E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগরে পুলিশ বাদী মামলায় ৭৭ আসামী কারাগারে

২০২২ নভেম্বর ০২ ১৭:১৬:৫৬
নবীনগরে পুলিশ বাদী মামলায় ৭৭ আসামী কারাগারে

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সীতারামপুর ও দৌলতপুর গ্রামবাসির মধ্যে সম্প্রতি বিয়েবাড়িতে গেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘটিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী  মামলায় অবশেষে ৭৭ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামীরা জামিন নিতে হাজির হলে, বিজ্ঞ বিচারক মো. সামিউল আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম জানান, পুলিশ বাদী ওই মামলার ১০৪ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। পরে শুনানিতে বিজ্ঞ আদালত ২৭ জনের জামিন মঞ্জুর করে বাকি ৭৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ি আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামে গত ১৬ আগস্ট একটি বিয়েবাড়িতে গায়ে হলুদের মঞ্চ ও গেটের ডিজাইনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এর জের ধরে সীতারামপুর ও পাশ্ববর্তী দৌলতপুর গ্রামের লোকজনদের মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে সীতারামপুর বাজারের অনেক দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় মটরসাইকেলও। এতে আহত হন অসংখ্য মানুষ। ঘটনার পর ওই রাতেই নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক এবং তৎকালাীন ওসি আমিনুর রশিদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পরবর্তীতে নবীনগর থানার এসআই মোহাম্মদ এমরান বাদী হয়ে দুই গ্রামের ১২৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর গ্রেপ্তার আতংকে দুটো গ্রামই পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় এলাকাকে দাঙ্গা মুক্ত রাখতে ও সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দুই গ্রামের সাহেব সর্দারদের বিশেষ আহবানে গত ২ সেপ্টেম্বর এলাকায় এক সামাজিক নিষ্পত্তি মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়।
ওই সামাজিক শান্তি শৃংখলাজনিত মীমাংসা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা দাঙ্গা নিরসন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এডভোকেট সুজিত কুমার দেব।

ঘটনার নিষ্পত্তিকল্পে ডাকা ওই আইনশৃংখলা সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মাদ এবাদুল করিম বুলবুল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ওই নিষ্পত্তি সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক, তৎকালীন ওসি আমিনুর রশীদসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল বলেন,'সংঘর্ষের বিষয়টি আমরা সবাই অবশ্যই দেখবো। তবে ভবিষ্যতে কেউ যদি এলাকার শান্তিশৃংখলা বিঘ্ন করতে পুনরায় এ ধরণের দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়িত হন, তাহলে দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

এ বিষয়ে তিনি উপস্থিত পুলিশকেও কঠোর হওয়ার যথাযথ নির্দেশ দেন।

এদিকে গত ১৬ আগস্টের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী মামলায় গতকাল ৭৭ জনের কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ওই নিষ্পত্তি সভায় উপস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির ও নব নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য মো. নাছির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে, তাঁরা বলেন, 'আমারতো এলাকার সাহেব সর্দারদের অনুরোধে মাননীয় এমপি মহোদয়কে নিয়ে এলাকায় গিয়ে দাঙ্গা যাতে আর না হয়, সেই লক্ষে সকল শ্রেণির মানুষদের নিয়ে সেখানে সামাজিক সভা করেছি। ওই সভা করার ফলে সেসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকা এলাকাবাসীর মনে তখন স্বস্তি ফিরেছিলো।'

তাঁরা আরও বলেন, সামাজিক সভা আর পুলিশের মামলা দুটো ভিন্ন বিষয়। পুলিশ বাদী মামলায় আইনগতভাবে যেটি হবে সেটিতো আইনের বিষয়। সেখানে আসামীরা আইনগতভাবেই মামলা মোকাবেলা করবে। তবে এলাকার শান্তি শৃংখলার স্বার্থে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করবো।'

(জিডি/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test