে পুলিশ আতংক কাটিয়ে তুলতে পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছে।

ভবানীপুর গ্রামে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে দিনে লুকিয়ে কিছু পুরুষ এলাকায় আসলেও রাতে নাকি সেখানে পুরো পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে।

এলাকাবাসী জানান,ভবানীপুর গ্রামের রেজা মন্ডল ও লাবু শকাতির মাঝে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

দু’গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি ঘটে। স্থানীয়দের মতে শুধুমাত্র হত্যাকান্ডের ঘটনার অপেক্ষায় সকলের যেন আতংকে দিন কাটে। পুলিশ প্রশাসন এই গ্রামের দু’পক্ষের অনমনীয় আচরনে এক প্রকার জিম্মী হয়ে পড়েছিল। বেশ কয়েকবার স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিস্পত্তির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। আবার সালিশ মিমাংশায় বিরোধ নিস্পত্তির সম্মতি দিলেও পরক্ষনে আবারো উভয় পক্ষের চোখ রাঙ্গানোতে পরিবেশ যা ছিল তাই হয়।

গত ৬ সেপ্টেম্বর এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় দহকোলা পুলিশ ক্যাম্পে মিমাংশার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ডাকা হয়। উভয় পক্ষের মাতুববরসহ ১৮ জন ৭ সেপ্টেম্বর সকালে দহকোলা পুলিশ ক্যাম্পে হাজির হয়। কিন্তু সেখানে পুলিশের ভেলকিবাজির কাছে সকলে হার মেনে যায়। ক্যাম্পে মিমাংশা শুরুর আগেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় এনে তাদের মিমাংশা করা হবে বলে জানানো হয়।

সেই সাথে মডেল থানার পুলিশ ভ্যান যেয়ে সেখানে হাজির হয়। পরে তাদের থানায় এনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১৮ জনকে ৩ মাস করে জেল প্রদান করা হয়। সাজা প্রাপ্তরা হলেন, রেজা মন্ডল, বাদশা ব্যাপারী, মুরাদ শকাতি, ওমর শকাতি, শামসুল প্রমানিক, আব্দুল রতিফ কেরু, লাবু শকাতি, মাসুদ শকাতি, এনামুল সেখ, রশেদুল, রহিম, উকিল সেখ, বিশু, রাকিব। পুলিশের এই উদ্যোগকে এলাকাবাসীর অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছে।
পুলিশের এই উদ্যোগ এখন সফল হয়নি। এ ঘটনার পর আরো ২টি ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। এলাকাবাসীর মতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকলেও সেখানে গরু চুরি এবং সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে।

শনিবার সন্ধায় বালিয়াপাড়া গরুর হাট থেকে ফেরার পথে রহিদুলের ক্যাডাররা বাদশা বেপারীর গ্রুপের তোফাজ্জেলের ছেলে ওলিয়র ও হাশেমের ছেলে ইসলামকে ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি নির্যাতন চালিয়ে মারাত্বক আহত করে। পরে তাদের কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গরু চুরির ঘটনায় রহিদুলের পক্ষের গ্রুপ আজিমুদ্দিন বাদী হয়ে মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এক পক্ষের মামলা গ্রহন করলেও শনিবারের মারামারির ঘটনায় অন্য পক্ষের মামলা গ্রহনে গড়িমসি করছে বলে জানায়। মামলার আসামীর তালিকা থেকে রহিদুল নামের এক ব্যক্তির নাম যুক্ত করায় মামলাটি গ্রহন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কে এই রহিদুল ? এলাকাবাসী জানান, ভবানীপুর গ্রামের জিন্নাত মন্ডলের পুত্র রহিদুল। চরমপন্থী রহিদুল নামেই এলাকার মানুষের নিকট বেশি পরিচিত। চরমপন্থী মফিজসহ অনেকেই তার বাড়িতে আশ্রিত ছিল। রহিদুলের বাড়িতে অবস্থান করেই চরমপন্থীরা এলাকার আধিপত্য বিস্তার করতো বলে এলাকাবাসীর জানা রয়েছে।

বর্তমানে এলাকার অনেক অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। ১৯৯৭ সালের দিকে এলাকার রেজা মন্ডলের ভাই ডাবলুকে মফিজ বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছিল। আর সেই মামলার আসামী ছিল রহিদুল পরে বাদী পক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার নামটি বাদ দিয়েছিল। উভয় পক্ষের ১৮ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেয়ার পর এখন এই রহিদুল এলাকার আধিপত্য নিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

সরেজমিনে ভবানীপুর গ্রামটি পুরুষ শুন্য হওয়ায় মহিলারা বাড়িতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এদিকে, ধানের জমিতে সার দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু পুলিশের ভয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় আসতে পারছে না গ্রামবাসী।

এলাকার চায়ের দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের ভয়ে পুরুষেরা দোকানে চা খেতে আসতে পারছে না। দোকানীদের বিক্রি কমে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা কোরবানীর গরু বিক্রি। এলাকার প্রতিটি ঘরেই ২/৪টি করে কোরবানীর গরু রয়েছে। সারা বছর পর কোরবানীতে গরু বিক্রির অপেক্ষায় ছিল কিন্তু পুলিশের আতংকে এই গরু কিভাবে বিক্রি করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।

ইতিমধ্যে অনেকে বাড়িতেই কম মুল্যে ব্যাপারীদের নিকট গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা যায়। আবার যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের মধ্য বেশ কয়েকজন গররু ব্যাপারী রয়েছে। এদের অনেক গরু রয়েছে যা কোরবানীর বাজারে বিক্রি করতেই হবে।

স্থানীয়রা জেলায় সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিমের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এলাকাবাসীর মতে পুলিশী আতংককে কাটিয়ে তুলতে পুলিশের পক্ষ থেকেই উদ্যোগ গ্রহন করলে এলাকাবাসী বেশি নিরাপদ মনে করতে পারবে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার নবাগত পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম জানান, ভবানীপুর গ্রামের বিষয়টি আমার জানা আছে। এলাকার মানুষের পুলিশের প্রতি আতংক থাকা ভাল, তবে বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

(কেকে/এএস/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test