E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

 

বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি নির্বাচন : ভোটার ও প্রার্থীরা কে কি ভাবছেন?

২০২১ নভেম্বর ২২ ১৭:০৯:৪৯
বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি নির্বাচন : ভোটার ও প্রার্থীরা কে কি ভাবছেন?

এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতির বাৎসরিক নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম আদালত পাড়া। বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার নিকটবর্তী আদালত পাড়া ঘুরে দেখা গেছে নির্বাচনী প্রচারণার তোড়নসহ বর্ণীল ব্যানার-ফেস্টুন। বার সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে সরকারি দল সমর্থিত মহাজোট, বিএনপি-জামাত সমর্থিত জোট এবং গনতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিন জোটের প্রার্থীদের মাঝে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা লক্ষ্য করা গেছে। এবারের ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার, সকাল ৭টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকার প্রতিবেদক ভোটের মাঠের অবস্থা জানতে ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে নির্বাচনী বক্তব্য ও প্রত্যাশার কথা। একদিকে  ভোটারদের প্রত্যাশা আমূল পরিবর্তন ও দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যার সমাধান। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জানিয়েছে তাদের কর্মপরিকল্পনা সহ নিজ বক্তব্য।

সাধারণ আইনজীবীদের বক্তব্যে জানা যায়, বিচারপ্রার্থী জনগন প্রতিনিয়ত আদালত অঙ্গণে দালাল ও টাউট বাটপারদের দ্বারা হয়রানি সহ প্রতারিত হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, আইনজীবীদের বসার সুব্যবস্থা নিশ্চিতে বিগত কমিটি সমূহ সময়োপযোগী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারা বলেন, তথাকথিত উন্নয়ন ও গণতন্ত্র আমরা চাই না। আমরা চাই আদালতের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থাৎ জিআরও-পেশকার-পিয়নের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ, টাউট-দালাল উচ্ছেদের মাধ্যমে বিচার অঙ্গণের সুষ্ঠু পরিবেশ ও আইনজীবীদের সম্মান-মর্যাদা রক্ষা এবং বিচার প্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতি নিয়ে বার সমিতির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের দু’বারের নির্বাচিত সদস্য সিনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টু বলেন, আদালত অঙ্গন নিম্নস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কাছে জিম্মির মতো হয়ে আছে। এই দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা কোন বিষয় নয়, একজন মেরুদন্ড সম্পন্ন ও শক্ত গলার অধিকারী নীতিবান-সৎ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারী হয় তাহলে একটু ভূমিকা নিলেই বন্ধ করা সম্ভব। এটা কিছুু নয়, জজ সাহেবের সঙ্গে বসবে এবং বলবে যে আমাদের এই রকম সমস্যা। তাদের ঔদ্ধত্ব এতোটাই বেড়ে গেছে, আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যথায় আমরা বারের পক্ষ হতে আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করবো। একটু সিরিয়াসলি বললেই বন্ধ হয়ে যাবে। একবারে তো নির্মূল হবেনা, সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব যেটা এখন সীমার বাহিরে চলে গেছে। এটা এমন কোন কঠিন কাজ নয় আমার কাছে যা মনে হয়, প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারী চাইলেই পারে। সেইরকম একটু ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন শক্ত প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারী প্রয়োজন।

আদালত অঙ্গনের কল্যাণ ভাতা বঞ্চিত ১৭৬ জন আইনজীবী সম্পর্কে তিনি বলেন, বেনেভলেন্ট ফান্ডে বার থেকে একটা কন্ট্রিবিউট করে এবং আমরা বাৎসরিক একটা কন্ট্রিবিউট করি, টাকা দেই। তারাও যদি এভাবে দেয় তাহলে তাদের ঐ টাকাটাই আমরা অ্যাকাউন্ট মেইনটেইন করে বেনেভলেন্ট ফান্ড আকারে নয় কল্যাণ ভাতা আকারে মৃত্যুর পরে তাদের ওয়ারিশকে দেয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। সরকারি অনুদানে বিভিন্ন জেলায় বার সমিতির নিজস্ব ভবন নির্মিত হলেও বগুড়ায় তা সম্ভব না হওয়া প্রসঙ্গে এ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু বলেন, এটা না হওয়ার কারণ একটাই আমরা দীর্ঘদিন বারে নির্বাচিত হতে পাচ্ছি না। যখন নেত্রীর কাছে যাই আমরা কি নিয়ে যাবো তাঁর কাছে? এবারো যদি আমরা ভালো রেজাল্ট করতে পারি তাহলে নেত্রীর কাছে দাবী জানানোর কারণ তৈরি হবে। কথায় আছে কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। বিভিন্ন বারে অনুদান দিয়েছে, রংপুরের জন্য নেত্রীর কাছে অনুদান চাওয়ার সময় আমি নিজে ছিলাম এবং নেত্রী ৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।

ঢাকা বারে দিয়েছে, খুলনা বারে দিয়েছে, পাবনা বারে দিয়েছে, সিলেট বারে দিয়েছে, এভাবে বিভিন্ন বারে অনুদান দেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। অতীতে আমি যখন নির্বাচিত হয়েছিলাম তখন আমার প্যানেল পুরোটা হয়তো হতে পারেনি। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক স্বচ্ছলতাও তখন এরকম ছিল না, কোনো বারকেই তখন আর্থিক অনুদান দেয়ার ট্রেডিশন ছিল না। একসময় আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন খুবই খারাপ অবস্থায় দেশের দায়িত্ব নেয়, এখন সরকারের অনুদান দেয়ার ক্যাপাবিলিটি তৈরি হয়েছে। তখন সেরকম অবস্থা ছিল না। গতবারের আগের কমিটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিল আমাদের, বাদবাকি প্যানেল ছিল বিএনপির। অর্থাৎ পুরা কমিটির চৌদ্দআনা ছিল বিএনপির, আমাদের এক প্রেসিডেন্ট! এক প্রেসিডেন্ট নিয়ে আমরা নেত্রীর কাছে যেতে পারিনি।

বার কাউন্সিলের দুইবারের নির্বাচিত সদস্য ছিলাম, প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারী সহ পূর্ণ প্যানেল নিয়ে রংপপুরের জন্য টাকা এনে দিয়েছি কিন্তু শুধুমাত্র এক প্রেসিডেন্ট নিয়ে নেত্রীর কাছে আমরা যেতে পারিনি। নেত্রীকে কি বলবো? বার সমিতির নির্বাচনে সরকারি দলের নির্বাচনী জোটে গ্রুপিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের মধ্যে গ্রুপিং ছিল এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আমরা বসে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতা করে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করছি। তবে গ্রুপিং ছিল এটা মিথ্যা কথা নয়, সত্য কথা। সমঝোতা করলেও একটা বিষয় হলো- আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোন দলই নিজস্ব ভোট দিয়ে নির্বাচিত হতে পারবে না। সাধারণ কিছু ভোটার আছে, এই ভোটারদের মধ্যে কমপক্ষে একশতটি ভোট আমাদের সংগ্রহ করতে হবে। তাহলে আমরা জয়ী হতে পারবো, সম্পূর্ন না হলেও মেজোরিটি আমরা পাবো বলে আশা রাখি। এটা বিএনপির বেলায়ও প্রযোজ্য এবং আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ভোটের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের জনশ্রুুতি আছে, হয়তোবা কিছু সত্যতা থাকলে থাকতেও পারে বিচ্ছিন্নভাবে তবে এটা বড় কোন ফ্যাক্টর নয়। ভোটে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে মূল প্রার্থীর যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, সততা, দক্ষতা আর দল।

বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল মনোনীত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এ্যাড. মোঃ আব্দুল বাছেদ বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে আইনজীবীদের কোন সমস্যা নেই। মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের ব্রত। বিগত কমিটিগুলো সমিতির স্বার্থ রক্ষা করেছে। তবে সব পূরণ করা সম্ভব হয়না। আগামীতে লাল ডেমী ব্যবহার করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়া হবে। পাঁচ হাজার ডেমী হতে মাসে বারো লক্ষ টাকা আয় বৃদ্ধি করে আইনজীবীদের উন্নয়নে সংযুক্ত করা হবে। ২০০৪ সালে চারজন আইনজীবীর হাজতবাস ঘটনায় তৎকালিন সরকারি দলের আইনজীবী হিসেবে নির্লিপ্ত বা মৌন ভূমিকা পালনের জনশ্রুুতি প্রসঙ্গে এ্যাড. মোঃ আব্দুল বাছেদ বলেন, বাজারে অনেক কথাই থাকবে, সব সত্য নয়। আইনজীবী সবসময় আইনজীবীদের পাশেই থাকেন। যে আইনজীবী এসব বলেন তিনিও আক্রমনের সম্মুখীন হয়েছিলেন সরকারি দলের হয়েও। তখনো আমরা পাশেই ছিলাম। ২০০৪সালে কতিপয় আইনজীবীর সঙ্গে কতিপয় ম্যাজিস্ট্রেটের সমস্যা ছিল। আইনজীবীর সঙ্গে কোন সমস্যা ছিল না। বার সমিতিতে নতুন আইনজীবীদের অন্তর্ভূক্তি ফি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নতুন আইনজীবীদের অন্তর্ভূক্তি ফি বর্ধিত করা হয়েছে বার সমিতির সাধারণ সভায়। সেই সময়ও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলাম। এখন বাজার উর্ধ্বমুখী তাই বর্ধিত ফি কমানো সম্ভব নয়। তবে নতুন আইনজীবীদের সুবিধার্থে বছরে একটা উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও মহাজোট মনোনীত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এএইচ এম গোলাম রব্বানী খান রোমান নির্বাচনী অঙ্গীকার বিষয়ে প্রসঙ্গক্রমে ২০০৪সালের বিষয়ে বলেন, বারের রেজ্যুলুশনকে সমুন্নত রাখতে আমরা বারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোর্ট বর্জন করছিলাম। বগুড়া জেলার তৎকালিন ডিসি ছিলেন রফিকুল মোহামেদ, তারেক জিয়া তাকে নিয়ন্ত্রণ করতো। আমাদের চাপ দিয়েছিল কোর্ট বর্জন যেন আমরা উইথড্র করি। আমরা করিনি। যখন আইনজীবীরা কোর্টে যাচ্ছেন না, তখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সাধারণ পাবলিক দালাল মহুরী এদের নিয়ে মামলা পরিচালনা করতো। আমরা একদিন গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে অনুরোধ করছি স্যার এইভাবে করেন না, আর ওনাদের আমরা ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলছি। এই হলো আমাদের অপরাধ! আরো অনেক আইনজীবী ছিলেন, তবে বিশেষ ভাবে আমাদের চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করছিলেন। আমাদের একরাত হাজতবাস করতে হয়েছিল। জজ সাহেব জামিন দিয়েছিলেন, জামিন বন্ড দেয়ার পরেও ঐদিন আমাকে চালাকি করে চাপ প্রয়োগে ছাড়া হয়নি। জেল গেটে নিয়ে আসা হলো বিকাল সাড়ে চারটা-পাঁচটায়, কিন্তু আর বের করে দেয়না। এভাবে রাত সাতটা-আটটা বাজে তখন বলতেছে আপনারা কালকে বের হবেন। জেলখানার মধ্যে থেকে তো কোন খবর পাওয়া যায়না, বোঝাও যায়না। পরে বুঝতে পারলাম আমাদের জেল গেটে আনার পর ওনারা নির্দেশ দিয়েছে যে আজকে বেরোবে না! তখন ওনারা আমাদের রেখে দিলেন। তারপর ওনারা আমাদের বের করে দিলেন খুব ভোরে, চালাকি করে ভোর পাঁচ টায়! ওনারা সাধারণত দশটা-সাড়ে দশটায় রিলিজ করেন, এখনো তাই দেখি। কিন্তু ওনারা আমাদের ছাড়লেন ভোর পাঁচটায়, যেন কেউ না থাকে এবং কোন আইনজীবী রিসিভ করতে না পারেন! সবকিছুর মধ্যে একটা পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর সবচেয়ে বড় কথা যেদিন আমাদের জামিন শুনানী হয় সদর থানার একগাড়ি পুলিশ গিয়ে ওসির নেতৃৃত্বে কোর্টের মধ্যে আমাদের ঘিরে রাখলো এবং ম্যাজিস্ট্রেটের পাশে সানগ্লাস পড়ে ওসি সাহেব দাঁড়িয়ে থাকলেন! তখন তো মোবাইল বা ক্যামেরা এতো সহজলভ্য ছিলোনা তাই ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আমার বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিতে যেকারো কাছে শুনে নিতে পারেন। সেইসময় ওসি মনসুর সাহেব ছিলেন। সেসময়ের কোর্ট বর্জন কর্মসূচি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের ছিলোনা, কর্মসূচি ছিল বার সমিতির। বাছেদ সাহেবরাই সেসময় আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। তারা কোর্ট বর্জন কর্মসূচির বিরোধীতা করেছিলেন এবং ইন্ধন দিয়ে আমাদের হাজতে নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো তৎকালিন ওনাদের দলীয় পিপি এ্যাড.আনিছুর ভাই আমার বেল পিটিশনে স্বাক্ষর করার কারণে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পিপি পদ চলে গিয়েছিল এবং জজ সাহেবকে তড়িৎ বদলী করেছিলেন তারেক জিয়া। ওনারা এখনো সেটার পক্ষে কথা বলতে চান মানেই হলো ওনারা সেই কাজটি করেছিলেন, এটা বুঝতে হবে। এরপর আমরা ঐ ঘটনায় মানহানীর মামলা করেছিলাম, ওনারাই প্রভাব খাটিয়ে সাবজজ-১ কে দিয়ে সেই মামলা রিজেক্ট করে দেন। এরপর আমরা আপিল করি হাইকোর্টে যা এখনো ঐভাবে পেন্ডিং আছে। বর্তমান সময়ে জেলা জজ আদালত বর্জন কর্মসূচি সরকার দলীয় আইনজীবীরা না মানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা জজ আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত একটা হয়েছিল। আমি তো তখন আর কমিটিতে নাই তাই আমার পক্ষে এইসব কথার উত্তর দেয়া কঠিন। পরে বোধহয় সবাই মিটিং করে বর্জন কর্মসূচি উইথড্র করছে এবং যথারীতি কোর্ট চলছে অন্য প্রেক্ষাপটে। কল্যাণ ভাতা বঞ্চিত ১৭৬ জন আইনজীবী সম্পর্কে তিনি বলেন, শুধু আমাদের সংবিধানে নয় বার কাউন্সিলের সংবিধানের নির্দেশ যারা চল্লিশ বছরের পর আইন পেশায় আসবেন তারা বেনেভলেন্ট ফান্ড পাবে না। কল্যাণ ফান্ড করলে ১৭৬ জন মিলে আলাদা একটা কল্যাণ ফান্ড তারা করতে পারবে। এটাতে বাঁধা নেই, কিন্তু বার কাউন্সিলের নীতিমালার আলোকে বার থেকে আমি কেন যেকেউ তাদের জন্য কিছু করার পদক্ষেপ নেয়ার আইনগত কোন সুযোগ নাই। তারপরো সবকিছু করার দায়িত্ব হলো সার্বজনীন জেনারেল মিটিংয়ে যদি কোন সিদ্ধান্ত হয়, সেই সিদ্ধান্ত একটা কমিটি মানতে বাধ্য করতে কমপেয়ার করবে। এমনি ভোট নেয়ার জন্য মুখরোচক কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ১৭৬ জন আইনজীবীকে খুশি করার জন্য হয়তো অনেক কিছু বলছে। ভোটে নির্বাচিত হবার পরে তো কথা ঠিক না রাখতে পারার জন্য সাধারণ ভোটারের পিটন খাওয়া লাগবে। অনেকে হয়তো কিছু বোঝে না বা জানে না। এটা স্থানীয় বারের কোন ব্যাপার নয়। তাদের বেনেভলেন্ট ফান্ডের টাকা আমরা নেই না। তাদের বিষয়ে পরিষ্কার বলা আছে চল্লিশ বছরের পরে যারা আসবেন তাদের জন্য বেনেভলেন্ট ফান্ডের কোন সুবিধা থাকবে না।

লোকাল বার এসোসিয়েশন তারা তাদের কল্যাণে যেটুকু সিদ্ধান্ত নিতে পারে বার কাউন্সিলের নীতিমালার আলোকে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছুই আমরা নিতে পারবো না। আদালত অঙ্গণের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, এসব আগেও ছিল এখনো আছে এবং আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের নিজেদেরও ত্রুুটি আছে, অর্থাৎ আমরা যদি কোন সুবিধা নিতে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পেশকার, পিয়ন তারা তো বরাবরই দুর্নীতিবাজ। আগে চার আনা নিতো, তারপর আট আনা, দুই টাকা, দশ টাকা, বিশ টাকা, এখন পঞ্চাশ টাকাতেও খুশি নয়! এরকম একটা অবস্থা চলতেছে! এটা অন্য রকম সমস্যা, এটাতো কাগজে কলমের সমস্যা নয়। আইনজীবীদের সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের বিচারক মহোদয়, আইনজীবীরা আছেন সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। তারা সবাই যদি মনে করে এই সমস্যার একটা সমাধান হওয়া দরকার তাহলে উদ্যোগ নিতে হবে। চলতে দিলে চলতেই থাকবে, বাধা না দিলে তো এই অবস্থা চলতেই থাকবে। এটার সমাধানে আমি ব্যক্তিগত ভাবেও উদ্যোগ নেবো। আমি আগে যখন দু'বার নির্বাচিত হয়েছিলাম তখনো উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি, আমাদের কমিটিও কথা বলেছে। তখন এতো দৌরাত্ম ছিলো না, তারা ভয় করতো। আমার সময়ে যখন কোন আইনজীবী বলেছে এইরকম সমস্যা হচ্ছে তখন সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে সমাধান করেছি। কিন্তু এখন সমস্যা ব্যাপক। এখন এটা সাংগঠনিক ভাবে বা সমষ্টিগত ভাবে চেষ্টা করা উচিত বলে আমরা মনে করতেছি। আমরা চেষ্টা করবো বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এদের দুর্নীতি দিনে দিনে ক্রমবর্ধমান। এইসব অনিয়ম-দুর্নীতি চলতে দেয়া যায় না।

আদালত অঙ্গণ ও আইনজীবীদের সমস্যা প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি মনোনীত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাড. আব্দুল লতিফ পশারী ববি বলেন, বিভিন্ন সময়ে যারা সরকারে ছিলেন বা আছেন সেই কতিপয় আইনজীবী বরাবরই সাধারণ আইনজীবীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি ২০০৪ সালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তৎকালীন সরকার সমর্থক আইনজীবীদের একটি অংশ বারের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ চারজন আইনজীবীকে জেল হাজতে পাঠানোর বিষয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। একই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়া জেলা বার সমিতি জেলা জজ এবং অর্থঋণ আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের একটি অংশের চাপে বার সমিতি কর্তৃক সর্বসম্মত সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়। একদিকে বগুড়া বিচার ব্যবস্থায় নাজুক পরিস্থিতি, আদালতের অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম, অন্যদিকে দালাল ও টাউট-বাটপারের বেপরোয়া চলাফেরা সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা গনতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাননীয় জেলা জজ, মাননীয় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বারের নির্বাচিত প্রতিনিধি, বারে অবস্থানরত সকল দলমতের নেতৃৃবৃন্দ এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমে বগুড়ার বিচার অঙ্গণে বিদ্যমান অনিয়ম এবং বিচার ব্যবস্থার অন্তরায় সমূহ দূরীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এছাড়াও কল্যাণ তহবিল সুবিধা বঞ্চিত ১৭৬ জন আইনজীবীদের কল্যাণের লক্ষ্যে আলোচনা সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। যা বিগত একযুগে বগুড়া বারের নির্বাচিত কোন প্রতিনিধি এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমরাই প্রথম আইনজীবীদের পেশা পরিচালার অন্তরায় সমূহ অর্থাৎ আদালতের অধস্তন কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম এবং দালাল-টাউট-বাটপার উচ্ছেদসহ বিচার প্রার্থী জনগনের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়গুলো গত নির্বাচনে প্রকাশ্যে এনেছি। এছাড়াও আমরা নির্বাচিত হলে দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে উদ্ভূত যেকোন সমস্যা সমাধানে বারের সাবেক নেতৃৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধানে সচেষ্ট থাকবো।

(আরআই/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test