E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাংশায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

২০২৩ মে ১০ ১৫:৪০:১৭
পাংশায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর পাংশায় ২২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুর ১২ টার দিকে নিশ্চিন্তপুর মাধমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এমন অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের চেচপাড়া বাজার সংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর মাধমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুলফিকার আলীর বিরুদ্ধে। মারপিটের স্বীকার শিক্ষার্থীরা সবাই অত্র বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।

সরেজমিনে গেলে মারপিটের স্বীকার ইব্রহীম (১৬) সহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা শ্রেণি কক্ষে বাইরে স্কুলের বারান্দায় দারিয়ে সব ছাত্ররা কথা বলছিলাম। এ সময় আমাদের ক্লাসের ছাত্রীরা সবাই শ্রেণি কক্ষের ভিতরে চেচা-মেচি করছিলো। জুলফিকার স্যার তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে একজন শিক্ষার্থী এসে আমাদের ক্লাসের ছাত্রীদের চেচা-মেচি করতে নিষেধ করেন। এ সময় আমাদের মধ্যে কোন এক ছাত্র ওই ছাত্রীকে বলেন, স্যারের সমস্যা হলে? স্যারতো আমাদের বলতো। এ কথা সুনে ওই ছাত্রী ক্লাসে চলে যায়। পরে জুলফিকার স্যার এসে ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে ছাত্রদের ক্লাসের মধ্যে ঢুকতে বলেন। আমরা ক্লাসে প্রবেশ করলে একজন ছাত্রীকে দিয়ে বেত এনে ক্লাসে থাকা ২০ জন ছাত্রকে এলোপাতারী মারপিট করে। ২ জন ছাত্র স্কুলের বাইরে ছিলো। তারা স্কুলে ঢুকার পর তাদেরকে লাইব্রেরিতে নিয়ে মারপিট করে। এ বেত্রাঘাতের ঘটানায় অনেক ছাত্রের মাথায়, কানে, হাতে ও পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নিলাফোলা যখম হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

মারপিটের স্বীকার শিক্ষার্থী ইব্রহীমের মা মোছা. রহিমা বেগম জানান, ঘটানার পর বেচপাড়া বাজারের কয়েকজন লোক আমার ছেলেকে একটি ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে আমার ছেলের মাথায় পানি ও আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বরফ দিয়ে সুস্থ্য করা হয়।

ছাত্রদের শ্রেণি কক্ষে ঢুকিয়ে বেত্রাঘাত করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম, কেরানী আব্দুল রাজ্জাক ও প্রধান শিক্ষক ফিক্ষিরোধ কান্তি সরকার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিক্ষিরোধ কান্তি সরকার বলেন, আমি এসএসসি পরিক্ষার ডিউটিতে ছিলাম। বিষয়টি সুনতে পেরে ডিউটি শেষে বিদ্যালয়ে আসি। মারপিটের স্বীকার একাধিক ছাত্র ও অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিলো। আমি স্কুলে এসে শিক্ষক জুলফিকার আলীকে পাইনি। বিষয়টি তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছি। এটি একটি অনাকাক্ষিত ঘটনা। ঘটানাটি কেন ঘটেছে তা জেনে অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল ওহাব মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমি স্কুলের কেরানীর কাছ থেকে সুনেছি। ছাত্ররা শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করেছে। স্যার একটু উত্তেজিত হয়ে ছাত্রদের মারপিট করেছে। এটা স্যারের করা আদেও উচিত হয়নি। তবে এই ঘটনায় পর অভিভাবকরা স্কুলে এসে আমাদের সাথে অসাধ আচরণ করেছেন বলে জানান তিনি।

অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক জুলফিকার আলী বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ক্লাস চলাকালে দশম শ্রেণির ছাত্ররা স্কুলের বারান্দায় উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলছিলো। আমি এক শিক্ষার্থী পাঠিয়ে ছাত্রদের কথা বলতে নিষেধ বলি। এ সময় কোন এক ছাত্র বলেন যে, যার সমস্য হয়? সে এসে বলতে পানে না। বিষয়টি আমি এসে ছাত্রদের কাছে জানতে চাই। কোন ছাত্র এ কথা বলেছে কেউ স্বীকার না করায় সকল ছাত্রকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, মারপিটের স্বীকার শিক্ষার্থীরা ইউএনও অফিসে এসেছিলেন। ইউএনও স্যার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। স্বীকার শিক্ষার্থীরা আগামীকাল অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী জানান, সন্ধ্যায় ১৯ জন শিক্ষার্থী আমার কাছে এসেছিলো। আমি শিক্ষার্থীদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। ছবি তুলে রেখেছি। আমি বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করেছি। মারপিটের স্বীকার শিক্ষার্থীদের আগামীকাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এএস/মে ১০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test