E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এএসআইসহ দুই পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত 

সাতক্ষীরায় গোয়েন্দা পুলিশের লকআপে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা 

২০২১ ডিসেম্বর ১২ ১৭:২৭:৩৪
সাতক্ষীরায় গোয়েন্দা পুলিশের লকআপে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের দাবি পিটিয়ে হত্যা 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক নারী মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাদক কেনার সময় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটককৃত এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার ভোর তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।

মৃতের নাম বাবলু সরদার (৬৫)। তিনি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জুড়ন সরদারের ছেলে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, বাবলু সরদার নামের ওই ব্যক্তিকে শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া বাবুল সরদারকে গোয়েন্দা পুলিশের লকআপে রেখে দেওয়া হয়। রোববার তাকে আদালতে নিয়ে যাবার কথা ছিল। রবিবার ভোর তিনটা তেকে পাঁচটার মধ্যে সে গলায় নিজের কোমরে ব্যবহৃত নাইলনের মোটা সুতা দিয়ে লকআপের গেটের গ্রীলের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। বাবলু সরদারের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় চারটি মাদকের মামলা রয়েছে।

বাবলু সরদারের মেয়ে দেবহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ফল প্রত্যাশী সুলতানা মুন্নি জানান, তার বাবা জুড়ন সরদার, চাচা আব্দুল মজিদ ও চাচা বাহাদুর সরদার মুক্তিযোদ্ধা। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাদের গ্রামের পুটে সরদারের শ্যালিকা সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের বোরকা পরা নারী মুন্নি খাতুন আকস্মিকভাবে তাদের বাড়িতে ঢুকে তার বাবার ঘরে যেয়ে ফেন্সিডিল রেখে নিকটে থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে ইশারা করে। সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মনির ও উপপরিদর্শক এনামুলসহ দুই কনস্টেবল তার বাবাকে ওই ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার দেখান।

এসময় ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ৩৫ হাজার টাকাও নিয়ে যায় ওই পুলিশ সদস্যরা। রবিবার দুপুরে মা শাহানারাসহ তার তিন ভাইকে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আসেন। সেখানে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন আলম চৌধুরী বাবাকে ছেড়ে দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ থেকে একটি কাগজে সাক্ষর নেন। এরপর তাদেরকে বলা হয় যে বাবলু সরদার আত্মহত্যা করেছে। মুন্নি বলেন, তার বাবা কোমরে কখনও সুতালি(রশি) ব্যবহার করতেন না। তাহলে তিনি কিভাবে লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করলেন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, গেটের গ্রীলের সাথে নিজেকে সুতালিতে ঝুলিয়ে কি কখনও আত্মহত্যা করা সম্ভব? পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। তারা এর বিচার চান। একইভাবে আলমগীর হোসেন বলেন, তার বাবাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি নিজের কোমরে থাকা নাইলনের সুতা পেঁচিয়ে লকআপের গেটের গ্রীলে ঝুলে রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে যে কোন এক সময় আত্মহত্যা করেছে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আকতার হোসেন ও মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত কুমার সরকারের উপস্থিতিতে লাশ নামিয়ে ময়নাতদন্ত করার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির কারনে পুলিশের সহকারি উপ পুলিশ পরিদর্শক সোহেল শেখ ও কনস্টেবল শরিফুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test